সাতক্ষীরায় জামিন পেয়েও বাড়ি উঠতে পারছেন না তারা! তল্পিতল্পা নিয়ে প্রেসক্লাবে
পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সৃষ্ট মামলায় জামিন পেয়েও বাড়িঘরে উঠতে পারছেন না সাতক্ষীরার পাঁচটি পরিবারের সদস্যরা। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলার মুখে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকছেন। তারা তাদের দোকান পাট খুলতে পারছেন না। তাদের শিশুরাও স্কুলে যেতে পারছে না।
শুক্রবার এসব পরিবারের বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ সদস্য তাদের তল্পিতল্পা নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আশ্রয় নিতে এসে বলেন ‘ আমাদের নিরাপত্তা নেই। আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না’।
আতংকিত এসব পরিবারের সদস্যদের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আখড়াখোলা গ্রামে। আখড়াখোলা বাজারে বাড়ি সংলগ্ন দোকানপাট রয়েছে তাদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাধন সাধু, কার্তিক সাধু, সন্তোষ সাধু ও নিমাই সাধু। তাদের সাথে তাদের স্ত্রী চায়না রানী, স্বপ্না রানী, রমা রানী ও লক্ষ্মী রানী উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩০ শতক জমির ওপর তাদের শরিকদের বসবাস ও দোকানপাট। তাদের একজন শরিক দুলাল সাধুর ১০ শতাংশ জমি জবর দখলের লক্ষ্যে পাশর্^বর্তী এগারো আনি গ্রামের মো. আলাউদ্দিন সরদার তার ছেলে সুমনকে অপহরন করেন। পরে তাকে জিম্মি করে রেখে দুলালের কাছ থেকে ১০ শতক জমি জোর করে লিখে নেন। দুলাল এ ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান। আর তিনি ফিরে আসেননি।
এদিকে জমির দলিল হাজির করে মো. আলাউদ্দিন সরদার ওই জমি দখল করে নেন। এ জমির শরিকদের অভিযোগ আলাউদ্দিন তার ১০ শতক জমির বাইরে দু’টি দাগে আরও ছয় শতক জমি জবর দখল করে নিয়েছেন। এরই মধ্যে সেখানে দোকান তৈরির লক্ষ্যে আলাউদ্দিন সরদার পাশর্^বর্তী শরিক তুলশি সাধুর টালির ছাউনির ঘরের একাংশ জোর করে কেটে ফেলেন। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশদাররা মীমাংসা করার লক্ষ্যে তাদের ন্যায্য পাওনা জমি ও ঘরে পুনঃদখল করিয়ে দেন। ভুক্তভোগী সদস্যরা জানান এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে আলাউদ্দিন ১১জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঝাউডাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রমজান আলি, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ অনেকেই। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
গ্রামবাসী আরও জানান আলাউদ্দিন সরদার তাদের পরিবারগুলিকে হেনস্থা করার লক্ষ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে আরও একটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে আখড়াখোলা গ্রামের তুলশী চরন সাধু, মধুসূদন সাধু, সাধন চন্দ্র, কার্তিক চন্দ্র, দেবচন্দ্র, মিলন চন্দ্র, সন্তোষ চন্দ্র ও নিমাই চন্দ্র সাধুকে। তাদের মধ্যে একজন কলেজ ছাত্রও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আলাউদ্দিনের দোকানের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরন, দোকানের মালামাল ভাংচুর, আলাউদ্দিনকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা, তার স্ত্রীর গলার চেইন ছিনিয়ে নেওয়া ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত। এই মামলায় আদালতে জামিন নিতে আসা আটজনের মধ্যে সাতজন জামিন পান। প্রধান আসামি তুলশি চরনকে আদালত জেল হাজতে পাঠান।
জামিন প্রাপ্তরা জানান জামিন পেয়েও তারা বাড়ি ঘরে উঠতে পারছেন না। বিশেষ করে তারা রাতে ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন আলাউদ্দিন সরদারের দুই ছেলে সেলিম ও ডালিম তাদের লোকজনের সাথে এখন লোহার রড লাঠিসোটা ও হকিস্টিক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাড়ি ফিরলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে তিনি হুমকি দিচ্ছেন। তাদের ভয়ে সাধু পরিবারের লোকজন তাদের দোকানপাটও খুলতে সাহস করছেন না। নিরুপায় হয়ে তারা সাংবাদিকদের জানাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে তল্পিতল্পাসহ চলে এসেছেন। আলাউদ্দিন তাদের দেশত্যাগের হুমকি দিয়ে বলেছেন ‘অন্যথায় সবাইকে ফের জেলে ঢুকাবো। আর বের হতে পারবি না’।
গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন এর আগে আইন শৃংখলা বাহিনীর ভয় দেখিয়ে আলাউদ্দিন সরদার ভারতীয় চোরাচালানের পণ্য ধরে লুটপাট করতেন। তার বিরুদ্ধে একজন ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে দাবি করে তারা বলেন চোরাচালানের পথ ধরে তিনি এখন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান জমির শরিকরা। তিনি পাশর্^বর্তী আরও অনেক শরিকের জমি দখল করে নেবেন বলে চেষ্টা করছেন।
তবে জমি দখল, হয়রানি মূলক মামলা দেওয়া এবং কয়েকজন শরিককে দেশত্যাগের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন সরদার বলেন- ‘আমি নিয়ম অনুযায়ী জমি কিনেছি। দুলালের ছেলে অপহরনের বিষয়ে আমি জড়িত নই। আমার পাওনা জমি আমি দখল করছি। শরিকদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই জমি হজম করার পাঁয়তারা করছেন। আমি চোরাচালানি ছিলাম না। চোরাচালানের মালও মারিনি। কোনো ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার সাথেও আমি জড়িত ছিলাম না। বরং অভিযোগকারীরা আমার দোকানে হামলা করেছে। তাদের কারণে আমি দোকান খুলতে পারছি না’।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- ‘আমি তাদের মধ্যে মীমাংসা করতে সালিশ বসিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আলাউদ্দিন সরদার সালিশ মানেননি। বরং তিনি সম্মানিত সালিশদারদের বিরুদ্ধেও আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন’।
পুলিশ আইনের পক্ষে আছে জানিয়ে ওসি আরও বলেন- ‘আলাউদ্দিন সরদার তার শরিকদের কোনো ধরনের হুমকি দিয়ে থাকলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন