আনসার-ভিডিপি’র জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী
আমরা কারও কাছে মাথা নিচু করে চলবো না
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারও কাছে মাথা নিচু করে চলবো না, মাথা উঁচু করে চলবো। তাই আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরমুখাপেক্ষী হয়ে নয়।”
এই বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রশিক্ষণ শুধু নিজেদের না, গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকেও আপনারা আত্মমর্যাদাশীল হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে আনসার-ভিডিপিকে সম্পৃক্ত করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
“আপনাদের যে ট্রেনিং আছে, এই ট্রেনিং কাজে লাগিয়ে এই সমিতিগুলোর সাথে আপনারা যদি সদস্যভুক্ত হন, তাহলে আমি মনে করি, বাংলাদেশকে আমরা অতি দ্রুত দারিদ্রমুক্ত করতে সক্ষম হব,” বলেন সরকারপ্রধান।
কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবসম্পদকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলাকে এই বাহিনীর একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ হিসাবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এ বাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানসম্মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বর্তমানে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে।
এছাড়া আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারাদেশে ‘এক বিশাল পরিবর্তন’ সূচনা করেছে।
আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণের সম্মিলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ ব্যাংক কাজ করছে।
গাজীপুরের সফিপুরে আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানে বাহিনীর সদস্যদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস কেবল বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
“আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকাসক্তিতে না জড়ায়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায়; এ ব্যাপারে আপনাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতসনতা সৃষ্টি করা এবং এটা প্রতিরোধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বিশেষ ভূমিকা আপনরা রাখবেন, সেটাই আমরা চাই।“
আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন করেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহসান খান এবং প্যারেড কমান্ডান্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এ সময় সরকারপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন।
কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য আনসার সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি নয় থেকে ছয় বছরের পূর্ণতা সাপেক্ষে স্থায়ী করার খসড়া আইনটি অনুমোদন দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে আইনটা হয়ে যাবে। আপনারা ছয় বছরে স্থায়ীত্ব পাবেন। কেবিনেটে অনুমোদন হয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ আমরা পাস করে দেব।”
আনসার-ভিডিপিকে ‘মাটি ও মানুষের বাহিনী’ হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জরুরি প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এ বাহিনী বার বার উৎকৃষ্ট প্রমাণ রেখেছে।”
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে ১২ জন আনসার সদস্যের গার্ড অফ অনার দেওয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্ববৃহৎ ও সুশৃঙ্খল এ বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের প্রয়োজনে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।”
মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৬৭০ জন শহীদকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ বাহিনীর স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
“তাদের কাছে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ছিল, সে রাইফেলই মুক্তিযুদ্ধে মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন রজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা প্রতিরোধে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা ‘বিরাট’ ভূমিকা পালন করেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
“বিশেষ করে অপারেশন রেলরক্ষা; এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল,” বলেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনসার সদস্যদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রতিটি নির্বাচনেই আপনারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা অপরিসীম।”
শিল্প কারখানা, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, কূটনৈতিক পাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনাদের সুযোগ-সুবিধা প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অস্থায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার, হিল আনসার ও ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রীদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, খুলনা ও রাঙ্গামাটিসহ পাঁচ জেলায় আনসার ব্যাটিলিয়ন সদর দপ্তরের উদ্বোধন করেন।
এরপর তিনি কেক কাটেন এবং আনসার সদস্যদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক নাটিকা দেখেন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে রচিত গান শোনেন।
প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের নির্মিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের স্টলও পরিদর্শন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন