যা যা সুবিধা পাবেন
কারাগারে ফাতেমাকে নিয়ে খালেদা জিয়া ভালো আছেন
কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভালো আছেন।
ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত আজ বৃহস্পতিবার জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (এআইজি প্রিজন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাজধানীর পুরনো ঢাকার বকসি বাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে রায় ঘোষণার পর বেলা তিনটার দিকে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কড়া পুলিশ পাহারায় কারাগারে নেওয়া হয়।
তিনি জানান, ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে ডে-কেয়ার সেন্টার ভবনে তাকে রাখা হয়েছে।
একই মামলায় আদালত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন ফাতেমা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে সাজা ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেখানে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকছেন ফাতেমা বেগম (৩৫)। ফাতেমা দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন।
আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে। তিনি অনেক রোগে অসুস্থ। তাই আমরা আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম গৃহকর্মী ফাতেমাকে সঙ্গে দেওয়ার জন্য। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করেছেন। কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই সেলে থাকবেন ফাতেমা বেগম।
গুলশানের বাসা থেকে ফাতেমাকে নিয়ে একই গাড়িতে করে আদালতে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। রায় পড়ার সময়ও তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ফাতেমা। আদালতের রায় পড়া শেষ হলে বিচারকরা কক্ষ ত্যাগ করেন। এরপর খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে, পরিচর্যার জন্য ফাতেমাকে তাঁর সঙ্গে কারাগারে রাখার আবেদন জানান আইনজীবীরা। আবেদনে স্বীকৃতি দিয়ে এ বিষয়ে একটি আবেদনপত্র দেওয়ার জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতের স্বীকৃতি পেলে, ফাতেমাকে নিয়ে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারের দিকে রওনা দেন খালেদা জিয়া।
সানাউল্লাহ মিয়া জানান, মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকেও কিছুদিনের জন্য পারিবারিক জীবন থেকে দূরে থাকার মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। রায়ের পর কারাগারে যেতে হলে গৃহকর্মী ফাতেমাকে সঙ্গে নেওয়ার আবেদন জানাবেন বলেও জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ি চড়ে ‘স্পেশাল জেলে’ খালেদা জিয়া
প্রায় দশ বছর পর আবারও কারাগারে যেতে হল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে; তবে এবারই প্রথম তাকে দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি হতে হল।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক দশক আগের এক মামলায় আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওই রায়ের পরপরই তাকে এ পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরনো ভবনে, যেখানে তিনিই এখন একমাত্র কয়েদি।
এইচ এম এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। সে সময় ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল সড়কের বাড়িতেই তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জরুরি অবস্থার মধ্যে ওই বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসনকে। সে সময় সংসদ এলাকার একটি ভবনকে ‘উপ কারাগার’ ঘোষণা করে ১ বছর ৭ দিন তাকে সেখানে রাখা হয়। পাশেই আরেকটি বাড়িতে বন্দি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
বাহাত্তর বছর বয়সী খালেদাকে এবার যেখানে রাখা হয়েছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘বিশেষ কারাগার’।
আর বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়া একজন বিশেষ ব্যক্তিই বটে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মধ্যে এরশাদের পর কেবল তাকেই দুর্নীতির দায় নিয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী, এরশাদকে এ কারাগারেই রাখা হয়েছিল।
নাজিম উদ্দিন রোডে ২২৮ বছরের পুরনো ঠিকানা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী ওই ভবনে এখন আর কোনো বন্দিকে রাখা হয় না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের কয়েকটি বছর কেটেছে এ কারাগারে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এখানেই সংঘটিত হয় জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেসব ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণ করে যাদুঘর করার প্রক্রিয়া চলছে এখন।
কারা অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “খালেদা জিয়াকে আপাতত পুরাতন কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে রাখা হয়েছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন এটাকে ‘স্পেশাল জেল’ বলছি।”
এই কারাগার ভবন পুরনো হলেও এখনও তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি জানিয়ে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে এখনও প্রশাসনিক কাজ চলে।
কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরনো কারাগারের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ এক সময় একজন কারা কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন। সামনে একটি খোলা জায়গাও আছে। তবে যে কোনো সময় তাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে।
খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাকে কোথায় রাখা হবে- সেই প্রশ্নে দুদিন ধরেই পুরনো কারাগারের ওই কক্ষের কথা ঘুরে ফিরে আসছিল। ওই কক্ষ সাফ সুতোর করার খবরও আসছিল সংবাদমাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে থেকেই পুরনো কারাগার ঘিরে নাজিমুদ্দিন রোডের প্রবেশমুখগুলোতে কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। পুরনো কারাগারের প্রধান ফটক থেকে দুই পাশে একশ গজ দূরে ব্যারিকেড বসানো হয়। সড়কের দোকানপাট সকাল থেকেই ছিল বন্ধ।
রায় ঘোষণার পর বিকাল পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে বের করে কারাঅধিদপ্তরের মূল ফটকের বিপরীতে মসজিদ এবং উপ কারামহাপরিদর্শক কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ‘স্পেশাল জেলে’ নেওয়া হয়।
বকশীবাজারের বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস থেকে হাঁটা দূরত্বে পুরনো কারাগার ভবনে খালেদাকে নেওয়া হয় উপ-কমিশনার ফরিদা রহমানের গাড়িতে করে। চারপাশ থেকে ওই গাড়ি ছিলেন সশস্ত্র পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। সামনে ও পেছনে আরও কয়েকটি গাড়ি ছিল।
ফরিদা রহমান বসেছিলেন গাড়ির সামনের আসনে। আর খালেদা জিয়া ছিলেন পেছনের আসনে, একা।
উপ-কমিশনার ফরিদা বলেন, গাড়িতে থাকলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।
অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আদালত থেকে কারাগারে যাওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়া সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করেছেন। অবশ্য রায়ের পরপরই আদালতে তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।”
একজন জানান, খালেদা জিয়ার দেখভাল করার জন্য কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে পাঁচজন নারী কারারক্ষীকে নাজিমউদ্দিন রোডে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ডেপুটি জেলার পদ মর্যাদার।
দুপুরের দিকে কারাগারের একটি গাড়িতে করে লেপ তোষকও নিতে দেখা যায় কারাগারের ভেতরে।
কারাগারের সামনের দোকানগুলো কবে খুলবে জানতে চাইলে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার ইব্রাহিম খান বলেন, “আগামীকালই খুলতে পারবে।”
রায়ের পর বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার ‘বয়স, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান’ বিবেচনা করেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে।
“তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বড় একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। … সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে জেলকোড অনুযায়ী সব সুবিধাই পাবেন।
কারাগারে যা যা সুবিধা পাবেন খালেদা
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন-১) মর্যাদা পাবেন খালেদা জিয়া।
কারা বিধির ৬১৭ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ডিভিশন পাওয়া কয়েদিরা একটি পত্রিকা ও টেলিভিশন দেখার সুযোগ পান। বাড়তি পত্রিকা চাইলে কিনে নিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী বই পড়ার সুযোগও তারা পান। সাত দিনে একবার চিঠি লিখতে পারেন, তবে তা কারা কর্তৃপক্ষের ‘সেন্সরের’ মধ্যে দিয়েই যাবে।
কারা কর্মকর্তারা বলছেন, মর্যাদা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে ‘উন্নত মানের’ খাবার সরবরাহ করা হবে। এক্ষেত্রে তার পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রথম শ্রেণির বন্দিদের জন্য কারাগারে চিকন চালের ভাতের সঙ্গে প্রতিদিনই মাছ বা মাংস, সবজি, ডালের ব্যবস্থা থাকে। চা বা কফিও চাহিদামাফিক দেওয়া হয়। সকালের নাস্তা দেওয়া হয় পছন্দ অনুযায়ী, বিকালের নাস্তায় থাকে ফলমূল।
কারাগারের সরবরাহ করা খাবারের বাইরে নিজের খরচে বাড়তি খাবার আনাতে পারেন তারা। তবে সেই খাবার কিনতে হয় কারাগারের ক্যান্টিন থেকে।
স্বজনরা মাসে একবার প্রথম শ্রেণির কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তখন তারা শুকনো খাবার ও ফল দিয়ে আসতে পারেন।
কারাগারের যে কক্ষে খালেদা জিয়া থাকছেন, সেখানে ‘উন্নতমানের’ চেয়ার-টেবিল, খাট, নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য আসবাবপত্র ও মশারি দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম শ্রেণির বন্দিদের জন্য টয়লেটে কমোডের ব্যবস্থাও থাকে বলে কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন