ভোমরা স্থলবন্দরে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের মহোৎসব
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের মহোৎসব।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোন প্রতিকার মিলছে না ভোমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম আনারুল ইসলাম জানান- ১৯৮১ সালের ১২ আগষ্ট জেলা পরিষদের জায়গার মধ্যে ভোমরা -সাতক্ষীরা সড়কের ফুলতলা থেকে রাশিদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ভোমরা মৌজায় রাস্তার দক্ষিণ পাশের এক একর ৬৫ শতক জমি শহরের কাটিয়ার জনৈক আবুল হোসেন তৎকালিন মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে চাষ করার জন্য বাংলা ১৩৭৬-১৩৮১ সাল (ছয় বছর) পর্যন্ত লীজ নেন।
দু’ দিন না যেতেই ১৪ আগষ্ট ওই জমি অবৈধভাবে সাবেক তহশীলদার গোলাম মোস্তফা ও জিন্নাত আলীর কাছে রেজিষ্ট্রি কোবালা (৭৬৯৪/৮১ ও ৭৬৯৫/৮১) মূলে এ একর ৬০ শতক বিক্রি করেন আবুল হোসেন। ১৯৮৯ সালের ৪ ডিসেম্বর তাদের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন ভোমরা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, রোকেয়া ও আফছার আলী, আছিয়া, মাসুরাসহ কয়েকজন। শহীদুল ইসলাম ওই জমি গ্রামীন টাওয়ার, গনি সরদারসহ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন।
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে (৩৫৮/১৫ নং) ও রেকর্ড সংশোধনের জন্য দেওয়ানী ১৪৯/১৫ নং মামলা করা হয়। একইভাবে তিনিসহ ১৫জন ডিসিআর গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আছিয়া ও রফিকুলসহ কয়েকজন সদর সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৯৮/১৬ নং মামলা করলে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেন। জালালউদ্দিন আকবরসহ তারা ১৫জন আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিল করলে শুনানীর জন্য আগামি ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য আছে।
আনারুল ইসলাম জানান- ২০১৪ সাল থেকে ভোমরা থেকে আলীপুর সড়কের ভোমরা মৌজার ১/১ খতিয়ানের ১৮৪৫ ও ১৭৮৮ দাগের জেলা পরিষদের জমি একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে তিনিসহ কামরুল ইসলাম, জালালউদ্দিন আকবর, আব্দুল মাজেদসহ ১৫জন শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন। গত বছরের ৩০ জুন তাদের বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আহম্মেদ তাদের ওই জমি বন্দোবস্ত দেন।
পহেলা ফেব্রুয়ারী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে জানালে তিনি সার্ভেয়র পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। ৫ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়। জেলা পরিষদ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারী উভয় পক্ষকে নোটিশ করে ১৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় উভয় পক্ষকে জমির কগজপত্রসহ তার অফিসে আসার জন্য বলা হয়।
তিনি আরো জানান- কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা তাদেরকে মোবাইলে হুমকি দেন। এরপরও মাটি ভরাট করে রাতে আঁধারে জবরদখলের চেষ্টার অব্যহত রাখায় গত ১২ ফ্রেবুয়ারি তারা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী এএনএম মঈনুল ইসলাম ১৩ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টার দিকে তার অফিসে উভয়পক্ষকে আহবান করেন। উভয়পক্ষ থেকে আইনজীবীও নিয়োগ করা হয়। ওই সময় জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানও বন্দোবস্ত গ্রহীতাদের বিপক্ষে হাজির ছিলেন।
তারা আরো বলেন, উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাঁচাই করার একপর্যায়ে বিরোধ বাঁধে। ওই সময় প্রধান নির্বাহী এ পরিস্থিতিতে আলোচনা সম্ভব নয় বলে মুলতুবি ঘোষণা করে তিনি কোন পক্ষকেই বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ না করার নির্দেশ দেন।
তিনি জানান- গত বছরের ২৫ জুন থেকে সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জোরপূর্বক কামরুল ইসলামের বন্দোবস্তকৃত সাত শতক জমিতে পাকা দোকানঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বিষয়টি আবারো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেও কোন লাভ হয়নি। গত ২৭ আগষ্ট জেলা পরিষদের জায়গা জেলা প্রশাসককে উদ্ধার করা সংক্রান্ত ২০০৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিসহ ভোমরার কয়েকজন লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোন পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় সেখানে চারটি দোকানঘর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়ে যায়।
একইভাবে ওই রফিকুল ইসলাম প্রকাশ্য দিবালোকে জালালউদ্দিন আকবরের বন্দোবস্তকৃত জলাশয়সহ ১১ শতক ও আব্দুল মাজেদের সাত শতক জমি মাটি ভরাট করে এক সপ্তাহ আগে থেকে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফাকে অবহিত করলেও গত ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করেও প্রতিকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে স্বীকার করেন।
এদিকে সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন- তারা ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক। তাই সেখানে নির্মাণ কাজ করতে কোন বাধা নেই।
জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা জানান- চোখের সামনে জায়গা জবরদখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের বিষয়টি তিনি মিটিংএ ও একান্তে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। এরপরও কোন কাজ না হলে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করা ছাড়া কিছু থাকে না।
ভোমরা-বাঁকাল সড়কের দক্ষিণ পাশে রফিকুল ইসলাম যেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন সেখানে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জাকির হোসেনের সঙ্গে তার ০১৭১১-০৩৭৯৮৭ নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সাংবাদিকদের জানান- রফিকুল ইসলাম যেখানে ঘর নির্মাণ করছেন সেখানে তিনি আদালতের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। জেলা পরিষদের আইনজীবীদের মাধ্যমে আইনি লড়াই করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন