পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে যা বলেছিল বিএনপি ও সুশীল সমাজ
পদ্মা সেতু দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে এক সময় দারুণ চাপে ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন তৎকালীন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এ সময় তার পদত্যাগ নিয়েও সমালোচনা করেন সুশীল সমাজসহ বিরোধী দলে থাকা বিএনপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানাডার একটি আদালতের রায়ে প্রমাণিত হল, দুর্নীতি হয়নি পদ্মা সেতু নিয়ে। আর সেই সঙ্গে মামলায় জড়িত সকল পক্ষ নিরপরাধ বলে রায় দেয়া হয়।
এরই প্রেক্ষাপটে রবিবার সংসদে দাবি ওঠে- পদ্মা সেতু দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাংক সহ যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে। দেখে নেয়া যাক ‘পদ্ম সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে’ এই মর্মে বিএনপি, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনগুলো কি বলেছিল-
পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি’র তৎকালীন অবস্থান
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার ১০ মাস পর তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ প্রমাণ করছে যে অভিযোগটি সঠিক ছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে তা প্রমাণিত। যদি সে আরো আগে পদত্যাগ করত, তাহলে হয়ত বরাদ্দ বাতিল করা হত না।
অপর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল দাবি করেছিলেন, পদ্ম ব্যাংক যেই তিনজনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলছে তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাও একজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, যদি আবুল হোসেন একজন দেশপ্রেমিক হয়ে থাকে, তাহলে কে দেশপ্রেমিক নয়? প্রাথমিক অবস্থায় আবুল হোসেনকে সমর্থন দেয়ায় একটি বার্তাই সাধারণ মানুষ পায়। আর তা হল, ‘সাধারণ মানুষের টাকা যারা ডাকাতি করে, তাদেরই রাজনীতিতে আসার অধিকার রয়েছে’।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক নয়। সে একজন নির্লজ্জ ব্যক্তি, যে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ আনার পরও ১০ মাস ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এএসএম হান্নান শাহ বলেছিলেন, আবুল হোসেনকে অনুসরণ করে দেশপ্রেম প্রমাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীরও উচিত পদত্যাগ করা। এ সময় তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতিগ্রস্ত এক প্রধানমন্ত্রী এবং তারও পদত্যাগের মাধ্যমে একটি উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
নিজের গুলশান অফিসে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম বিশ্বব্যাংক তার দেয়া বরাদ্দ দুর্নীতির কারণে বাতিল করল।
দুর্নীতি দমন কমিশন আবুল হোসনকে বাঁচানো চেষ্টা করছে বলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে বিএনপি।
সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বক্তব্য
বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন, দুর্নীতি আমাদের কিভাবে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি উদাহরণ এটি (পদ্মা সেতু)। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া ক্ষেত্রে বাজে প্রভাব ফেলবে এটি। কেননা দাতারা এখন কোন বরাদ্দ দেয়া ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে আরো সচেতন হবে।
‘এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সরকার এখনই বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হবে।- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিন খান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অপর সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের কারণে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। যখনই কোন ঋণদানকারী সংস্থা এ দেশের প্রকল্পে অর্থ প্রদান করবে, তখন সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকবে।
সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রসঙ্গে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার পদত্যাগই প্রমাণ করে সে দুর্নীতি করেছে। সে যদি আরো আগে পদত্যাগ করত, তাহলে হয়ত পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য এই বরাদ্দ বাতিল করা হত না।
বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জিপিএসএ) পুরস্কার জয়ী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ সম্পর্কে বলেছিলেন, এটা খুবই সামান্য ব্যাপার যা বেশ দেরিতে হয়েছে। আরো কয়েক মাস আগেই এটা করা উচিত ছিল। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনার পরই তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেকজন সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, মন্ত্রীর পদত্যাগ প্রমাণ করে, সরকারে বিশ্বব্যাংকের তোলা অভিযোগ মেনে নিয়েছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে দুর্নীতি হয়েছে। যদিও বেশ দেরিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণ করছে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদু রহমান মান্না প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী এমন একজন মানুষকে ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে প্রচার করবেন। আর কেনই বা সেটা লন্ডন থেকে করতে হচ্ছে। যদি আসলেই মন্ত্রীর সৎ সাহস থাকত, তাহলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরপরই সে পদত্যাগ করত।
এদিকে সে সময় প্রকাশিত এক কলামে আলী ইমাম মজুমদার লেখেন, পদ্মা ব্রিজ নিয়ে হওয়া দুর্নীতির তদন্ত করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যর্থ হয়েছে। যদি দুদক সঠিক কাজটি করত, তাহলে হয়ত বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের বরাদ্দ বাতিল করত না। দেশ ও জাতির পাশাপাশি উন্নয়ন সহায়ক অংশীদাররাও চায় দুদক তার সঠিক দায়িত্ব পালন করুক।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, সরকারি গাফলতির কারণে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন