তিস্তা ইস্যু : মমতাকে গোনায় ধরে বাংলাদেশ কি ভুল করেছে?
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য কী সেটা বাংলাদেশের সরাসরি জানার কোন দরকার ছিল? দীর্ঘদিন কূটনীতিক ছিলেন এমন মানুষেরা বলছেন, সেটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিংবা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্যে জানাটাই বাংলাদেশের জন্য ভাল। কিন্তু তিস্তা ইস্যুতে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য জানতে গিয়ে বাংলাদেশের আশার পারদই শুধু নেমে যায়নি, প্রত্যাশার বেলুনটাও ফুটো হয়ে গেছে।
তারা বলছেন: বাংলাদেশ হয়তো ভেবেছিল, বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং অন্য রাজনীতিকদের সঙ্গে যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব আছে, বন্ধুত্বটা অনেক পুরনো; তাই আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিগত যোগাযোগে হয়তো বরফ গলানো যাবে, সেই বরফ গলে বাংলাদেশে পানিও বইতে শুরু করবে। কিন্তু সেটা যে হওয়ার নয়– মমতাহীন মমতা সেটা আবারো প্রমাণ করেছেন।
‘নিজের ভোটের রাজনীতির কাছে ভিনদেশী বন্ধুত্ব গুরুত্ব পাবার কথা নয়, এবং তাই হয়েছে; মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা থেকে তিনি পানি দিতে পারবেন না,’ এভাবেই বাস্তবতাটা বর্ণনা করলেন এক সাবেক কূটনীতিক।
এতদিন তবু আশা ছিল, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু আশ্বাস দিয়েছে তাই তিস্তা ইস্যুতে একটা না একটা সমাধান মিলবে। এখন দেখা যাচ্ছে মমতা সরাসরি সেটা নাকচ করে দিয়েছেন, তারপরও বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও আশায় আছে কিংবা আশায় থাকার ভাণ করছে যে সমাধান একটা বের করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবারও দিল্লীতে বলেছেন, তিস্তা সমস্যার সমাধান হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন পর্যাীয় অতিক্রম করবে।
সাবেক কূটনীতিকরাও মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক পর্যাায় অতিক্রম করছে। সে কারণেই একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মূলতঃ সামরিক সহযোগিতা দিয়ে দু’ দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হলেও গত সাড়ে চার দশকে সেটা নিয়ে কোন পক্ষ আর উচ্চবাচ্য করতে না পারলেও এখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও দু’ দেশ সমঝোতা স্মারক সই করতে পেরেছে।
কিন্তু, তারা এটাও বলছেন: সহযোগিতার নতুন এ দিগন্ত ধূসর হয়ে যাচ্ছে তিস্তার কারণে। গত অর্ধযুগে তিস্তা নিয়ে দিস্তা দিস্তা লেখা হয়েছে, দু’ দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায় থেকে যেকোন পর্যায়ের আলোচনায় তিস্তা প্রসঙ্গ এসেছে, কিন্তু প্রয়োজনের সময় তিস্তা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পানি গড়ায়নি। এর আগে মমতার না-রাজিতে ড. মনমোহন সিং সরকার তিস্তা চুক্তি করতে পারেনি, জনপ্রিয় নরেন্দ্র মোদি সরকারও সেটা পারছে না।
মুখের কথা কিংবা টুইটারে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারা মোদি তার ভাষণে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এবং টুইটে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে তিনি এবং তার সরকার তিস্তা চুক্তি করতে খুবই আগ্রহী, চুক্তি না হওয়ার পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন দায় নেই। সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, তার এ অবস্থান সত্য না হলেও আপাতঃ চোখে সেটা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ তিনি এবং তার সরকার অত্যন্ত কৌশলে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন, এক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে পশ্চিম বঙ্গ সরকারই শেষ কথা বলবে।
আর সেটা আরো পরিস্কার করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধুত্বের মোড়কে মমতাকে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সামনে সরাসরি তার বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও হয়তো ভেবেছিল, সামনাসামনি মমতার সঙ্গে কথা হলে তার মন পাওয়া কিছুটা সহজ হবে। কিন্তু, তা-তো হয়ইনি বরং উল্টো তিস্তার বদলে তোর্সা এবং অন্য দুটি নদীর পানি নেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে মমতা বাংলাদেশকে একরকম শেষ কথাই বলে দিয়েছেন বলে সাবেক কূটনীতিকরা মনে করছেন।
তারা বলেন, এই শেষ কথাটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে জেনে রাখাটাই ভাল হত। তাহলে অন্য বিষয়ে দরকষাকষি সহজ হত বাংলাদেশের জন্য। মমতার মন গলাতে সরাসরি মমতার সঙ্গে বসে সরাসরি তার কাছ থেকে জানাটা বরং ভুলই হয়েছে বলে সাবেক কূটনীতিকদের কেউ কেউ মনে করছেন। আলোচনাটা আসলে আর কতদূর এগিয়ে নেওয়া যাবে সেটা নিয়েও তারা এখন সন্দিহান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন