মুক্ত মত...
‘হিউম্যানিটি এন্ড ডেমোক্রসি’
বর্তমান সময় আমাদের দেশে আলোচিত দু’টি শব্দ ‘হিউম্যানিটি’ এন্ড ‘ডেমোক্রেসি’। রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক ব্যবহূত হচ্ছে শব্দ দু’টির। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হিউম্যানিটি আর বিএনপি ডেমোক্রেসি নিয়ে সরব। সময়ে প্রয়োজনে হিউম্যানিটি বা ডেমোক্রেসির বিকল্প নেই। শব্দ দু’টি একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানকে পশ্চিমা একটি গণমাধ্যম মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধীতে আর বিএনপি তাঁঁদের দলীয় প্রধানকে মাদার অব ডেমোক্রেসি উপাধীতে ভূষিত করেছেন।
মাদার অব হিউম্যানিটি : সম্প্রতি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে তখন রোহিঙ্গা ইস্যু। লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম চ্যানেল ফোর টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে খবর : উখিয়া থেকে কুতুপালংয়ের রাস্তা। এটি রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পের রাস্তা। দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ। তারা অপেক্ষা করছে একজন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার জননী)-কে স্বাগত জানানোর জন্য। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দলটির নেতাকর্মী শুভ্যানুধায়িদের কাছে প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী ।
মাদার অব ডেমোক্রসি : সাংবিধানিকভাবে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাদার অব ডেমোক্রসি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যানার, পোষ্টারে শোভা পায় মাদার অব ডেমোক্রেসি শব্দটি। কোথাও কোথাও ফাইটার অব ডেমোক্রেসি লেখা ছিল। নেতাকর্মী ও দলটির সমর্থকদের কাছে বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জননী।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ বর্তমান পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর, বিএনপি ১৬ বছর ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। সাংবিধানিভাবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ভোটপ্রাপ্তি এবং সমর্থনের দিক দিয়ে দল দু’টি সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশের উন্নয়নেও দল দু’টির ভূমিকাও অপরিসীম। ২০০৭ সালে তথা কথিত সেনা শাসনামলে দুই নেত্রী কারাগারেও ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে যেয়ে কিছুটা হলেও হিউম্যানিটি ও ডেমোক্রসিও শিখেয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। আবার হিউম্যানিটি ও ডেমোক্রেসি ক্ষতির জন্য দায়ী দল দু’টি। যাই হোক আমরা হিউম্যানিটি এন্ড ডেমোক্রেসি পন্থী। জনপ্রিয় দুই নেত্রীকে দু’টি পদে ভূষিত করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে। বাস্তবে সংকট থাকলে আমরা কাগজে কলমে অনেকখানি এগিয়ে। হিউম্যানিটি ও ডেমোক্রেসির মতো শব্দ দু’টির জননীও অন্তত আমাদের বাংলাদেশের দুই নেত্রী । সত্যিহ আনন্দের!
রাজনীতিতে দল দু’টি পরস্পর বিরোধী হলেও অনেক বিষয় এক এবং অভিন্ন। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়া বিএনপি কল্পানিত। দুই নেত্রী বা দলের তিক্ততা পুরোটাই ক্ষমতা কেন্দ্রিক। বিতর্কিত কিছু নির্বাচনকে ঘিরে তিক্ততা আরো তীব্র । সেই তিক্ততার কারনে মানবতা বা গণতন্ত্র আজ পরাজিত বা পরাস্ত। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধী পেয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হলেও উনি রোহিঙ্গাদের পাঁশে আছেন জননীয় ভূমিকায়। ঢাকা শহরের এসির রুমে কোন সংকট না থাকলেও মাঠ পর্যায়ের মানুষ আজ সুশাসন, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। মানবতা ভূলুন্ঠিত। সব সংকট উত্তরণ ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেকে মানবতার নেত্রী হিসাবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করুন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আপামর জনগনই আপনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাবে ভূষিত করুক।
অন্যদিকে ডেমোক্রেসি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। দেশে ডেমোক্রেসি আছে না নেই, পুরো ডেমোক্রেসি নাকি আধা ডেমোক্রেসি বিদ্যমান, নাকি ডেমোক্রেসির নামে ছদ্মবেশে অন্যকিছু-তা বলা মুশকিল। আক্ষরিক অর্থে ডেমোক্রসি মানে জনগনের শাসন। যেটির যথেষ্ট ঘাটতি, নেই বললে চলে। আছে ভোট কেন্দ্রিক গনতন্ত্র। সেই ভোট কেন্দ্রিক গণতন্ত্রও হারিয়েছে বিগত নির্বাচনে। এখনো পুরোপুরি ভোটারাধিকার প্রয়োগ করার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি। তবু বিএনপি তথা দলটির নেতাকর্মীরা একধাপ এগিয়ে মাদার অব ডেমোক্রেসি উপাধি দিয়েছে। মন্দ নয়। প্রতিটি খেতাব মানুষের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। যাই হোক শুধু ভোটের গনতন্ত্র নয়, মানুষের গনতন্ত্র নিয়েও কাজ করুন। আগামী দিনে দেশের মানুষের স্বার্থে দেশে এমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন যাতে বিএনপি নয়, জনগনই আপনাকে মাদার অব ডেমোক্রেসি খেতাব দিক।
রাষ্ট্রের জনপ্রিয় দুই নেত্রী সত্যিহকারের মাদার অব হিউম্যানিটি ও ডেমোক্রেসি হতে সময়ের ব্যাপার-এটুকু প্রত্যাশা করতেই পারি। আপনারই দীর্ঘদিন এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আগামীতেও করবেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া একে অপরের পরিপূরক। দলবাজ বা দলকানারা হয়তো একমত হবেন না। তারা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া এক পাল্লায় ফেলতেও চান না। কিন্তু কি জানেন, এটাই বাস্তবতা। একজনের শূণ্যতা আরেকজনকে শূণ্যে নিয়ে যাবে। এই শূণ্যে নিয়ে যাওয়ার খেলা বা প্রতিযোগিতা খুবই ভয়ংকর। রেষারেষি, বিভেদ ভুলে এক্যবদ্ধভাবে আপনারা দুইজন হন মাদার অব হিউম্যানেটি এবং ডেমোক্রেসি। দেশকে নিয়ে যান উন্নয়নের চূড়ান্ত সোপানে। একের পর এক উপাধিতে ভূষিত হয়ে জনগনের হৃদয়ের চিরস্থায়ী ঠাঁই করে নিন আপনারা। যুগের পর যুগ আপনারাই টিকে থাকুন জনগনের মাঝে।
লেখক:
সাইদুর রহমান
গনমাধ্যম কর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন