ইতিহাস গড়া ম্যাচে টাইগারদের রাজকীয় জয়
টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জনিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। তোর এ সিদ্ধান্ত অনুমিতই ছিল। কিন্তু নিজেদের শক্তিশালী পেসারদের কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে শুরুতেই চাপে ফেলার যে আশার গুড় জমিয়ে রেখেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা তাতে বালি ঢেলে বাংলাদেশ। শুধু বিশ্বকাপেই নয়, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। চলতি আসে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। প্রোটিয়াদের কোনো চমক দেখাতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৩০৯ রানে আটকে দিয়ে জয় তুলে নিয়েছ ২২ রানের।
এবারের আসরে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে গেছে বাংলাদেশ- একথা বোর্ড কর্তারা বারবার বলেছেন। টাইগারদের ছোট করে না দেখলেও, ফেভারিট হিসেবে মানবেন না হয়তো কোনো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই। কিন্তু প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়টা তো ফেবারিটের মতোই। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ছাড়া এর আগের তিন ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা দলগুলো যেভাবে খাবি খেয়েছে সেখানে বাংলাদেশ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ করে এশিয় দলগুলো (পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান) ইংলিশ কন্ডিশনে ছন্নছাড়া শুরু করেছে। সেখানে গোছালো ক্রিকেট দিয়ে শুরু করেছে টাইগাররা।
নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করেছেন বোলাররাও।
ভালো শুরুর পর ২৩ রানে রান আউট হন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে বড় জুটি গড়ার আগেই আরেক ওপেনার মাক্রামকে ফেরান সাকিব। ৪৫ রানে বোল্ড হন তিনি। এরপর সাবলীল খেলতে থাকা ডুপ্লেসিকে বোল্ড করেন মেহেদী মিরাজ।
তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিশা দেখাচ্ছিলেন ডেভিড মিলার। ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলো ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে গড়া তার জুটি। কিন্তু সেই জুটিতে আঘাত হেনে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
৩০তম ওভারে মিলারকে জীবন দেন সৌম্য সরকার। সাকিব আল হাসানের বলে মিড অফে তুলে মেরেছিলেন মিলার। কিন্তু লাফিয়েও ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি সৌম্য। দুই ওভার পরে আবারও মিলারকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন মোস্তাফিজ। কিন্তু থার্ডম্যানে ক্যাচটি নিতে ব্যর্থ হন মাহমুদুল্লাহ। তবে মিলারের নড়বড়ে ব্যাটটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে নেননি মোস্তাফিজ। ৩৮ রানে তাকে মেহেদী মিরাজে তালুবন্দি করান তিনি।
৩৮তম ওভারে জেপি ডুমিনিকে তুলেই নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। আম্পায়ারও আঙুল তুলে আউটের সংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউতে দেখা যায় বল স্ট্যাম্পের উপরে ছিল। এলবিডব্লিউ থেকে সে যাত্রায় বেঁচে যান ডুমিনি।
চোখ রাঙাচ্ছিলেন রাসি ফন ডার ডুসেন। ৩৮ বলে ৪১ করা ডুসেনের স্ট্যাম্প উপড়ে দেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ুকে ৭ রানে বিদায় করেন সাইফুদ্দিন। চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরো চেপে ধরেন মোস্তাফিজ। ১০ রানে ক্রিস মরিসকে ফিরিয়ে শেষ আশাটুকুও যেনো ভেঙে দেন ফিজ। প্রোটিয়াদের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন মোস্তাফিজ। টিমটিম করে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা ডেপি ডুমিনিকে ৪৫ রানে বোল্ড করে কাটার মাস্টার।
এদিকে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করে টাইগাররা।
এটি শুধু বিশ্বকাপেই নয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। এর আগে ওয়ানতে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ৩২৯। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে এই রান করেছিল টাইগাররা। আর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলী স্কোর ছিল ৩২২। ২০১৫ সালের আসরে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে এই সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সম্ভবত আগে ব্যাটিংটা বাংলাদেশ দলও চায়নি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ের জুজু কাটাতে বেশি সময় লাগেনি। দুই ওপেনারের সাবলীল ব্যাটিংয়েই ভালো একটা ভিত্তি পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তামিম অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। দলীয় ৬০ রানের সময় ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফেরেন তিনি। আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ুর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাট দেন তামিম।
সৌম্য ছিলেন স্বরূপে। প্রোটিয়া পেসারদের তোপগুলো একের পর এক বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন শৈল্পিক সব শটে। ৩০ বলে ৪২ রান করে তিনি শিকার হন ক্রিস মরিসের।
এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। প্রতি বলে বলে অভিজ্ঞতার ছাপ রেখে গেছে মুশি-সাকিব জুটি। তাদের ১৪২ রানের জুটি ভাঙে ৩৬তম ওভারে। ৮৪ বলে ৭৫ রানে ফেরেন সাকিব। লেগস্ট্যাম্প ছেড়ে সুইপ করতে গিয়ে ইমরান তাহিরকে উইকেট উপহার দেন সাকিব।
২১ বলে ২১ রান করে ইমরান তাহিরের দ্বিতীয় শিকার হন মিঠুন। দলীয় ২৫০ রানের সময় ব্যাক্তিগত ৭৮ রানে ফেরেন মুশফিক। এরপর রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়।
শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে বড় সংগ্রহ পাইয়ে দেন মোসাদ্দেক। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩০ রান তোলে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক ২৬ রানে ফিরলেও মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে।
স্কোর:
বাংলাদেশ ৩৩০/৬ (৫০)
তামিম ১৬ (২৯)
সৌম্য ৪২ (৩০)
সাকিব ৭৫ (৮৪)
মুশফিক ৭৮ (৮০)
মোহম্মাদ মিঠুন ২১ (২১)
মাহমুদুল্লাহ ৪৬ (৩৩)
মোসাদ্দেক ২৬ (২০)
মিরাজ ৫ (৩)
বোলার:
লুঙ্গি এনগিদি ৪-০-৩৪-০
কেগিসো রাবাদা ১০-০-৫৭-০
আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ু ১০-১-৫২-২
ক্রিস মরিস ১০-০-৭৩-২
এইডিন মারক্রাম ৫-০-৩৮-০
ইমরান তাহির ১০-০-৫৭-২
জেপি ডুমিনি ১-০-১০-০
দক্ষিণ আফ্রিকার
ডি কক ২৩ (৩২)
মারক্রাম ৪৫ (৫৬)
ডু প্লেসি ৬২ (৫৩)
মিলার ৩৮ (৪৩)
ফন ডার ডুসেন ৪১ (৩৮
জেপি ডুমিনি ৪৫ (৩৭)
আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ু ৮ (১৩)
ক্রিস মরিস ১০ (১০)
কেগিসো রাবাদা
ইমরান তাহির
বোলার:
মোস্তাফিজুর রহমান
মেহেদী মিরাজ ১০-০-৪৪-১
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৮-১-৫৭-২
সাকিব আল হাসান ১০-০-৫০-১
মাশরাফি বিন মুর্তজা ৬-০-৪৯-০
মোসাদ্দেক হোসেন ৬-০-৩৮-০
বাংলাদেশ … রানে জয়ী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইম একাদশ, গদখালি ও পাথরঘাটা সেমিতে
কলারোয়ায় ৮দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় খেলায় ফাইমবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মাধবকাটিকে হারালো স্বাগতিকরা
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সাতক্ষীরা সদরের মাধবকাটি ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
সাতক্ষীরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখবিস্তারিত পড়ুন