রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের ‘শেষ ধাপে’ মিয়ানমার
সেই ১৯৮২ সাল থেকে শুরু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান। এটা এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টরা।
মূলত রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতিতে রোহিঙ্গারা সেদেশের সামরিক জান্তা সরকারের এই জাতিগত নির্মূল অভিযানের বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি।
শিক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত করার পাশাপাশি মুক্ত চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার কারণে তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়েছে।
১৯৮২ সালে করা নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমার সরকার প্রথমে অন্য জনগোষ্টিগুলো থেকে আলাদা করে ফেলে রোহিঙ্গাদের। এই আইন বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯১ সালে। রোহিঙ্গাদের মুক্ত চলাচলের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, শিক্ষার সুযোগ সীমতি করা হয় এসএসসি পর্যন্ত। চিকিৎসা নেওয়া এমনকি বিয়ের জন্যও অনুমোদন নিতে হয় সরকার থেকে।
এ কারণে ১৯৯১ সালে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এসব রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফেরত গেলেও তাদেরকে পূর্বের অধিকার দেওয়া হয়নি। বরং আগে ১৯৮২ সালের আইনের প্রয়োগ শিথিল থাকলেও ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের উপর এই আইন প্রয়োগ শুরু হয় অত্যন্ত কঠোরভাবে।
মিয়ানমারের বুচিদং থেকে সদ্য আসা স্কুল মাস্টার মোহাম্মদ ইসমাইল। এখন বসবাস করছেন বালুখালী ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘আমি পড়ার সুযোগ পেলেও আমার সন্তানদের এসএসসির বেশি পড়াতে পারিনি।’
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাসহ সরকারি দপ্তরেও চাকরি করেছিলাম। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এই সুযোগও কমে আসে। আমার সন্তানদের সেই সুযোগও নেই। এসএসসি পাশ করা অনেকে পাড়ি জমিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। পরবর্তীতে তাদের পরিবারও চলে গেছে বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। মোট ৩৫ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১১ লাখের বসবাস রাখাইনে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে বলে মনে করছেন ইসমাইল।
তিনি বলেন, এবার মিয়ানমারা বাহিনী যে নৃশংসতা দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন। শহর এলাকায় কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম থেকে গেলেও তারা শেষ পর্যন্ত থাকতে পারবে না।
বর্তমানে ১৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক সুযোগ পেয়েছে পড়ালেখার। এরাই এখন রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছেন বিশ্ব দরবারে।
এদেরই একজন ২০ বছর ধরে লন্ডনে নির্বাসিত তুন কিন। সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসা নিজ জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে এসেছেন বাংলাদেশে। কক্সবাজারে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ‘এখন মিয়ানমার সরকার যা করছে তা জাতিগত নির্মূলের একবারেই শেষ পর্যায়। এবারের গণহত্যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে চিরতরে বিদায় নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।’
তুন কিন মনে করেন, সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তির অভাবে মিয়ানমার সরকারের এই গণহত্যার কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না রোহিঙ্গারা।
তিনি বলেন, ‘অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের মাঝে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যাতে তারা চিরতরে সেখান থেকে চলে আসে।’
যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী এই রোহিঙ্গা প্রকৌশলী বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে আমি নিজের বাড়িঘরে যেতে পারি না। আমার মতো এই রকম লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান দেশছাড়া, শরণার্থীর জীবন বরণ করে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, কয়েকশ’ বছর ধরে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গারা বৌদ্ধ ধর্মবলম্বী রাখাইনদের সঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছিল। মিয়ানমার সরকার তাদের নির্মূল অভিযান ত্বরান্বিত করতে রাখাইনদেরকেও লেলিয়ে দেয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন