নেপালে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত কো-পাইলট মৃথুলার কলারোয়ায় গ্রামের বাড়ি নিয়ে ধোয়াশা!!
নেপালে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত কো-পাইলট মৃথুলার কলারোয়ায় গ্রামের বাড়ি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। বর্তমান রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি অনেকে জানাচ্ছেন তাঁর পৈত্রিক আদি বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুর গ্রামে। আবার কেউ বলছেন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপায়। আবার যশোরের শার্শার সংবাদকর্মীরা বলছেন তাঁর বাড়ি শার্শার ইলিশপুরে। এমনই ধোয়াশা কাটাতে চেষ্টা করেছেন সংবাদকর্মীসহ প্রশাসনেরও অনেক কর্মকর্তাও।
অতিসম্প্রতি নেপালে ফ্লাইট ল্যান্ডিংএর সময় ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের সময় জীবনের বিনিময়ে বীর এই নারী পাইলট পৃথুলা রশিদ বাঁচিয়ে গেছেন ১০ নেপালি যাত্রীর প্রাণ। এজন্য নেপাল ভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে এই বীর নারীকে ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ আখ্যা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
মৃত্যুর পরে এই বীর নারীর গ্রামের বাড়ি নিয়ে সম্প্রতি ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- পৃথুলার দাদা মৃত আব্দুর রশিদ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। পরে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সংসদের ত্রাণ মন্ত্রী মাগুরার সোহরাব হোসেনের পিএস ছিলেন। সেই সুবাদে পৃথুলার বাবা আনিসুর রশিদ কাজল তাঁর পিতার চাকরীর কারণে রাজধানী ঢাকার পীরেরবাগে বড় হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে রাশিয়া থেকে পিএইসডি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে চাকুরী করেছেন পৃথুলার বাবা আনিসুর রশিদ কাজল। পৃথুলার মা আফরোজা বেবী ঢাকা মানিকগঞ্জের মেয়ে। শিক্ষা জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করে বর্তমানে আশা এনজিও’র সহকারী পরিচালক হিসাবে নিয়োজিত আছেন। -এমনই তথ্য জানালেন কলারোয়ার ইলিশপুরে পৃথুলার বাবা আনিসুর রশিদের চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলাম আলাল।
তিনি আরো জানান- পৃথুলার দাদার আদি বাড়ী ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। তাঁর দাদা আব্দুর রশিদ ছিলো ৩ ভাই এর একজন। চাকরী সুবাদে তার বসবাস ঢাকাতেই স্থায়ী ছিলো। অপর এক ভাই থাকতো ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। আব্দুর রশিদের আরেক ভাই আব্দুল মজিদ মোল্যা চাকরী ও বৈবাহিক সূত্রে কয়েক যুগ আগে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন কলারোয়ার ইলিশপুরে। ২০০১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পৃথুলার ঝিনাইদহের চাচাতো দাদা ও চাচাতো ফুফু বহু বছর আগেই মারা গেছেন। সেখানে তেমন কেউ থাকেনও না। ফলে সেখানে আর আসা-যাওয়া ছিলো না পৃথুলাদের।
আরো জানা যায় যে- পিতার মতো পৃথুলার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা সবই ঢাকাতে আর দেশের বাইরে। যার কারণে গ্রামের বাড়ি বলতে পৃথুলার পিতার চাচা মৃত আব্দুল মজিদ ও আব্দুল মজিদের দুই পুত্র শহিদুল ইসলাম আলাল এবং মনিরুল ইসলামের কলারোয়ার ইলিশপুরের বাড়ি। ইলিশপুর গ্রামের উত্তর পাড়া জামে মসজিদের পাশে পৃথুলার পিতার চাচাতো ভাইয়ের বর্তমান বাড়ি। বছর দশেক আগে শেষ বারের মতো সেখানে বেড়াতে এসেছিলেন পৃথুলা।
মৃত্যুর পরেও যে নামডাক আরো বেশি ছড়িয়ে যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ খ্যাত নিহত কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ।
আরা জানা গেছে- পিতা আনিসুর রশিদ কাজলের একমাত্র কন্যা পৃথুলা। পৃথুলার আপন চাচা অর্থাৎ আনিসুর রশিদ কাজলের এক ভাই দুলাল দুই যুগের অধিক সময় থেকে বসবাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আরেক চাচা সনোয়ার ও ফুফু প্রতিবন্ধী জুলি থাকেন এক সাথে ঢাকাতে। ফলে কলারোয়ার ইলিশপুরের শহিদুল ইসলাম আলাল ও মনিরুল ইসলাম মূলত পৃথুলার চাচাতো চাচা, অর্থাৎ পৃথুলার পিতার চাচাতো ভাই।
সূত্র জানায়- কখনই কলারোয়াতে বসবাস করেননি পৃথুলা, কিংবা তার পিতা-মাতা। তবু গ্রামের বাড়ি বলে কথা। সেই গ্রামের বাড়ি বলতে এখন কলারোয়ার ইলিশপুরের শহিদুল-মনিরুলের বাড়ি। ধোয়াশা ছিলো সেখানেই।
নিহত পৃথুলার চাচাতো চাচা শহিদুল ইসলাম আলাল জানান- পৃথুলার মৃত্যু যেন তারা মেনে নিতে পারছেন না। খুব শীঘ্রই ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ইলিশপুরে আসার কথা ছিল তার। কথা ছিলো আসছে আমের মৌসুমে বাড়িতে এসে আম খাবে বলে।
ফুটফুটে হাস্যোজ্বল মেধাবী তরুণী নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সহকারি পাইলট পৃথুলা সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
নিহতের চাচা-মনিরুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম আলাল পৃথুলার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নিহতের চাচী জানান- প্রায় ১০ বছর পূর্বে পৃথুলা বেড়াতে এসেছিল গ্রামে, এবার বৈশাখ মাসে গ্রামের বাড়িতে আম খেতে আসা কথা ছিল তার, আর আসা হলো না। ছুটিতে এসে ঘুরে ফিরে বেড়াবে স্বজনদের বাড়িতে, অপেক্ষায় ছিল এক সময়ের খেলার সাথি চাচাতো বোনেরা। সে আর ফিরে আসবে না কোন দিন চলে গেছে পরপারে।
এসএসসি পরীক্ষা শেষে পৃথুলার জন্যে অপেক্ষায় ছিল চাচাতো বোন উম্মে ইলমা ও উম্মে জান্নাতিও।
উল্লেখ্য, লন্ডন গ্রেজ ইন্টারন্যাশন্যাল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেল অর্জনকারী ঢাকা নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং আমিব্যাং এভিয়েশন থেকে উড্ডয়ন ডিগ্রি নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সহকারি পাইলট হিসাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগদান করেন পৃথুলা।
স্যালুট থাকলো বাংলাদেশে অন্যন্য সম্পদ পৃথুলা রশিদের জন্য। যিনি মৃত্যুর পরেই মূলত জয় করেছেন লাখো মানুষের অন্তর।
এদিকে ১৫ মার্চ বৃহষ্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কলারোয়ার ইলিশপুরে পৃথুলার চাচাতো চাচার উল্লেখিত বাড়িতে যান বলে জানা গেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন