ডিএনসিসির মেয়র ও ১৮ কাউন্সিলর নির্বাচন : মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ভোট গ্রহনের পরিকল্পনা
আইনী জটিলতার ঝূঁকি থাকলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র ও নতুন যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন কিছু আইনী পরিবর্তন ছাড়া ভোটের তফসিল ঘোষণা ঝূঁকিপূর্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আগামী রবিবার সকালে নির্বাচন কমিশন সভায় তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ওয়ার্কিংপেপার প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এর আগে কাজী রকিব কমিশনের আমলে অবিভক্ত ঢাকা সিটির নির্বাচন দীর্ঘদিন আইনী জটিলতায় আটকে ছিল। তফসিল ঘোষণার পরেও তারা ভোট করতে পারেনি। পরে ডিসিসি ভেঙ্গে দুটি করপোরেশন গঠন করা হলে দীর্ঘদিন পর ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিদ্যমান ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়।
ইসি সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নহƒরুল হুদা বর্তমানে শ্রীলংকা সফরে রয়েছেন। দেশে ফিরে আগামী ১৭ ডিসেম্বর তিনি কমিশন সভায় অংশ নিবেন। ওই বৈঠকে তফসিল নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। দেশত্যাগের আগে অবশ্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তফসিল ঘোষণার জন্য কার্যপত্র প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তবে শুধু মেয়র পদের উপ-নির্বাচন নয়, ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন করতে চায় ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ ওয়ার্ডের ভোট হবে কী-না এবং নতুন কাউন্সিলরদের পদের মেয়াদ কতদিন হবেন তা আইনে স্পস্ট করা নেই। এ বিষয়ে কমিশন সদস্যদের কেউ কেউ মনে করছেন আইন সংশোধন করে বিষয়টি স্পস্ট করেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন কাউন্সিলরদের পদের মেয়াদ স্পষ্ট করে দেয়া যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
তবে এসব কিছু ছাপিয়ে তফসিল ঘোষণার জন্য এখন নতুন দুটি সমস্যা সামনে দাড়িয়েছে ইসির সামনে। প্রথমত:ভোটার তালিকা আইনানুযায়ি প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারি হালানাগাদে নতুন ভোটারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আয়োজন করা হলে নতুন ভোটাররা তফসিল ঘোষণার সময় ভোটার না হলেও ভোটের দিনে তারা বৈধ ভোটার হিসেবে ভোট দেয়ার অধিকারী হবেন। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ভোটের আয়োজন পিছিয়ে মার্চে নিতে হতে পারে ইসিকে। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে এসএসসি পরীক্ষা সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে। সাধারণত ভোট কেন্দ্রও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ততা বিচারে একই সময়ে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয় না। যদিও অতীতে কমিশনের অনুরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ১৩, ১৫ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ১৫ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে দুই বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে ভোটের জন্য তিন দিন সময় ইসির হাতে থাকবে। দু’টি পরীক্ষা পেছালে চার দিন সময় পাবে। একইভাবে ২০, ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারিও এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। খসড়া তফসিল প্রস্তুতে ইসি সচিবালয়ে এসব বিষয়ে বিবেচনায় রাখছেন বলে জানা গেছে।
গত ১ ডিসেম্বর প্রয়াত ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হকের পদটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইনে এই পদে নব্বই দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এই হিসাবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট করতে হবে কমিশনকে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত দুই সিটির নির্বাচনে উত্তরে ৩৬টি ও দক্ষিণে ৫৭টি ওয়ার্ড ছিল। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ এ দুই সিটি করপোরেশনের আশপাশের আটটি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন ভেঙ্গে সিটি করপোরেশনভূক্ত করে চলতি বছরের ২৬ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে। প্রকাশিত গেজেটে দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ানোর ফলে বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ফায়দাবাদ, নলভোগ, ডিয়াবাড়ী, কামারপাড়ার বিভিন্ন মৌজা ঢাকা উত্তর সিটিতে এবং শ্যামপুর, কদমতলী, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, গজারিয়া, নন্দীপাড়ার বিভিন্ন মৌজা দক্ষিণ সিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
দুই সিটির নব-গঠিত এই ৩৬ ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা নির্বাচিত হলে কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন তা আইনে উল্লেখ নেই। আবার এই নির্বাচন না করলে বিদ্যমান আইনে সিটি করপোরেশন গঠনই অবৈধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এই ৩৬ ওয়ার্ডের যেহেতু গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এখন নির্বাচন না করে উপায় নেই। কারণ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে-মেয়র পদসহ করপোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নামে গেজেট প্রকাশ হলে কেবল করপোরেশন যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। মেয়র পদাধিকার বলে একজন কাউন্সিলর হিসেবে গণ্য হবেন।
সেই হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৩৬টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ১২টি। এই ৪৮টি ওয়ার্ডের সঙ্গে নতুন যুক্ত হচ্ছে ১৮টি সাধারণ ও ৬ টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। নতুন ও পুরাতন মিলে ৭২টি ওয়ার্ডের ৭৫ ভাগ পূরণ করতে হলে নূন্যতম ৫৪টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা দরকার। বর্তমানে উত্তর সিটিতে ৪৮জন কাউন্সিলর রয়েছেন।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, গত আগষ্টে ঢাকার দুই সিটির নব-গঠিত ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনের আয়োজন করতে ইসিকে অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন এবং দুই সিটিতে ছয়টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে ইসিকে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন