প্রশাসনে স্বীয় মর্যাদায় হাজারো নারী কর্মকর্তা
ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যক এলাকা মতিঝিলের এসিল্যান্ড হিসাবে রয়েছেন মতমতাজ বেগম। আটমাস ধরে তিনি দায়িত্বে আছেন। এর আগে সহকারী কমিশনার হিসাবে ঢাকা ডিসি অফিসে কর্মরত ছিলেন। এরই মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে তার চাকুরির বয়স হয়েছে প্রায় ৬ বছর। তিনি ২০১১ সালে ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে এখন সরকারের প্রশাসনে কাজ করছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসাবে দায়িত্বে আছেন একসময়ের ভোলা জেলার ১ম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট স্মৃতি রানী ঘরামী। এভাবে শুধু মমতাজ আর ম্মৃতি রানী ঘরামী নন। এই সরকার আমলে সারাদেশে সরকারি প্রশাসনে কর্মরত আছেন হাজারো নারী কর্মকর্তা। যারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে পুরুষ শাষিত সমাজে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছেন। এই ধারা আগামীতে আরো অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৭ জন আছেন পূর্ণ সচিব, আরো দুইজন সচিব মর্যাদায়, ৭৬ জন আছেন অতিরিক্ত সচিব, ৯৭ জন যুগ্ন সচিব, ২০২জন ডেপুটি সেক্রেটারি বা ডিএস, ৩৬০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব ৪৩২ জন সহকারী সচিব ৭২ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও ১৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আর ৯জন আছেন যারা ৯টি জেলা প্রশাসনের জেলা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আরো নারী কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদের স্পিকার, পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিচারপতিসহ জনপ্রশাসনেও নারী কর্মকর্তাদের মুল্যায়ন করা হয় সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছর ধরেই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যে ২০২০ জন নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৬৯৯ জনই নারী। শতকরা হিসেবে যা ৩৪.৬ শতাংশ। কেবল সংখ্যায় নয়, শিক্ষা বাদে ২০টি ক্যাডারে নিয়োগ পরীক্ষার আটটিতেই প্রথম হয়েছেন নারী। আর শিক্ষার ৩০টি বিভাগের মধ্যে ১৩টিতেই প্রথম হয়েছেন নারী প্রার্থী। বেশ কিছু ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে শতভাগই নারী। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই সরকারের আমলেইর প্রথম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে এত বেশি সংখ্যক নারী নিয়োগ পেয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর অগ্রগতির নানা সূচকে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দ্যা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে সার্বিক বিবেচনায় নারী উন্নয়নে বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪ নম্বরে। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০৮ ও পাকিস্থান ১৪৪ নম্বরে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১ নম্বরে। মাত্র ১০ বছরে দেশ নারী উন্নয়নে যতটা এগিয়েছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এতটা পারেনি বলে প্রতিবেদনটিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্মৃতি রানী ঘরামী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর তনয়া হিসাবে দেশে প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের যে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন তার জন্য সমগ্য নারী কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীতে অভিবাদন। তবে তার মতে নারী ও পুরুষের সংখ্যা অনুপাতিক হারে নয় আগামীতে মেধা ও যোর্গ্যতার বিচারে যদি নারীদের মূল্যায়ন করা হয় তবে আরো বেশি সংখ্যক নারী সরকারের মূল প্রশাসনে কাজ করতে পারবে। তিনি জানান, বাবা রাম কান্তি ঘরামীর একান্ত চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে প্রথমে একটি ব্যাংককে ও পরে বন্ধুদের বিবিএস যোগদানের ঘটনায় তিনি নিজেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন কাডারে চাকরিতে আসেন। চাকরিতে যোগদানের সময় তার বাবা তাকে একটি কলম হাতে দিয়ে বলেছিলেন, চাকরিতে যাও তবে এই কলমের অমর্যাদা করো না। সেই থেকে আজে বাবার নির্দেশ মেনে চলেছেন। চাকরি জীবনের প্রতিটি সেক্টরে নিজের সততা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও হিসাবে কাজ করেন। বিভিন্ন সময় প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কাজ এগিয়ে নিছেন। টিকে আছেন এখনো সরকারি চাকরিতে। বললেন, সরকারি পৃষ্টপোষকতা থাকলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনে যে মেয়েরাও গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করতে পারে আমরাই তার উদাহরণ।
একইভাবে মতিঝিলের এসিল্যান্ড মমতাজ জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মার্স্টার্স করে প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসাবে প্রশাসন ক্যাডারে কাজে যোগদেন। ইচ্ছের আছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিব হিসাবে কাজ করার। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার কৃতজ্ঞতা যে ঢাকার মত স্থানে এসিল্যান্ড হিসাবে তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। তিনি জানালেন, এখন মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসাবে যে নারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন তারাই তাদের অনুপ্রাণিত করছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬২ শতাংশ নারী আয়বর্ধক কাজে জড়িত। দক্ষিণ এশিয়ায় এই হার সর্বোচ্চ। ৫০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে এই হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই নারীরা। স্থানীয় প্রশাসনের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব তাদের সৃজনশীলতা, সঠিক বিচারব্যবস্থা যেন চোখে পড়ার মত। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বৃহত্ রাজনৈতিক দলের প্রধান থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভা, প্রশাসন, সব ক্ষেত্রেই নারীদের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান। বিশ্বের আর কোনো দেশের রাজনীতিতে নারীর এত উচ্চাসন নেই।
জানতে চাইলে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এসডিসি বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ নারীর যে জয়, নারীর যে অবস্থান তা থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। সমগ্র বিশ্বের বিশেষ করে এ উপমহাদেশে নারীর যে ইতিহাস তা মূলত বঞ্চনা আর অবদমনের ইতিহাস। বাঙালি নারীদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ সহজ ছিলো না। ফলে বাঙালি নারীর জন্য আলোকিত জীবনের পথ ছিলো বন্ধুরও। কিন্তু বর্তমান সরকারের নারী ক্ষমতায়ন নীতির ফলে নারী আজন দেশের জন্য অভিশাপ নয় আশির্বূাদ। তিনি বলেন, উনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সরোজীনী নাইডু এদের সক্রিয় চেষ্টায় আর বাঙালি মুসলমান নারীদের জন্য আলোকবর্তিকা হাতে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাবের মধ্য দিয়েই বাঙালি নারীর জাগরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অগ্রযাত্রায় পুর্নতা দিচ্ছেন।
হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্যা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০১৫ অনুযীয় রাষ্ট্র ক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নবম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অষ্টম। আগামীতে সব সেক্টরের মত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসনেও নারীরা শক্ত আসনে থাকবেন এমনটাই প্রতশা সংশ্লিষ্টদের।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন