সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

রোজায় প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ ইফতার করলেন নলতা রওজা শরিফে

সাতক্ষীরা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামে হজরত শাহছুফী আলহাজ্ব খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রঃ) এর রওজা শরিফ। প্রতিবছর রমজান মাস আসলে এই নলতা পাক রওজা শরীফে মাস ব্যাপী প্রতি দিনই প্রায় ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে নির্মিত টিনের ছাউনির নিচে বসে একত্রে ইফতার করেন। আর বাকী সাড়ে চার হাজার মানুষের ইফতার সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন মসজিদে ও স্থানীয়দের বাড়িতে বাড়িতে প্রেরণ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যোহর নামাজের পরপরই রোজাদারদের জন্য ইফতার তৈরী শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই ইফতার ব্যবস্থাপনা কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়। ১২ সদস্য বিশিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের নিয়োগকৃত ছোট-বড়সহ তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি গ্রুপ করে কাজ ভাগ করে দেন। সে মোতাবেক তারা বাইরে ইফতার পাঠানোর জন্য প্যাকেট তৈরী, প্যান্ডেলের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে গ্লাস ও পানির বোতল সাজানো, সাত প্রকার ইফতার প্লেটে সাজানোসহ ওই প্লেট রোজাদারদের কাছে পৌছানোর কাজ করে। এ যেন একটা ইলাহিকান্ড।

প্রতিবছরই পবিত্র রমজানের প্রতিটা দিনই এই রওজা শরীফে এটি চিরচেনা দৃশ্য। এমনিতে সারা বছর এই রওজা শলীফে ভীড় থাকলেও রমজান মাসে ইফতারকে কেন্দ্র করে এই ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুন। আসরের নামাজের পরপরই রোজাদাররা এ রওজা শরীফে আসতে শুরু করেন। উদ্দেশ্যে একসঙ্গে ইফতার করা। ইফতারে ধনী-গরীব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়ে মিলেমিশে পরম তৃপ্তির সংগে ইফতার করেন ধর্মপ্রাণ এই হাজার হাজার মুসলমান।

ইফতারের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সম্পাদক আলহাজ্ব চৌধুরী আমজাদ হোসেন, সদস্য আবুল ফজল,খায়রুল হাসান ও এনামুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, রোজাদারদের জন্য এখানে প্রতিদিন ১২ মণ দুধ দিয়ে তৈরি ফিরনি, ছোলা ভুনা, কলা, ডিম, খেজুর, সিঙ্হাড়া ও চিড়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার রোজাদার এখানে ইফতার করেন। দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষসহ স্থানীয়রা অংশ নেন এই ইফতারে। তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রোজাদারদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। ইফতারের ঠিক আগ মুহুর্তে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করেন নানা শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ।

শুধু তাই নয়, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভে ২৩ রজমানের পর থেকে নলতা শরীফ শাহী মসজিদে এ’তেকাফে বসেন ৫৫০ জন থেকে ৬০০ মুসুল্লী। যাদের খাওয়া-দাওয়া ও ইফতারের ব্যবস্থাও এখানে করা হয়। আর এই মসজিদে প্রতিদিন তারাবিতে অংশ নেন দুই থেকে তিন হাজার মুসুল্লী। রয়েছে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের নামাযের আলাদা ব্যবস্থাও। আর এ সব কিছুরই ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ।

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের হিসাবরক্ষক এবাদুল হক জানান, প্রতিবছর রমজানে ইফতার, তারাবী ও এ’তেকাফ উপলক্ষ্যে নলতা রওজা শরীফে মুসুল্লীদের মিলন মেলা বসে। এজন্য প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে বাশ-খুটি দিয়ে টিনের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। আর প্রতিদিন ইফতারিতে খরচ গড়ে আড়াই লাখ টাকা। ১৯৫০ সাল থেকেই চলছে এই আয়োজন। দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়ছে। হুজুরের দেশ-বিদেশের ভক্তদের অনুদানেই বহন করা হয় এই ব্যয়ভার। এমনকি যেসব ভক্তবৃন্দ নগদ টাকা দিতে পারেন না। তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি ইফতার খরচ চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তারা টাকা দিয়ে দেন। এক মাসে প্রায় শতাধিক ভক্ত এই ইফতারের খরচ বহন করছেন বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে এটিই ইফতারের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ আয়োজন। কারণ সৌদি আরবের পর নলতা শরীফে ইফতারের আয়োজনের চেয়ে বড় আয়োজন আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই।

তারাবির প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি আরও জানান, হাফেজ হাবিবুর রহমান ও হাফেজ আশিকুর রহমান নামে দু’জন নলতা শরীফ শাহী মসজিদে পুরো রমজান জুড়ে তারাবি পড়ান। এদের মধ্যে হাফেজ হাবিবুর রহমান ১৬ বছর ধরে ও হাফেজ আশিকুর রহমান চারবছর ধরে তারাবি পড়াচ্ছেন। আর মুসুল্লীদের সুবিধার্থে বিদ্যুতের পাশাপাশি জেনারেটরের ব্যবস্থাও আছে।

কথা হয় হাফেজ হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি জানান,তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়মানুযায়ী তারাবিতে প্রথম ছয় দিন দেড় পারা করে এবং পরবর্তীতে সাতাশ রোজা পর্যন্ত এক পারা করে কুরআন পড়বেন।

রওজা শরীফে ইফতার করতে ঢাকা থেকে আসা বদরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এখানে ইফতার করতে এসেছি। কয়েকদিন থাকবো। ইফতার সামনে রেখে বিশেষ মোনাজাত করা খুবই ভাল লাগে। তছাড়া একসাথে হাজার হাজার মানুষ ইফতার করলে অনেক বরকত হয়। সব মিলিয়ে আমার ভালই লাগে তাই প্রতি বছর এক-দুই বার এখানে ইফতারে শরিক হই।

সাতক্ষীরা সদর থেকে ইফতারে অংশ নিতে আসা আবুল কাশেম জানান, ইফতারের উদ্দেশ্যে এখানে এসে যোহর নামাজ আদায় করেছি। আছরও পড়ে ইফতার করে মাগরিব পড়ে চলে যাবো। একসাথে অনেক মানুষ ইফতার করছি। অনেক ভালো এবং সুন্দর আয়োজন।

রওজা শরীফের খাদেম আলহাজ্ব মৌলুভী আনছার উদ্দীন (৮৪) জানান, আমি ১৬/১৭ বছর বয়স থেকে হুজুরের প্রেমে আসক্ত হয়ে এখানে অবস্থান করছি। হুজুরের কথামত আমি আজও এ রওজা শরীফের খাদেমের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি এবং মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবো। আমার ধ্যান-ক্যান এ রওজা শরীফ। অন্য কিছু নয়। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আমারই নেতৃত্বে এখনও চলেন। আমি একটানা ৫০ বছর রোজা পালন করে আসছি। আমার শরীরটা খুব ভাল না। আমার জন্য দোয়া করবেন।

উল্লেখ্য, হজরত শাহছুফী আলহাজ্ব খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রঃ) ১৮৭৩ সালে তিনি এ নলতা শরীফে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মুনশী মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন। ১৮৯৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দর্শনশাস্ত্রে এম পাশ করার পরপরই শিক্ষকতা পেশা দিয়ে তার কর্ম জীবন শুরু হয়। একজন শিক্ষক থেকে শুরু করে তিনি শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ৫৫ বছর বয়সে তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। বহুমুখি জ্ঞান ও মেধা সম্পন্ন,মানব দরদী ও সমাজ সংসকারক,ঐশি জ্ঞান সম্পন্ন আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক হিসেবে তিনি মানুষের ইহকাল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ)এর প্রতিষ্ঠিত “হিলফুল ফুজুল”এর অনুকরণে ১৯৩৫ সালে নলতা গ্রামে “নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন” প্রতিষ্ঠা করেন। এ মিশনের প্রধান উদ্দেশ্যে “¯্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা”। তিনি ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০.১০ মিনিটে ৯২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার সমাধিতে দৃষ্টিনন্দন এক ইমারাত তৈরী করেছেন তার ভক্তবৃন্দ। প্রতিদিন এই পবিত্র রওজা শরীফ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ জেয়ারত করতে আসেন। এমনকি প্রতিবছর ৮,৯.১০ ফেব্রুয়ারী তার দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় ওরছ শরীফ পালিত হয়।

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন

টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী

টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন

সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান

জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন

  • রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে চীন
  • ইউপি নির্বাচন : চেয়ারম্যান-মেম্বারদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি ‘গুজব’
  • বাংলাদেশের নর্দান ইউনিভার্সিটি ও কানাডার কর্টলার ইন্টারন্যাশন্যাল, রেসিন্ট ইন্টারন্যাশন্যালের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি
  • চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৭টি পদক লাভ
  • ড. কালাম ‘এক্সিলেন্স এওয়ার্ড’ গ্রহণ করেই দেশবাসীকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী
  • তৃণমূল থেকে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
  • মোবাইল ছিনতায়কারীকে দৌড়ে ধরলেন ম্যাজিস্ট্রেট
  • কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শোভন-রাব্বানির ভাগ্য নির্ধারণ
  • পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
  • পুলিশের ব্যাংকের যাত্রা শুরু
  • বিএনপি অর্থ-সম্পদ অর্জনে বেশি ব্যস্ত ছিল: প্রধানমন্ত্রী