জোটে আছে ভোটে নেই
ভোটের আগে জোটে জোটে চলছে ভাঙা গড়ার খেলা; সারা বছর রাজনীতির মাঠে যাদের তেমন কোনো খবর থাকে না, সেই ছোট দলগুলোরও এখন দারুণ কদর।
পরিসংখ্যান বলছে, সংসদ নির্বাচন এলে প্রধান দলগুলোকে ঘিরে জোট বাঁধার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাতে দল ভারী হলেও ভোট ব্যাংকে বড় কোনো প্রভাব পড়ে না।
কে কার সঙ্গে জোট গড়বে সেই আলোচনায় দর কষাকষির চলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে। অবশ্য প্রতিবারই ভোট শেষে দেখা যায়, হাতে গোণা কয়েকটি দলের বাইরে অন্যদের আসন শূন্য; ভোটের অংকও নগণ্য।
পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া শতাধিক রাজনৈতিক দলের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একটি নির্বাচনে সব মিলিয়ে লাখের বেশি ভোট পেয়েছে এরকম দল আছে ১৬টি
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নিয়েছিল। সেখানে একটি দল একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিল ২৫টি।
দেড় যুগ পর ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৮টি দল। তাতে একটি দল এক আসনে অংশ নিয়ে ভোট পায় ২৯৭টি।
গত আড়াই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম দলের অংশগ্রহণ ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বানে। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১২টি দলের মধ্যে পাঁচটি দলেরই মোট ভোট দশ হাজারের নিচে।
কখনও কখনও দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের অংকে অনেক দলীয় প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকেন। তাদের অধিকাংশই দলছুট বা বিদ্রোহী প্রার্থী।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরুর পর এখন অনিবন্ধিত কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তবে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের মার্কা নিয়ে অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীও ভোট করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিবন্ধিত দলের ওই প্রার্থী কাগজে কলমে মনোনয়নদাতা নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে জোটের পরিসর বাড়িয়ে ভোটের মাঠ চাঙ্গা রাখতেই বড় দলগুলো ছোট দলগুলোকে কাছে টানে। নিবন্ধন থাক বা না থাক, কর্মী-সমর্থক যত কমই হোক, জোটের রাজনীতির মূল কথা হল দল ভারী দেখিয়ে ভোটারদের নজর কাড়া।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটসঙ্গীরা মিলিয়ে মোট ১২টি দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।
অধিকাংশ দলের ভোট বর্জনের ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। আরেক জোটশরিক জাতীয় পার্টি অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আলাদা ভোট করে।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের ৭৯.১৪ শতাংশ ভোট। আর তাদের তিন শরিকের ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টি ২.০৬ শতাংশ, জাসদ ১.৭৫ শতাংশ এবং তরিকত ফেডারেশন ০.৩ শতাংশ। বিএনপির বর্জনে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে পায় ১১.৩১ শতাংশ ভোট।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসন শেষে ২০০৮ সারের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৮টি দল।
এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ চৌদ্দদলীয় মহাজোট গঠন করে, অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী দল সহ চারদলীয় জোট গঠন করে।
নিবন্ধিত দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন মহাজোটের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি জোটে থাকলেও ভোট করে নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকে।
অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নিবন্ধিত দল বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আরেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ভোট করে নিজেদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায়।
নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ, জাসদ ০.৬ শতাংশ, ওয়ার্কার্স পার্টি ০.৩ শতাংশ ভোট পায়। আর নিজেদের প্রতীকে ভোট করা জাতীয় পার্টি পায় ৭.০ শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে বিএনপি ৩৩.২ শতাংশ, ইসলামী ঐক্যজোট ০.১ শতাংশ, বিজেপি ০.১ শতাংশ ভোট পায়। আর জোটের আরেক শরিক জামায়াতে ইসলামী পায় ৪.৬ শতাংশ ভোট।
মূল দুই জোট মিলে নিবন্ধিত দল ১৯টি
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটভুক্ত ১৯টি দল। বাকি ২০টি দল কোনো জেটে নেই।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটে থাকা অন্য নিবন্ধিত দলগুলো হল- বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি ও জাতীয় পার্টি।
এক সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ‘ইসলামী মূল্যবোধের’ নিয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’, সংক্ষেপে ইউএনএ গঠিত হয়েছে সম্প্রতি। এ জোটের শরিকদের কেউ নিবন্ধিত নয়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা নিবন্ধিত অপর দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জাগপা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
আরেক নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ ন্যাপ সম্প্রতি এ জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
গত বছরের এপ্রিল মাসে বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা, রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। বি চৌধুরী হন জোটের চেয়ারম্যান, মান্না হন সদস্য সচিব। শুরুতে আবদুল কাদের সিদ্দিকী এই জোটে থাকলেও পরে সরে যান।
অন্যদিকে গণফোরাম সভাপতি কামাল কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন, যার সদস্য সচিব হন মোস্তফা আমিন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে কিছু দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন চালাতে একমত হন বি চৌধুরী ও কামাল। কিন্তু ১৩ অক্টোবর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে এক জোটের ঘোষণা আসে। এই জোটের নাগরিক ঐক্যের নিবন্ধন নেই ইসিতে।
জোটের স্বীকৃতি তফসিলের তিন দিনের মধ্যে
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলের জোট হলে তাতে ইসির করার কিছু নেই। তবে নিবন্ধিত দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে হলে কমিশনকে জানাতে হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, প্রার্থীদের সংরক্ষিত প্রতীকের বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং অফিসার। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তফসিল ঘোষণার পরই জোট গঠন ও প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে।
তফসিল ঘোষণার পর তিন দিনের মধ্যে জোটভুক্ত দলের প্রতীক নিয়ে কমিশনের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত দলের যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে একটি প্রতীক দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যে দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চায় সে দলের প্রধানের অনুমতিসহ আবেদন কমিশনে দিতে হবে।
দলভিত্তিক ভোটের হিসাব
[তারকা চিহ্নিত দলগুলো নিবন্ধিত]
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন