বন্ধ হচ্ছে না শিক্ষা বানিজ্য!
এসএসসি’র ফরম পুরণে কিছু স্কুলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ কলারোয়ায়
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফরম পূরনের নামে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়াগেছে। এসব বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। আর এ শিক্ষা বানিজ্যের কারনে গরীব শিক্ষার্থীর অবিভাবকরা গরু, ছাগল বিক্রি এমনকি সমিতি (এনজিও) থেকে টাকা উত্তোলন করে বিদ্যালয়ের চাহিদামত বাড়তি টাকা দিয়ে ফরম পুরন করতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষারা ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা না নেয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডের কঠোর নির্দেশনা প্রদান এবং ফরম পুরনে টাকা নির্ধারন করার পরও বিদ্যালয়গুলি অতিরিক্ত টাকা আদায় করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়ী করে অবিলম্বে কঠোর মনিটরিং এবং অতিরিক্ত টাকা নেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এ প্রতিনিধিরা।
উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এ বছর ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীপ্রতি সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১৫৫০ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ফি সর্বোচ্চ ১৩৭০ টাকা। এছাড়া সব বিভাগের জন্যই বিলম্ব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।
কিন্তু উপজেলার বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে ফরম পুরনের জন্য পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর ফলে গরীব শিক্ষার্থীদের অবিভাকরা মোটা অংকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে তাদের শেষ সম্বল গরু, ছাগল বিক্রি করে সন্তানের ফরম পুরনের টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের অবিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করে জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ। ফরম পূরণের ফি বোর্ড নির্ধারণ করে দিলেও স্কুলগুলো তার তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বাড়তি টাকা আদায় করছে। অনেক স্কুলে বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের নামেও টাকা ও টেস্ট পেপারস স্কুল থেকেই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম্পিউটার বিল, ইন্টারনেট বিল, ঢাকা যাওয়া আসার ভাড়া, ঝাড়ুদারের জন্য বেতন, মিলাদসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে এসব বাড়তি টাকা নিচ্ছে।
সরজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ছলিমপুর এ কে খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছলিমপুর মহিলা দাখিল মাদরাসার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফরম পুরনে ২৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছলিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে (পরীক্ষার আগে) আরো ২৫০০ টাকা দিতে হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছলিমপুর একে খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহিলা দাখিল মাদরাসার অধিকাংশ এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অবিভাকরা জানান, অবৈধ ভাবে আমাদের নিকট থেকে ২৫০০ টাকা ফরম পুরনের জন্য নেয়া হয়েছে। কিন্তু স্কুল থেকে কোন রশিদ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা স্কুলে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকরা জানান।
তারা আরো বলেন, এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষরকারী ২০/২৫ জন শিক্ষার্থীকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে না জানানোর জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা তাদেরকে নিষেধ করছেন। এমনকি অভিযোগ দিলে স্কুলে না পড়ানো ও পরীক্ষার সময় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী এসব পরীক্ষার্থীরা।
এছাড়া উপজেলার অধিকাংশ মাদরাসা ও বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার একাধিক এসএসসি পরিক্ষার্থী জানায়, ফরম পুরনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে কিন্তু স্কুল থেকে টাকা নেওয়ার কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না। আবার অনেক স্কুলে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে রশিদে টাকার অংক লিখে দেওয়া হচ্ছে।
তারা বলেন- এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা জানলেও সবাই নিরব ভুমিকায় থাকছে। এসব পরীক্ষার্থীদের দাবি এ বিষয়ে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন না টাকার অভাবে অনেক ছাত্র, ছাত্রী পড়ালেখা বন্ধ করে দেবে বলে তারা মন্তব্য করে।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ফি নির্ধারন করলেও উপজেলার বিদ্যালয়গুলি কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। তারা এ বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা এবং সংশ্লিষ্ঠ স্কুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে ছলিমপুর একে খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ হেল বাকী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। তবে সহকারি প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুই বলতে পারবো না। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক (জাতীয় পার্টি) সে জন্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন।
ছলিমপুর মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা আলী বকস এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: আমানুল্লাহ আমান জানান, ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি নেয়ার জন্য উপজেলার সকল স্কুলের শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছি।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ জানান, অতিরিক্ত ফি নেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ড থেকে ফি নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে, স্কুল কতৃপক্ষ বোর্ড নির্ধারিত ফি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরন করবে। তবে উপজেলার অধিকাংশ স্কুলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, এটা আমি জানিনা। আপনারা উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার প্রধান শিক্ষকদের নিকট যোগাযোগ করে জেনে নিন কোন স্কুল কত টাকা নিচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন