বাঘ বৃদ্ধিতে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ সংরক্ষিত ঘোষণা
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বন্যপ্রাণির নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে ৫২ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য (সংরক্ষিত) ঘোষণা করা হয়েছে। আগে এ অভয়ারণ্যের পরিমাণ ছিল ২৩ শতাংশ। সুন্দরবনের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণের ১২টি কম্পার্টমেন্ট নতুনভাবে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইসতিয়াক আহমদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নতুনভাবে ঘোষিত অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর। এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের ২২টি কম্পার্টমেন্টের ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত হলো। এর আগে ১০টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর। সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬ হাজার ১৭ কিলোমিটার।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক এবং সুন্দরবনের বাঘ মনিটরিং সার্ভে প্রকল্পের পরিচালক আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নতুন অভয়ারণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জীববৈচিত্র রক্ষা হবে। বন বিভাগের মূল দায়িত্ব বর্ধিত এলাকার যথাযথ পরিচর্যা করে বন্যপ্রাণির নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, আগে সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ছিল। নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়নের ফলে ৫২ শতাংশ অভয়ারণ্য হলো।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, অভয়ারণ্য এলাকায় বাঘসহ অন্যান্য প্রাণির নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ এলাকায় সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বনজ সম্পদ আহরণকারী, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী এবং বন সংলগ্ন অধিবাসীদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
নতুন অভয়ারণ্য এলাকাগুলো হলো সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ১, ২, ৩, ৮ (অংশ), ৯ ও ৪৫ (অংশ) নম্বর কম্পার্টমেন্ট (দুধমুখী ডলফিন অভয়ারণ্য ব্যতীত ১৭০ দশমিক শূন্য হেক্টর)। যার উত্তরে বগা খাল, মাইটার ভারানী, বড় শিয়ালা খাল, শেলা গাং, হরিণটানা ক্যাম্পের ভাটায় লাটিমারা খালের ওপর থেকে বেতমোর গাং হয়ে দুধমুখী ক্যাম্প, দাবুরী ভারানী খাল হয়ে ভোলা নদীর সংযোগ পর্যন্ত। পূর্বে বলেশ্বর নদী, পশ্চিমে পশুর নদী থেকে নামুর সমুদ্র নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর (দুবলার চর ব্যতীত)। এর আগে পূর্ব বিভাগের ৪,৫ ও ৬ নম্বর কম্পার্টমেন্ট পুরো এবং ৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টের অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে আরজবানী ও বেকি খাল, বলেশ্বরের সংযোগস্থল পর্যন্ত সুপতি খাল, পূর্বে বলেশ্বর নদী, পশ্চিমে বেতমোর এবং চরাবেতমোর গাং ও দক্ষিণে ডিমেরচরসহ বঙ্গোপসাগর। সুন্দরবনের দক্ষিণের ১৮ ও ১৯ নম্বর কম্পার্টমেন্ট নতুনভাবে অভয়ারণ্যেও তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যার উত্তরে পাটকষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদীর ওপরের দিক দিয়ে পাঠাকাঠা ভারানী পর্যন্ত, পূর্বে মরজাত নদী হয়ে নুমুদ সমুদ্র নদী পর্যন্ত, পশ্চিমে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও বড় পাঙ্গা নদী থেকে মালঞ্চ নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণে পুটনী দ্বীপসহ বঙ্গোপসাগর। এর আগে দক্ষিণের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর কম্পার্টমেন্ট’র পুরো অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে কাগানদী এবং দোবেকী খাল, পূর্বে কাগা-কাঙ্গা এবং মোরজাত নদী, পশ্চিমে মালঞ্চ ও গঙ্গা নদী এবং দক্ষিণে পাটনী দ্বীপসহ বঙ্গোপসাগর।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ৫১ (এ), ৫১ (বি) ও ৫১ নম্বর কম্পার্টমেন্ট নতুন অভয়ারণ্যে যুক্ত হয়েছে। যার উত্তরে যমুনা নদী বা মাহমুদা নদী হয়ে ফিরিঙ্গি গাং পর্যন্ত, উত্তর-পশ্চিমে কাচিকাটা খাল, পূর্বে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও বড় পাঙ্গা নদী থেকে মালঞ্চ নদী পর্যন্ত, পশ্চিমে হরিণভাঙ্গা নদী হয়ে রায়মঙ্গল নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণে তালপট্টিসহ বঙ্গোপসাগর। এর আগে পশ্চিম বিভাগের ৫৩, ৫৪, ৫৫ পুরো এবং ৪৯ নম্বর কম্পার্টমেন্টের অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে বুড়ির গাং, সিলমারী, যমুনা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত নোটাবেকি খাল, পূর্বে যমুনা নদী, পশ্চিমে হরিণভাঙ্গা নদী এবং দক্ষিণে তালপট্টিসহ বঙ্গোপসাগর।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় (বন শাখা-২) থেকে ২৯ জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ হয়েছে, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ) আদেশ ১৯৭৩ এবং বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন ১৯৭৪’র ২৩ (১) (২) ধারার ক্ষমতাবলে ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সুন্দরবনের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ওই অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণের প্রয়োজন হওয়ায় বন অধিদফতরের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’র ধারা ১৩’র ক্ষমতাবলে আগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অধিকতর সংশোধনক্রমে সরকার সংরক্ষিত এলাকাকে বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন