সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালীর লোকজ সংস্কৃতি বা বাঙালী উৎসব

জলবায়ুর পরিবর্তণ, কালের বিবর্তনের সঙ্গে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন উপকরণ, বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন, উগ্রমৌলবাদ, নিরাপত্তাহীনতা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালীর লোকজ সংস্কৃতি বা বাঙালী উৎসব। হারাতে বসেছে বাঙালীর এ সংস্কৃতি। একে ধরে রাখতে সামাজিক উদ্যোগে বাংলা সংস্কৃতিকেও সরকারি পৃষ্টপোষকতার বিকল্প নেই।
এক সময় বাঙালী সংস্কৃতির বড় অংশটাই জুড়ে থাকতো ১২ মাসে ১৩ পার্বন। যদিও সে সময় ১২ মাসে ছয়টি ঋতু বিরাজ করতা। বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তণজনিত কারণে এখন ছয়টি ঋতুর স্বাদ আর অনুভব করা যায় না। এখন যা কিছু হয় সবকিছু যেন অসময়ই।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক চণ্ডিচরণ বালা বলেন, শরতের আগমন শুভ্র কাশফুলের উপলব্ধি জানান দিতে মহামায়া দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। তখন মাঠে মাঠে কাশফুলের বাগান দেখা মিলতো। এখন কাশফুল দেখতে গোল দূরবীন যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। শীতের আগমনীতে খেজুরের রসের সংমিশ্রনে নতুন চালের পায়েস ও নতুন চালের গুড়া দিয়ে তৈরি বাহারি পিঠা রসনা তৃপ্তি করতাম। কালের আবর্তন বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর। পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণে লাগছে ইট। এ ইট পোড়াতে শহরতলীর ইটভাটা গুলোতে কয়লা ব্যবহার হলেও নদী তীরবর্তী ইটভাটা, প্রত্যত্যো অঞ্চলের ইটভাটা ও পাঁঝাগুলোতে দেদারসে পুড়ানো হয় খেজুরের কাঠ। ফলে এ গাছের অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। খেজুরের খাটি রস এখন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ এর ফলে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তণ করে শহরমুখী হচ্ছে। ফলে খেজুর গাছ কাটার জন্য গাছি পাওয়া দুরসাধ্য হয়ে ওঠেছে। যদিও পাওয়া যায় তাদের যা পারিশ্রমিক তাতে খেজুরের রস সংগ্রহ মানেই ঢাকের দায় মনষা বিক্রির মত অবস্থা। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তণ জনিত ও চিংড়ি চাষের ফলে মাটিতে উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় পায়েস ব্যবহৃত বাসমতিসহ অন্যান্য উনত মানের ধান জেলায় চাষ হয়না বললেই চলে। কৃষি জমির মালিক বা কৃষকদের খেজুর গাছ লাগানো ও সুগন্ধি চাল উৎপাদনের প্রতি উৎসাাহিত না করলে একদিন বাঙালী সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে নবান্ন উপলক্ষে পিঠা ও পায়সের স্বাদ।
সদর উপজলার আবাদরহাট এর গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, ব্রিটিশ আমলে বাঙালীরা পালকি, গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়িতে চেপে বিয়ে করতে যেতো। বিয়ের কাজে ব্যবহৃত ওইসব গাড়ি সাজানা হতো ফুল বা রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে। বেয়ারাদের গাওয়া লোকসংগীত, ভাওয়ালী গান মানুষকে আনন্দ দিতো। বিদেশী সংস্কৃতি ঢুকে পড়ায় কালের আবর্তনে ওইসব বাহন হারিয়ে প্রাইভট কার, মাইক্রাবাস বা উন্নতমানের পরিবহনে রূপ নিয়েছে। বাড়ির আঙিনায় কাপড় দিয়ে সামিয়ানা টানিয়ে অনুষ্ঠানের খাওয়া দাওয়া চলতো কলার পাতায়, শালপাতায় বা কাসার থালায়। বিয়ে উপলক্ষে বাজতো এইচএমভি রেকর্ড কলের গান। ফিল্ম ক্যামরায় তোলাা হতো অনুষ্ঠানের ছবি। এখন বিয়ে, অন্যপ্রাশন, বা পুজার অনুষ্ঠানকে ঘিরে বক্সে বাজানো হয় বাংলা ও হিন্দি সিনেমার ঝাকানাকা গান। খাবার টেবিলে ব্যবহার করা হয় ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস। ক্যাটারিং এর দূরত্ব রসনা হারায় ঘরোয়া রান্নার স্বাদ। বিয়েতে উপহার সামগ্রী হিসেবে বাঁশ, বেত, কাঠ, মল নির্মিত সুন্দর নকশা খচিত কাঠের খাট, আলমারি, ড্রসিংটেবিল, আলনা, মাদুর, শীতলপার্টি ব্যবহার করা হলেও এখন স্টীলের তৈরি এসব চটকদারি উপহার সামগ্রী প্রতিটি বাঙালীর ঘর জুড়ে নিয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য আয়াজিত কমিউনিটি সেন্টারগুলো সাজানো হয় বৈদ্যুতিক আলোক সজ্জায়। সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যায় প্রাচীন বাঙালী সংস্কৃতি। অতিথি নিমন্ত্রণে বিধি মানতে কার্ড দেখিয়ে চেয়ারে বসা বিদেশী সংস্কৃতি এই সভ্যতা নিঃসন্দেহে বাঙালী সংস্কৃতিকে কিছুটা হলেও খাটো করে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক আধুনিকতার ছোঁয়ার নামে কোন কোন অনুষ্ঠানে ক্যাবার নাচের সঙ্গে বিদেশী মদ সকল বাঙালীয়ানাকে খাটো করে দেয়। এ সংস্কৃতির আলোকে অবাধ নারী স্বাধীনতায় ঢুকে পড়ে বাধাহীন যৌনতা। একান্নবর্তী পরিবারগুলো বা একক সংসার শৃংখল নামক ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়। পরকীয়া বা বহু বিবাহর অপসংস্কৃতি সামাজিক অবক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। এসবের ফলে গ্রামীন জনপদের যাত্রাপালা ও পুতুল নাচ হারিয়ে যাচ্ছে। দর্শক বাড়ছে জি-বাংলা বা স্টার জলসায়। পুজা পার্বনকে সকল ধর্মর মিলন মেলায় পরিণত করার নামে সংখ্যালঘু নারীদের যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং অনুষ্ঠানের জৌলুস কমিয়ে ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, এক সময় বাড়িতে বাড়িতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান মানেই পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ বা চিংড়িই প্রাধান্য পেতো। ধুতি পাঞ্জাবী বা পাজামার সঙ্গে পাঞ্জাবী ভালই মানাতো। বাংলা নববর্ষ বা পৌষ মেলায় হাতে তৈরি বাঁশের বাঁশি, কাঠের তৈরি কাঠের বালান, পিড়া, মাটির ঘটসহ লোহার তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম শোভা পেত। কালের আবর্তনে এখন প্লাস্টিক ও স্টীল তৈরি সরঞ্জাম মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে পরিণত হয়েছে। চিত্র সংক্রাতি চড়ক মেলায়ও তাল পাখার পরিবর্তে রঙ বেরঙের প্লাস্টিক পাখা সমাদত হচ্ছে। তবে ১৯৭২ সালের সংবিধান পরিবর্তণ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পর থেকে এদেশে বসবাসরত সংখালঘুরা সংখ্যাগুরুদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। জাত, পাত ও ধর্মের দোহাই দিয়ে দুর্গাপুজাসহ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। এরপরও প্রতি বছর কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটে। মামলা হয়,শাস্তি হয় না দোষীদের। নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ত্যাগ করছে সংখ্যালঘু হিন্দুরা।
বিশিষ্ঠ সমাজসেবক গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল জানান, উগ্রমৌলবাদীরা নববর্ষসহ যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে মালায়নদের বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। শুধু বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব নয়, উগ্রমৌলবাদীরা বাঙালী উৎসব বা লোকজ সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। উদাহরণ হিসেবে ২০০৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহরে ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুরর মেলা চলাকালে রক্সি সিনেমা ও স্টেডিয়ামে চলমান সার্কাস প্যাণ্ডলে বোমা হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে এক কলেজ ছাত্রসহ তিনজন মারা যায়। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন ৫০ জনেরও বেশি। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দায়সারা তদন্তে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না পেলেও জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ময়মনসিংহ আদালতে ওই ঘটনা সম্পর্ক বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তাতে উগ্রমৌলবাদীই ঘটনার জন্য দায়ি বলে প্রমাণিত হয়েছে। যার ফলে মামলাটি আবার নতুন করে মোড় নিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গুড়পুকুর মেলা শহীদ রাজ্জাক পার্ক কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসন মেলার জন্য উদ্যোগ নিয়ে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে মেলা আগের মত জৌলুস ফিরে পেত। যত্রতত্র হিন্দু মন্দিরও প্রতিমায় আঘাত, কালিগঞ্জর কুশুলিয়ার মত দীর্ঘদিনের রথের মেলার জায়গা দখল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর জমিদার বাড়ির সানার দালনেও সানার রাধাকষ্ণ মুর্তি লুট করা হয়। বিষ্ণুপুর, সাতক্ষীরা, শ্যামনগরসহ জেলার সকল জমিদারদের বাড়ি, কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া মঠ, পুরাতন সাতক্ষীরার মায়ের মন্দির, শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরর রাজা প্রতাপাদিত্যর ঐতিহাসিক নিদর্শন, লাবসার মাইচম্পার দরগা, কালিগঞ্জের প্রবাজপুরের শাহী মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সংরক্ষন করা না হলে বাঙালী উৎসবের সাধ হারাবে বাঙালী সংস্কৃতি।
তবে সাতক্ষীরার বিশিষ্টজনেরা বলেন, নবান্ন থেকে নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি দুর্গাপুজা সবটাই বাঙালী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এসব রক্ষায় সামাজিক উদ্যাগের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে আরো বড় ধরণের সরকারি উদ্যাগ নিতে হবে। নইলে বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে উগ্রমৌলবাদীদের হুমকি প্রতিহত করা যাবে না।

একই রকম সংবাদ সমূহ

১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন

বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ

সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন

‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন

  • ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই’ : জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল
  • ‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
  • সাতক্ষীরার বাঁশদহের ভবানীপুর প্রাইমারি স্কুলে মিলন সভাপতি নির্বাচিত
  • সাতক্ষীরায় র‌্যাবের অভিযানে গাঁজাসহ এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার
  • আশাশুনিতে পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে আবারো অন্যত্র বিয়ে দেয়ার অভিযোগ!
  • সাতক্ষীরায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন ও চুরিরোধে ওজোপাডিকো’র অভিযান
  • ৭ অক্টোবরের মধ্যে জেলার সব নদী-খালের অবৈধ নেট-পাটা-বাধ অপসারণের নির্দেশ
  • সাতক্ষীরায় ছাগল খড়ি’তে দেয়ার অপরাধে যুবককে মারপিট!
  • সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গ্রেফতার ১৩, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-গাঁজা উদ্ধার
  • পাটকেলঘাটা মডেল হিসাবে জেলায় কাজ করবে: সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক
  • তালার জিয়ালা গ্রামকে শহরে রূপান্তরের ঘোষণা জেলা প্রশাসকের
  • সড়কের জায়গা দখল করে ব্যবসা নয়, অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের নির্দেশ ডিসি’র