পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন খতিয়ে দেখা হবে
ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশবিরোধী এ কেমন আজব নালিশ!
ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ জন নারী-পুরুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সংখ্যালঘুদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারা ট্রাম্পের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে পেশ করেন নিজেদের অভাব-অভিযোগ।
এ সময় নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে প্রিয়া সাহা নামে এক নারী ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, এখানে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশে তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবু তিনি আইনের সুরক্ষা পাননি। ট্রাম্পের কাছে অভিযোগের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর চলছে তীব্র সমালোচনা। ভিডিওতে দেখা যায়, গত বুধবার বিভিন্ন দেশের ধর্মের নামে নিপীড়িত হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের ওভাল অফিসে দেখা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় সেখানে এক নারী নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাম্পকে বলেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশেই থাকতে চাই।’ এ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেন।
ট্রাম্পের হাতে হাত রেখে তিনি বলেন, ‘এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমাও দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এর কোনো বিচার হয়নি।’ ওই নারীর বক্তব্যের পর ট্রাম্প বলেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে?’ তখন একটু ভেবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন। তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়।’ এ বক্তব্য সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সবাই তীব্র সমালোচনা করে দাবি করেন, দেশে ফেরার পর এই নারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। কোথা থেকে তিনি এই আজব তথ্য পেয়েছেন? যদি সত্য না হয় তাহলে কী কারণে তিনি বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের নামে এমন মিথ্যাচার করলেন। শুধু তাই নয়, তার পরিচয়ও সামাজিক গণমাধ্যমে উঠে আসে। জানা যায়, ওই নারীর নাম প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার স্বামীর নাম মলয় সাহা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। প্রিয়া সাহার বাড়ি পিরোজপুরে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব সময় সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক লেখালেখি করেন। নাজিরপুর উপজেলার চরবানিরীর মাটিভাঙায় তার গ্রামের বাড়ি।
স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সম্পদ নিয়ে তার বিরোধ ছিল। কয়েক বছর আগে তিনি তার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। কিন্তু এ মুহূর্তে কী কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে এভাবে বাংলাদেশের নামে আজগুবি তথ্য দিয়ে নালিশ করলেন, তা অনেকের কাছে রহস্যময়। কারণ, এতে শুধু দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধও করেছে। তার এমন অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করে আরও বলা হচ্ছে, তিনি কোন তথ্যের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গুম হওয়ার পরিসংখ্যান দিয়েছেন? যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় তিনি এমন মিথ্যাচার করেছেন বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিচার ও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানানো হয়।
সূত্রমতে, প্রিয়া সাহার সঙ্গে অনেক নারী নেত্রীর সম্পর্কও ভালো। সরকারি গাড়িতে চড়ে তিনি বিমানবন্দর যান। যাওয়ার আগে একাধিক প্রভাবশালী নেত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। প্রিয়া সাহাকে নিয়ে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, সরকারের ভিতরেও তোলপাড় চলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। তার গ্রামের বাড়িতে কী হয়েছিল তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রিয়া সাহার অভিযোগ খতিয়ে দেখবে সরকার :
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের নারী প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘুদের নিয়ে কেন অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল রাতে তিনি তার ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
শাহরিয়ার আলম বার্তায় বলেন, ‘আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের এনজিওদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশ গুপ্তর মতো মানুষেরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি।’ এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন, তথ্য সঠিক নয় :
এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রর্বাট মিলার বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রিয় সাহা ট্রাম্পের কাছে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা সঠিক নয়। গতকাল বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। মিলার বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন