আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ব্রিটিশ মন্ত্রীকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে জেরেমি হান্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক হয়।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেরেমি হান্ট জানান, তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করেন। জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিত নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে সমস্যাটা কোথায়, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান জেরেমি হান্ট। রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে চুক্তি হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন তাকে বলেন, চুক্তি করলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে বলে অভিযোগ আছে, এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে কিনা- তা জানতে চান জেরেমি হান্ট। জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
শান্তি এখনও অধরা:
জাতিসংঘ সদর দফতরে নেলসন শান্তি সম্মেলনে বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তির জন্য বিশ্ব নেতাদের সব বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে হবে। শান্তি এখনও অধরা, তাই সব পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলতে হবে।
সোমবার নিউইয়র্ক সময়সকালে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলননে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে, সহনশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে। বৈষম্য ও শোষণ থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় সন্ত্রাসীদের অর্থ ও অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধের জন্য বিশ্বনেতাদের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে মানবাধিকার উন্নয়নে ও সুরক্ষার জন্য শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতির চর্চা করুন। মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, যার জন্য ম্যান্ডেলার মতো নেতারা লড়াই করেছিলেন, তা এখনও সুরক্ষিত নয়। বিশ্বের অনেক অংশে মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। বর্ণবাদ এবং অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ বৈষম্য, জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি, অত্যাচার, এমনকি জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে গণহত্যার শিকার হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতিগত নির্মূলের শিকার হওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জীবন রক্ষা করছে। আমরা দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ, মানবাধিকার উন্নয়ন ও উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করি। নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আমাদেরকে নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারে বিনিয়োগ ও তিন প্রস্তাব:
রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে আগের মত শিক্ষাসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না থাকে, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর এডুকেশন অব উইমেন অ্যান্ড গার্ল’ শীর্ষক এক আলোচনায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান এ আহ্বান জানান।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মিয়ানমারে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি, যেন এই শিশুরা সেখানে ফিরে যাওয়ার পর শিক্ষাসহ সব অধিকার পায়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত, সংঘাত, জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা শিশুদের মানসিক আঘাত লাঘবে এবং সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে নজর দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সংঘাত ও জাতিগত নিধন থেকে পালিয়ে যাওয়া শিশুরা সাধারণ স্কুলে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে পারে। তাই তাদের জন্য অনানুষ্ঠানিক এবং দৈনন্দিন জীবনের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুরা এখন ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, জাতিসত্তা এবং ভাষা অনুযায়ী এই শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের শিক্ষা তাদের আসল পরিচয় রক্ষায় সহায়ক হবে। নিজের দেশে ফেরার জন্য তারা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার কারণে অনেকেই নিজের দেশ থেকে উৎখাত হচ্ছে। সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষ নিজের ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই উদ্বাস্তু এবং বলপূর্বক বিতাড়িত মানুষের বিষয়টি সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর। তারা হতাশ, নিপীড়িত। সহিংসতা ও অত্যাচারের ভয়ানক অভিজ্ঞতা তারা বহন করছে। এদের মধ্যে অনেকেই নিজের দেশে কয়েক দশক ধরে অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষকে ‘শান্তিপ্রিয়’ বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহিংসতা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আজীবন। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের এখন অন্য দেশের নৃশংসতার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এগারো লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। যে মাটিতে শত শত বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছিল, সেখান থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে সহিংসতা আর গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য।
রোহিঙ্গারা যে কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের শাসকদের বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রনীতির শিকার হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও চলাচলের স্বাধীনতা থেকে তারা বঞ্চিত। এমনকি তাদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়ে আছে, তাদের প্রায় ৫৫ শতাংশই শিশু বলে আলোচনায় তথ্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ১১ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে মানসিক-সামাজিক সহায়তা এবং মৌলিক জীবনভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন শিক্ষা কেন্দ্র খোলা এবং শিশুদের খেলনা বিতরণের কাজ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের মনে রাখতে হবে সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা ভয়ানক অবস্থায় আছে। তাদের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।
এদিকে সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন