সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

কলারোয়ার সীমান্ত সমস্যা ও সম্ভাবনা

১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় বৃটিশ শাসন ও শোষণ। সেই থেকে ভারতবাসি মুক্তির প্রহর গুনতে থাকে। বাংলা তথা ভারতবর্ষের জনগণ ক্রমান্বয়ে বৃটিশদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সুসংহত করতে থাকে। বৃটিশরা বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহীদের উপর চালায় নির্যাতনের স্টিম রোলার। ১৯০ বছর পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বৃটিশরা ভারত বর্ষ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। সাথে সাথে ভারতবর্ষের পূর্বাকাশে স্বাধীনতার লাল টুকটুকে সূর্যটা প্রায় ১৯০ বছর পর উদিত হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

মানুষ বুদ্ধি বৃত্তি সম্পন্ন প্রাণি। তাই পৃথিবীতে মানুষের অনেক সম্পদ রয়েছে। মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় তার সবচেয়ে বড় সম্পদ কী? এর উত্তর হবে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার চেয়ে বড় সম্পদ মানুষের আর কিছু নেই। মানুষ যে কোন মূল্যে তার স্বাধীনতা অর্জনে বা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম সম্ভব নয়, আর তাই ভারত পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পাকিস্তানের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামক অংশটি বৃটিশ শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হলেও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুক্ত হতে পারিনি পশ্চিম পাকিস্তানীদের শাসন ও শোষণ থেকে। আর তাই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের সকল শক্তি দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। যার সীমান্ত ১৯৪৭ সালেই ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের যে সীমান্ত নির্ধারিত ছিল সেই সীমান্তই থেকে যায়। বাংলাদেশের এ রকমই একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা কলারোয়া।

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত কলারোয়া উপজেলার অবস্থান। এই উপজেলাটি ১২টি ইউনিয়ন ১১৭টি মৌজা ও ১৫৩ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এই উপজেলার উত্তরে যশোর জেলার শার্শা, ঝিকরগাছা ও মনিরামপুর উপজেলা, পূর্বে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫নং কেড়াগাছি, ৬নং সোনাবাড়ীয়া এবং ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়ন ভারত সীমান্ত ঘেষা। এই তিনটি ইউনিয়ন ভারতের সাথে ১৭ কি. মি. সীমান্ত দ্বারা বিভক্ত। এর মধ্যে কেঁড়াগাছি, ভাদিয়ালী, রাজপুর,চাঁন্দা ও বড়ালী এই গ্রামগুলি সোনাই নদী, চান্দুড়িয়া ইছামতি নদী দ্বারা এবং হিজলদী ও সুলতানপুর সমতল ভূমিতে সীমানা পিলার দ্বারা চিহ্নিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সীমান্তের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় চোরাচালান কম বেশি হয়। সে দিক দিয়ে কলারোয়া উপজেলার এই সীমান্তও এর ব্যতিক্রম নয়। শুধু যে সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের লোকজন চোরা চালানের সাথে জড়িত তা কিন্তু নয়। এ সীমান্তগুলো আন্তর্জাতিক চোরা চালানের রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে স্থানীয়ভাবে এই অঞ্চলের চোরা চালানের রকমফের আছে যেমন ৭০ এর দশকে ধান, পাট, চাল, গরু, ছাগলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভারতে পাচার হত এবং ভারত থেকে শাড়ি, চুড়িসহ বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী সামগ্রী আসত। আবার ৮০এর দশকে পুরানো প্যান্ট-শার্ট (নিক্সন মার্কেটের) ভারতে পাচার হত এবং ভারত থেকে ধান, চাল, ডাল, গরু, পেয়াজ আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসত। আবার ৯০ এর দশক বা তার পরবর্তী সময়গুলোতে ব্যাপক পরিমানে গরু ও চিনি ভারত থেকে আসত। এছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল বিশেষ করে বরিশাল, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন ভারতে স্থায়ী বসবাসের জন্য একশ্রেণির দালালের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করতো, যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় ‘ধুড়’ বলা হতো। এভাবে দেখা যায় একেক সময় একেক রকম পণ্য সামগ্রীর চোরাচালান হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সর্বাধিক চোরা চালানকৃত পণ্য হল ফেন্সিডিল, হেরোইনের মত মারাত্মক মাদকদ্রব্য যা জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এছাড়াও সেই পাকিস্তান আমল থেকে এখনও পর্যন্ত খুব গোপনে এদেশ থেকে সোনা ভারতে পাচার হয় প্রায় গণমাধ্যমে এ সমস্ত খবর প্রচার হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ সমস্ত চোরাচালানের সাথে জড়িত কারা? সাধারণত দেখা যায় স্থানীয় অভাবী বেকার নারী পুরুষ যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘পাছিং ম্যান’ বা শ্রমিক। এরা কেবলমাত্র মজুরী পায় কিন্তু বিপজ্জনক কাজটি করে। এই শ্রেণির লোকজন এটিকে খারাপ কাজ মনে করে না তারা ভাবে এটা একটা ব্যবসা। আর এক শ্রেণির লোক যাদের কিছু অর্থলোভী স্থানীয় ও অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন শহর এবং ভারতীয় যারা অর্থের যোগান দেয়, এদেরকে বলা হয় গডফাদার বা মহাজন। এই মহাজন শ্রেণি প্রথমোক্ত শ্রেণির নারী পুরুষদের ব্যবহার করে প্রচুর কালো টাকার মালিক হয় এবং এরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। তবে একথা সত্য যে, স্থানীয় অর্থাৎ সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া চোরা চালান সম্ভব নয়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বৃটিশ আমল থেকে ৯০ দশকের শেষ পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলো ছিল চরম অবহেলিত। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চরম অবহেলিত। তাছাড়া জনসংখ্যার তূলনায় কর্মসংস্থানের অভাব। একমাত্র কৃষিকাজ ছাড়া এই এলাকার লোকের জীবন জীবিকার আর কোন উৎস নেই। যে কারণে তারা জড়িয়ে পড়ে চোরা চালানের মত খারাপ কাজে। সরকারি দপ্তরের তথ্য সূত্র থেকে জানা যায় সীমান্তবর্তী ৩টি ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৬৬,৪৩৭ জন এবং মোট ভূমির পরিমান ৬৩৮৭.৮৯ হেক্টর। মাথাপিছু ভূমির পরিমান- ০.০৯৬ হেক্টর। আরো একটু বিশ্লেষণে দেখা যায় সীমান্ত সংলগ্ন ৮টি গ্রামের অধিবাসীদের মাথাপিছু জমির পরিমান (মৌজা অনুযায়ী) চান্দুড়িয়া ০.০৪ হেক্টর, সুলতানপুর ০.০৯ হেক্টর, হিজলদী ০.১২ হেক্টর, বড়ালী ০.১১ হেক্টর, চাঁন্দা ০.১৫ হেক্টর, রাজপুর ০.২০ হেক্টর, ভাদিয়ালী ০.০৫ হেক্টর এবং কেঁড়াগাছি ০.০৬ হেক্টর। এ বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, এ এলাকার মানুষ জীবন জীবিকার প্রয়োজনে নিজেদের অজান্তেই চোরাচালানের মত গর্হিত কাজে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং আমরা যদি এ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে দেখা যাবে চোরাচালান একেবারে নির্মুল না হলেও অনেকাংশে কমে যাবে এবং পথভ্রষ্ট মানুষগুলো পাবে ভাল পথের ঠিকানা।

এখন যদি আমরা এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা ভাবি তাহলে দেখতে পাবো এ এলাকায় লুকিয়ে আছে কর্মসংস্থান সুবিধার এক অফুরন্ত সম্ভাবনা। কলারোয়া উপজেলার এই অঞ্চলকে বলা হয় শস্যভান্ডার। যদি বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষাবাদ এবং ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এলাকার কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী তাদের উৎপাদিত ফসলের পরিমান বৃদ্ধিসহ সাথে সাথে ন্যায্য দাম পাবে ফলে চোরা কারবারের মত জঘন্য পেশাকে বেছে নেবে না। এ এলাকায় করলা, পটল, আলুসহ প্রচুর পরিমানে সব্জি চাষ হয় তাছাড়া উদ্যান ফসল যেমন আম চাষ হয় ২৬০.০০ হেক্টর এবং কুল চাষ হয় ১০০.০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে মধ্যসত্ত্বভোগিদের দৌরত্বে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ইদানিং এই সমস্ত ফসল চাষ করে কৃষকরা হচ্ছে হতাশাগ্রস্ত। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিগত অথবা সরকারি উদ্যোগে এই এলাকায় উন্নত বিশ্বের মত ফুড প্রসেসিং জোন এবং ফল-মুল ও সব্জি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে পারি তাহলে একদিকে যেমন এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে বিরাট ভূমিকা।

যেহেতু এ এলাকায় কৃষিপণ্য ছাড়া অন্য কোন শিল্প কারখানা গড়ে উঠার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং কাঁচামালের যোগান নেই সেক্ষেত্রে আমরা আরও একটি বিষয় ভাবতে পারি। আমরা জানি অবিভক্ত ভারতে চান্দুড়িয়ার ইছামতি নদী ব্যবহার করে কলকাতার সাথে ধান, পাট, আখের ও খেজুরের গুড়, পিতল, কাঁসা ইত্যাদি পণ্যের ব্যবসা চলত। সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যদি আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে ইছামতি নদী পুন:খনন কিংবা চান্দুড়িয়া- ঝাউডাঙ্গা (ভারত) এবং ভাদিয়ালী-হাকিমপুর (ভারত) স্থল বন্দর স্থাপন করা যায় তাহলে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া সহ কৃষি পণ্যের অবাধ ব্যবসা বাণিজ্যের একটা নতুনদ্বার উন্মোচিত হবে এবং আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করি।

লেখক: প্রধান শিক্ষক, সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারোয়া, সাতক্ষীরা

একই রকম সংবাদ সমূহ

১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন

‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি

সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন

  • কলারোয়ায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমন
  • কলারোয়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
  • কলারোয়ায় ‘মিনা দিবস’ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
  • কলারোয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • কলারোয়ায় দলীলি সম্পত্তি জবরদখল ঠেকাতে সংবাদ সম্মেলন
  • ‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
  • কলারোয়ার বেত্রবতী হাইস্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ শীর্ষক স্মৃতিচারণ
  • কলারোয়ায় মন্দিরে মন্দিরে দূর্গাদেবীর আবির্ভাব ঘটাতে চলছে রং-তুলির আচঁড়
  • কলারোয়ার জয়নগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠন
  • সংবাদ প্রকাশের পর আপডেট হলো কলারোয়া প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য
  • কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সভা অনু্ষ্ঠিত
  • কলারোয়ায় ১নং সীমান্ত পিলার এলাকা পরিদর্শনে ভূমি দপ্তরের বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ কর্তারা