আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যা আছে
প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থান নিশ্চত করার পাশাপাশি সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছে গত দশ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার ঘোষিত এই ইশতেহারের বিভিন্ন বিষয় ১২টি ভাগে আলাদা শিরোনামে প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। পাঠকদের জন্য অবিকৃতভাবে তা প্রকাশ করা হল।
*****
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
তারুণ্যের শক্তি |
তরুণ যুবসমাজ:‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’
তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ২০২১ সালের মধ্যে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’, একটি দক্ষ ও কর্মঠ যুবসমাজ তৈরি করতে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘কর্মঠ প্রকল্প’ এবং প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিবে আওয়ামী লীগ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
প্রশাসন, নীতি ও বাজেট প্রণয়ন
• একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
• তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ।
• জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট।
• তরুণদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।
শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
• স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে ।
• বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
• তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে।
• প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
• দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’-এর অধীনে “স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ” শ্রেণীর তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপোযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’-এর অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে তা দূর করতে নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
• জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।
• বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি
• তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক এর মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে।
• তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
• তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রণয়ন করা হবে একটি যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’।
বিনোদন, মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশে সুযোগ বৃদ্ধি
• তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’ যেখানে থাকবে বিভিন্ন ইনডোর গেমস এর সুবিধা, মিনি সিনেমা হল, লাইব্রেরি, মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ কর্নার, মিনি থিয়েটার ইত্যাদি।
• স্বল্প খরচে তরুণদের কাছে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে ‘ইয়ুথ প্ল্যান’ চালু করা হবে।
• উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও জঙ্গিবাদের প্রথম লক্ষ্য যুবসমাজকে আকৃষ্ট করা। এই যুবসমাজ যাতে আদর্শিক ভ্রান্তিতে মোহাবিষ্ট হয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত না হয় সেজন্য কাউন্সিলিং এবং তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশকে ত্বরান্বিত করা হবে।
• তরুণদের মাদকের ভয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করা হবে ও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে।
• প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে।
নাগরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
• টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যাত্রায় যুক্ত করা হবে তরুণদের। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে আমলে নেয়া হবে তরুণদের বক্তব্য। জাতীয় যুবনীতির বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণেও যুক্ত করা হবে সমাজের সকল স্তরের তরুণদের।
আমার গ্রাম আমার শহর |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরই গ্রামকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গিকার যুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
• গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরো বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হবে।
• গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অ-কৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো |
দেশের উন্নয়নের মুল শর্ত হলো সুপরিকল্পিত, টেকসই অবকাঠামো এবং নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ সুবিধা। গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ, জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন সাধন করেছে তা নজিরবিহীন। আগামী ৫ বছরেও এই অগ্রগতি চলমান রাখার পরিকল্পনা আছে উন্নয়নমুখী দলটির। প্রতিটি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন, এলিভেটেড হাইওয়ে, আন্তজেলা এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন বিমানবন্দর, নতুন নৌ পথ তৈরি ইত্যাদি পরিকল্পনা আবাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই পূরণ হবে উন্নত দেশের লক্ষ্য।
অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট)
দেশের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন অপরিহার্য। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে অবকাঠামো খাতে বাঁধা দূর হবে এবং সার্বিক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মহেষখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ এবং চট্রগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এ সকল মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে এবং সেই সাথে মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বহুগুণ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে।
• পদ্মা রেল সেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে।
• মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপ লাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী যে কোনো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রার একটি অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানাপ্রতিষ্ঠা করেন। পঁচাত্তরের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নিরাপত্তা অবহেলার শিকার হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় লুটপাটের ফলে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে। দেশ এখন আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ২৩,০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে।
• ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
• মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে ১টি এবং পায়রাতে ১টি করে ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তোলা হবে।
• ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
• বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
• জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভারতের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রামে তেল আনার লক্ষ্যে পাইপ লাইনসহ ইতোপূর্বে গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
• ইস্টার্ণ রিফাইনারীর (ERL) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রিফাইনারী প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
• দেশের কয়লা সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
যোগাযোগ
উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে, উন্নত দক্ষ ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার খাত হিসাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সুগম ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথের সম্প্রসারণ ও সংস্কার বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ৪৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল সড়কপথ, রেলপথ, বিমানপথ ও জলপথ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি (রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১) সামনে রেখে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে।
সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানপথ
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬,৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯.২৪ কিমি বিস্তৃত ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে।
• ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
• ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
• মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সেজন্য বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালু করা হবে। ক্রমে বুলেট ট্রেন সিলেট, রাজশাহী,দিনাজপুর, পটুয়াখালি, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
• রাজশাহী, সিলেট,চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে। ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
• কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর। বাগেরহাটে খান জাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
• ইতোমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনটি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে সময়ের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ধারা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটাকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করা হবে।
• বেসরকারি বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে।
• স্বল্প খরচে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
• রাজধানী ঢাকার জনপরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পাতাল রেল, মেট্রোরেল অথবা সার্কুলার রেলপথ এবং রাজধানীতে নাব্য ও প্রশস্থ নৌপথ নির্মাণ করা হবে।
• সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের ৭টি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে।
• ট্রান্স এসিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক জোটের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ফলে অঅন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
নৌপথ ও বন্দর
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
ব্যাপক খননের পরিকল্পনা হিসাবে আগামী মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের সাথে আভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যম আমদানি-রপ্তানি সুগম করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যকে সহজতর করার লক্ষ্যে ভারতের সাথে নৌপথ বাণিজ্য আরো বাড়িয়ে একে নেপাল-ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে ।
২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে।
ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী-খালগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
উন্নত অর্থনীতি |
উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যুগোপযোগী কৌশল দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তরুণদের কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নতুন শিল্পের বাজার তৈরি, ও দক্ষ জনবল তৈরির ক্ষেত্রে মনোযোগী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গরীব, অসচ্ছল মানুষদের সচ্ছলতা এনে দিতে স্বাধীনতাকালীন সময় থেকেই বদ্ধ পরিকর। আগামী ৫ বছরে দারিদ্র্য বিমোচনে চলমান সকল পরিকল্পনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এগুলোকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ যাতে করে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৯ শতাংশে নেমে আসে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির আধুনিকায়ন ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্প্রসারনেও নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ
সামষ্টিক অর্থনীতি: উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দা, অর্থনৈতিক শ্লথ ও সংকট পরবর্তী একটি কঠিন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিগত সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের দুঃশাসন এবং ১/১১ সরকারের জোরজবরদস্তি ও অবিমৃশ্যকারী পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব এবং দুই মেয়াদে ১০ বছর বিভিন্ন প্রতিকুলতাকে মোকাবিলা করে বর্তমানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সাফল্য ও অর্জন করেছে, তা দেশের ইতিহাসে অনন্য এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এই ধারাকে অগ্রসর করে নেয়াই আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ থেকে স্বাধীনতার সত্তর বছর ২০৪১
• বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের সূচকগুলোর বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং আপামর মানুষের জীবন জীবিকার উন্নতি গণমনে আত্মবিশ্বাস ও সাহস এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর সম্ভব। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার সত্তর বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারি কৌশল ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
• এই পরিকল্পনায় অঙ্গিকার অনুয়ায়ী ২০১৯-২৩ সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচির সাথে সাথে ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রাকে এমনভাবে সমন্বয় করা হবে, যাতে দেশ ধারাবাহিকভাবে সুদূরপ্রসারি লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রসর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ পালনকালে হবে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
• এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫৪৭৯ ডলারেরও বেশি।
• এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
• ২০২১ থেকে ২০৪১ অর্থাৎ ২০ বছর বাংলাদেশকে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ৯ শতাংশ ধরে রাখতে হবে। গত অর্থবছরে ৭.৮৬ শতাংশের প্রবৃদ্ধির হার প্রমাণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
কৌশল ও পদক্ষেপ
বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে
• ২০৪১ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপি’র ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
• পর্যাপ্ত অবকাঠামো সেবা সরবরাহ করতে হবে।
• রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
• ব্যাংক ও বীমা খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
• পুঁজি বাজারের সম্প্রসারণ ও গভীরতা এবং পুঁজি পণ্য সরবরাহ ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে চীনা কনসর্টিয়াম ঢাকা পুঁজি বাজারে কৌশলগত বিনিয়োগ করেছে।
• প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে।
• ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানীর শেয়ার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের লেনদেন দ্রুত নিষ্পন্ন করা হবে।
• দেশব্যাপী বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
জনসংখ্যায় বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে
• ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত ছিল ৬৬ শতাংশ, ২০৩০ সালে যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৭০ শতাংশ। ২০৩০ এর পর থেকে এই হার কমতে থাকবে।এই জনমিত্রিক সম্ভাবনার সুফল বাস্তবায়নের জন্য সকল পদক্ষেপ নেয়া হবে।
• শোভন কাজের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বারোপ করা হবে, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করা হবে।
• কারিগরি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১১৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে; অতিরিক্ত ৩৮৯ টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন করা হবে।
• শুধু ভৌত উপকরণের উপর নির্ভর করে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। শিল্পনির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে
• রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সীমিত সংখ্যক পণ্য ও বাজারের উপর নির্ভর করে রপ্তানি সম্প্রসারণ দু:সাধ্য।রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য খাতভিত্তিক সমস্যাবলি সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
• রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার যে সকল সহায়তা দেয়, যথা- শুল্ক-কর-মুসক রেয়াৎ, নগদ প্রণোদনা ইত্যাদির সামগ্রিক কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুসারে সংস্কার ও সমন্বয় করা হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প বিকাশের জন্য শুল্ক-কর সুবিধা ও প্রণোদনা বিশেষ বিবেচনা পাবে, যা প্রশিক্ষিত তরুণ ও যুবকদের শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে
• ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) কালপর্বে গড় প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২৫) কালপর্বে এ হার গড়ে ৮.৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে
• আয়কর, ভ্যাট ও সম্পূরক শূল্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো হবে।
• মূসক আইন যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবায়নযোগ্য করে বিদ্যমান ইস্যুগুলোকে সমাধান করা হবে। ভ্রান্ত পৌন:পুনিক কর আরোপ (কাসকেডিং) পরিহার করা হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও বিরোধ নিষ্পত্তির সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে কর কর্মকর্তাদের পুরষ্কার বা প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রমকে অধিক কার্যকর করা হবে।
• আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে আয়করের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।
• কর কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক অর্থায়ন, হিসাববিজ্ঞান, বাণিজ্যিক আইন, ব্যাংকিং আইন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
বাজেট প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার করার লক্ষ্যে
• বিনিয়োগ ও কল্যাণমুখী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষতা প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে।
• সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর জন্য প্রয়োজন অনুসারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে, যার মধ্যে বয়স্ক পুরুষ জনগোষ্ঠীও অন্তর্ভুক্ত হবেন। দুঃস্থ, বিধবা ও বয়স্ক নারীদের জন্য বিদ্যমান কর্মসূচীর আওতা ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে।
• বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দ্বিগুণ করার জন্য অর্থাৎ জাতীয় আয়ের ৯ শতাংশ এডিপিতে খরচ করার উদ্দেশ্যে বাজেট কৌশলে সমন্বয় করা হবে। বিদেশি অর্থায়নের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংক হতে ঘাটতি অর্থ সংস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
• একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত যাতে অধিক রাজস্ব প্রদান করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
• বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সমন্বিত করে পিপিপি ও বিডা’র প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হবে যা প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মদক্ষতা বাড়াবে। বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক প্রধান ও সর্বোচ্চ অনুমোদন ক্ষমতা দুটির মধ্যে আমলাতান্ত্রিক স্তর কমিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে।
• ব্যবসার পরিচালনা ব্যয় (Cost for doing Business) ক্রম-উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রকার উদ্যোগ নেয়া হবে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে
• খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার এবং দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নের টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে।বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সাথে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ঋণ অনুমোদন ও অর্থছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিবে।
অর্থপাচার রোধ করার লক্ষ্যে
• বিদেশে অর্থ বা পুঁজি পাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং অপরাধ দৃঢ়ভাবে দমনে সক্রিয় থাকছে। পুঁজি পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থ সংস্থান দমনের ক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ গ্রুপের ১৫৯টি সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের সাথে মানি-লন্ডারিং ও সন্ত্রাস সমর্থনে অর্থসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান করে এবং অপরাধ নিরোধ কার্যক্রম সমন্বয় করে। অর্থ পাচার ও জঙ্গি সহায়তায় অর্থসংস্থান দমনের জন্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসাবে বিশ্বসংস্থা ও বিদেশি সংস্থাসমূহের সাথে যোগাযোগ রাখছে। অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ‘বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ ফেরৎ আনার লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স’ কাজ করছে।
• মানি-লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৫-২০১৭ সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনের আবশ্যিক কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরাধ ও শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে অর্জিত সম্পদ পাচাররোধ এবং পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কৌশলের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অর্থপাচার রোধে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস
দারিদ্য বিমোচন
বিদেশী শাসন ও শোষণের ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দারিদ্র একবিংশ শতকের উপযোগী আলোকোজ্জ্বল সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে অন্তরায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর সামরিক স্বৈরশাসনের আমলে ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ নীতি জাতির পিতার স্বপ্ন ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর’ পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ শাসনামলে জাতি দারিদ্র বিমোচনে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু আবারও পথভ্রষ্ট হয় জাতি। বিগত ১০ বছরে জাতি আজ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকী। বর্তমানের সাফল্য ও অর্জনের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আগামী দিনগুলোতে দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ৪ কোটি ৯২ লক্ষ লোক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে; আগামী ৫ বছরে এই খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে।
• দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
• ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র্য জনসংখ্যা ২.২ কোটির নীচে নামানো হবে।
• প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য হাসিল করা হবে।
• পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে পল্লী জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হবে।
• পিকেএসএফ-এর৮ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী। সকল ক্ষুদ্রঋণে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।
• আশ্রায়ন প্রকল্পের পরিধি আরো বৃদ্ধি করে সকলের জন্য বাসস্থানের মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
বৈষম্য হ্রাসঃ
ধনী-দরিদ্র ও শহর-গ্রাম পর্যায়ে আয় বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• বৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিধি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে জোরদার করা হবে।
কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি: খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তা
বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এখন খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি ও সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সুদৃঢ় প্রত্যয়।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• সবার জন্য পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের যোগান দেয়ার লক্ষ্যে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে।প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সময়মত মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণের উপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে।
• কৃষিতে শ্রমিক সংকট লাঘবের জন্য সহজে ব্যবহার্য ও টেকসই কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভে সহজপ্রাপ্য করা হবে।
• সহজ শর্তে সময়মত কৃষি ঋণ, বিশেষ করে বর্গাচাষীদের জন্য জামানতবিহীন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। মহিলা কৃষকদের জন্য গৃহাঙ্গন ও মাঠে ফসল চাষের জন্য কৃষি ঋণ আরো সহজপ্রাপ্য করা হবে।
• খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আলু, শাক-সবজি, তৈলবীজ, মসলা, নানাজাতীয় ফলমূল, ফুল, লতাপাতা-গুল্ম, ঔষধি ও ফসল উৎপাদনে বর্তমানে প্রদত্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করা হবে।
• স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি পণ্যের দক্ষ সাপ্লাই চেন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
• কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ করে জীবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো প্রযুক্তি, সংরক্ষণশীল ও সুনির্দিষ্ট কৃষি, হাইব্রিডাইজেশন, জিএম ফুড ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
• ইতোমধ্যে পাট ও ইলিশ মাছের জেনম আবিষ্কারের ফলাফলকে অধিকতর উৎপাদনশীল ও লাভজনক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহ ও সহযোগিতা দেয়া হবে।
• উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় অবকাঠামো, কৃষক সংগঠন (এফএফএস), বিপণন সংগঠন, সমবায় সমিতি ও কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।
• জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিকুল কৃষি-আবহাওয়া অঞ্চল যেমন লবণাক্ত অঞ্চল, হাওর ও চরাঞ্চল, পার্বত্যাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলসমূহের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জীবিকায়নের ওপর জোর দেয়া হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনেরপাশাপাশি প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন মেটানো, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আগামী মেয়াদে সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিপুল জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ খাতেজড়িত আছেন।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• ২০২৩ এর মধ্যে হাঁস-মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
• প্রাণীখাদ্য, গবাদি পশুর ঔষধপত্র ও চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস ও সহজ প্রাপ্য করার ওপর জোর দেয়া হবে। সেই সঙ্গে এগুলোর জন্য যাতে ভালো দাম পাওয়া যায় তার জন্য বাজার ব্যবস্থা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার আরো উন্নয়ন করা হবে।
• ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমত ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করে তা অব্যাহত রাখা হবে।
• পুকুরে মাছ চাষ ও যেখানে সম্ভব ধান ক্ষেতে মাছ চাষের আরো প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা, পুঁজি সংস্থান ও সুলভে বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।
• মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ব্যাপক মানোন্নয়ন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে মাছ চাষের ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি সাধন ও ধৃত মাছের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিল্প উন্নয়ন
উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমাণে শিল্পায়নের গুরুত্ব খুবই বেশি। দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ-যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান ও কাজের উৎস সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিপুল শ্রমশক্তি কাজে লাগাতে শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পভিত্তিক শিল্প উন্নয়ন কৌশলের উপর জোর দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে গুরুত্ব পাচ্ছে ভারী ও মৌলিক শিল্প- যে শিল্পকে ভিত্তি করে বহুমাত্রিক সংযোজন শিল্প গড়ে উঠবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে।
• শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্পদ ও উপাদান হিসেবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দেশীয় গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গবেষণায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে।
• শিল্প স্থাপনের বাধা, বিশেষত: ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা দূর করা হবে।
• দেশে যেসব পণ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে সেসব ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া হবে।
• কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
• পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চামড়া, খেলনা, জুয়েলারি, আসবাবপত্র, পর্যটন এ সকল খাত এই কর্মসূচির সুবিধা পাবে।
• ঔষধ শিল্প ও ঔষধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী এ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট শিল্পকে উৎসাহ দেয়া হবে। ডব্লিউটিও (WTO) অনুন্নত দেশের জন্য এ.পি.আই শিল্পকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বিবিধ রেয়াত দিয়েছে, যার সুফল গ্রহণের জন্য গৃহীত নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
• পিপিপি আইন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার করা হবে। বিডা (BIDA)-কে অধিকতর কার্যক্ষম করা হবে।
• অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আনুমানিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করবে এবং প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করবে।
• পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
• জেলা শহর ও মফস্বল শহরে স্থানীয় কাঁচামাল ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের গুচ্ছ শিল্পাঞ্চল (ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলা হবে। সরকারের “একটি বাড়ী একটি খামার” প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারী গুচ্ছশিল্প কাঠামোর সাথে সংযুক্ত করা হবে।
• সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বগি ও কোচ উৎপাদন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
• বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্প পার্ক স্থাপন করা হবে এবং এসব শিল্প পার্কে আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
• শিল্পের ভিত্তি মজবুত এবং আধুনিকায়নে ভারী ও মৌলিক শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যাকে কেন্দ্র করে শিল্পনগরী গড়ে উঠবে।
• জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সব দেশ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের অবস্থান তার মধ্যে শীর্ষে। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন ও পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান ও পদক্ষেপ বিশ্ব সমাজে বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো সাহসী ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• বিশ্ব উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা থেকে মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।
• ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে’ বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে।
• উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০১৫ সালের ১৩.১৪ শতাংশ হতে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ; ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরগুলোতে বায়ুর মান উন্নয়ন এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইন প্রণয়ন; শিল্প বর্জ্যরে শূণ্য নির্গমণ/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন করা; জলাভূমি সংরক্ষণ আইন মেনে বিভিন্ন নগরের জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা করা; উপকূলরেখা ব্যাপী ৫০০ মিটার চওড়া স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে।
• সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ ও সুন্দরবনসহ অববাহিকা অঞ্চলের মিঠা পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
• দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
• উন্নয়ন কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে সবুজ প্রবৃদ্ধি কৌশল (green growth strategy) গ্রহণ করা হবে।
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সবাই |
আওয়ামী লীগ সবসময়ই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে মনোযোগী। ২০২৩ সালের মধ্যে পথশিশুদের নিরাপদ আবাসন, নারী শ্রমিক চার মাসের বেতন সহ মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রতিবন্ধী শিশুদের চলাফেরা, চিকিৎসা সহজ করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ইত্যাদির মাধ্যমে অবহেলিত মানুষের উন্নয়ন ধরে রাখার পরিকল্পনা আছে দলটির।
শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি
মালিক-শ্রমিক এবং শ্রম ও মজুরির সম্পর্ক শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পূর্বশর্ত। সংবিধানের আলোকে এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমনীতি ও শ্রমিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• শিল্প শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা হবে।
• নারী শ্রমিকদের জন্য ৪ মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে।
• শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
• গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে রেশনিং প্রথাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিশু কল্যাণ
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষ বিধান সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম দিবস আমাদের জাতীয় শিশু দিবস। বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার শিশুর নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সুদৃঢ় সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য , শিক্ষা, বৃত্তি ও নানাবিধ কর্মকান্ড উন্নত ও প্রসারিত করা হবে।
• শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না। শিশু নির্যাতন বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
• পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ওপ্রসারিত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ
প্রতিবন্ধী
প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অংশ। দেশে ১৬ লক্ষ প্রতিবন্ধী রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধীদের মেধার বিকাশ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে এবং জাতিসংঘেও অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও কল্যাণমূলক প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) শিশুদের সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ,চিকিৎসা সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবীণ কল্যাণ
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১সালে বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ছিল ১.১৩কোটি, যা প্রতি বছর ৪.৪১শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েহয়েছে ১.৩০কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ ভাগ। পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের অবদান বিবেচনায় প্রবীণদের সার্বিক মৌলিক অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা সুরক্ষায় বর্তমানে সরকার কাজ করে চলেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• সামাজিক ‘নিরাপত্তা-বেষ্টনি কার্যক্রমে’ প্রবীণদের অন্তর্ভূক্তির বর্তমান সংখ্যা ও সহায়তার পরিমাণ সম্প্রসারণে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
• প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্য বই-এ আলাদা অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্য আসন/পরিসর নির্ধারণ,তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে উঠা-নামার ব্যবস্থা প্রবীণ-বান্ধব করে গড়ে তোলা হবে
ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়
স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান জাতিকে উপহার দিয়েছেন, তাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও অনুন্নত সম্প্রদায়সহ সকল নাগরিকের সমমর্যাদা ও অধিকার সুনিশ্চিত করেন। পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সংবিধান পরিবর্তন করে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হয়। ২০১১ সালে সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ ’৭২-এর সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সকল ধর্মের সমান অধিকার এবং দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতিদের অধিকার ও মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে ধর্মীয় ও নৃ-জাতিসত্তাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান এবং তাদের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয়, জীবনধারা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আবারও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার-এই মর্মবাণীরই প্রতিফলন।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
• জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করা হবে।
• সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
• সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
• ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
জনগণের ক্ষমতায়ন |
একটি জনমুখী প্রশাসন এবং সুলভ জনসেবা উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। একটি দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে গ্রহণ করেছে সেটিকে আরো বিস্তৃত করবে আওয়ামী লীগ। ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, স্থানীয় সরকারের হাতে দায়িত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতি পুরন করবে আওয়ামী লীগ।
গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ
গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার সাথে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক তথা সার্বিক মুক্তির লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ গত প্রায় সাত দশক যাবৎ বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে চলেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বারবার বাংলার জনগণ সামরিক ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে এগিয়ে চলছে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা তাদের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় চারনীতির অন্যতম নীতি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার পথকে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে রোধ করার সাধ্য কারো নেই।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে উর্ধে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা
আইনের শাসনের মূল বক্তব্যই হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান; কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। এই নীতির আরেকটি অর্থ হচ্ছে কেবলমাত্র সংবিধান ও নির্বাচিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে একটা দীর্ঘ সময় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লংঘন করে দেশ পরিচালিত হওয়ায় আইনের শাসন ভূলুন্ঠিত হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশে আইনের শাসন পুন:প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। এ যাবত তিন মেয়াদে সরকারে এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা লাভের সুযোগ সুবিধা অবারিত করা হবে।
• বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে।
• সার্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন
মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১-র উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্যসমূহ অর্জনে একটি দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দপ্তরে কাজের দক্ষতা ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা হ্রাসে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধারাকে অগ্রসর করে নিতে হবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে।
• নিশ্চিত করা হবে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায় পরায়ণতা এবং সেবাপরায়ণতা। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন।
• সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত করা হবে।
• প্রশাসন হবে নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসাবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার কাজ অগ্রসর করে নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার: জনগণের ক্ষমতায়ন
তৃণমূলের জনসাধারণের নানামুখী চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কার্যকর স্থানীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দারিদ্র নিরসন ও বৈষম্য হ্রাস করে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য দরকার স্বায়ত্বশাসিত কার্যকর ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার। ইতোমধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে অধিকতর স্বায়ত্বশাসন, ক্ষমতা ও দায়িত্ব। এই প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নিতে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে।
• জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে।
• স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
• নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ
আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গিকারাবদ্ধ। ইতোমধ্যে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের চেতনায় দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের সকল শাখা ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে। ৩৩টি টেলিভিশন (৪৪টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত), ১৬টি এফ.এম রেডিও (২৮টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত), ১৭টি কমিউনিটি রেডিও (৩২টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত) সহ অসংখ্য সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর মাধ্যমে দেশে তথ্যের অবাধ চলাচল অব্যাহত আছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ২১ তলা ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা হবে।
• সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের ফলে এর অপব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণির মানুষ সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর নিরসনে গুজব সনাক্ত ও সত্য তথ্য প্রচারের মধ্য দিয়ে গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে।
• জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন করে সকল গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা রোধ ও জনগণের সত্য তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতায় সমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদ মাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে।
• তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে অধিকতর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদেরকে উৎসাহিত করা হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
• পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
• সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বিতরণে বৈষম্যমূলক নীতি, দলীয়করণ বন্ধ এবং সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে তার বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হবে।গণমাধ্যম বান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোন আইনের অপপ্রয়োগ হবে না।
• পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য প্রচলিত উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে।
নিরাপদ ও শান্তির দেশ |
উন্নত জীবনের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ দেশ। পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুলে গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই ইশতেহারেও দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ধরে রাখবে বলে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে পূর্বে জনমনে এক ধরনের ভীতি বিরাজ করত। সেটা দূর করে একটি জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এরই ধারাবাহিকতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• আগামী ৫ বছরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকবে।
• পুলিশসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কাজ চলমান থাকবে। সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়া দানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যানবাহন-সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কার্যের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ
দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ইস্পিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনেকরি দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্ম পরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী করে আধুনিকায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা করবে সরকার।
• বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি ভবিষ্যতে আরো জোরদার করা হবে।
• দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে।
• ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশীশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল
সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক মানবতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অন্তরায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পূর্বাপর পরাজয়ের প্রতিশোধ ও ক্ষমতা দখল করতে সন্ত্রাস-সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। বিএনপি-জামাত জোট আমলে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসাবে আমরা নিন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু দেশ এখন জঙ্গিবাদ দমনে বিশ^ সমাজে প্রশংসিত।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• আগামীতে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।
• সন্ত্রাসী-গডফাদারদের এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
• সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।
• মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকাসক্তদের পূণর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
• আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা
আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন শক্তিশালী এবং অভ্যন্তরীণ স্বশাসন, শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা সমুন্নত। দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা সামর্থ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন। সেই নীতিমালার ভিত্তিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সশস্ত্র বাহিনীকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার যে নীতি নিয়েছিল, তা অব্যাহত থাকবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোতোভাবে অব্যাহত থাকবে।
• প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ স্বশাসন, শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা সমুন্নত রাখা হবে। জ্যেষ্ঠতা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা হবে।
• সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাসহ গৃহীত বহুমুখী কল্যাণমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।
• জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ সমুন্নত রাখা ও বৃদ্ধি করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
• সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণের জন্য চলমান কাজ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে।
গর্বিত বাংলাদেশ |
গত ১০ বছরে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র জয়, শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মানবিক ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ এখন মানবতার উদাহরণ। আগামী ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমুহের সাথে দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিবে আওয়ামী লীগ।
সমুদ্র বিজয়: ব্লু-ইকোনমি- উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন
সাফল্য ও পরিকল্পনা
বঙ্গোপসাগরে বহুমাত্রিক বিশাল সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস এ্যাক্ট-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।মিয়ানমার ও ভারতের সাথে অমীমাংসীত সমুদ্রসীমা ছিল সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। জননেত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমূদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপোসাগরে ২০০ নটিকেল মাইলের মধ্যে সমূদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনি এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিকেল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বমোট ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমূদ্র অঞ্চল লাভ করেছে, যা মূল ভুখন্ডের প্রায় ৮০.৫১ ভাগ।
সমূদ্র সম্পদ, যা ব্লু ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। সমূদ্র বন্দর, জাহাজ নির্মাণ, নৌ-চলাচল, সাগরে মৎস্য চাষ, জলজ উদ্ভিদ, তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ আহরণ, সমূদ্রে ভেসে ওঠা নতুন চর/দ্বীপ, সামুদ্রিক পর্যটন শিল্প ইত্যাদি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমূদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগামী মেয়াদে এই পরিকল্পনা অন্যতম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি রোধ করা, ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আওয়ামী লীগ অঙ্গিকারাবদ্ধ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, বিশেষত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
• দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
পররাষ্ট্র
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। জাতির পিতার আদর্শ ও সংবিধানের ২৫নং অনুচ্ছেদে বিধিবদ্ধ নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ -এর আলোকে সকল রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা হচ্ছে। বিএনপি-জামাত আমলের দুনীতিগ্রস্থ ‘ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’, ‘ অকার্যকর রাষ্ট্র’ প্রভৃতি সব কলংক ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় স্বার্থে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• আন্তর্জাতিক যে কোন বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
• ভারতের সাথে তিস্তাসহ অভীন্ন নদীর পানি বন্টন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারত-ভুটান-নেপালের সাথে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভীন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
• বাংলাদেশ ভূখন্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে।
• রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক অরো জোরদার করা হবে।
• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার ও ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে।
• মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। এই দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা থাকবে। মুসলিম উম্মাহ্র সংহতি এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করা হবে।
• অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
রোহিঙ্গা সংকট
• মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করার কারণে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। শরণার্থী বহন করার জন্য অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন থেকে সর্বস্ব হারিয়ে প্রাণ নিয়ে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
• সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিশুদের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
• সরকারের তৎপরতার ফলে বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে এবং তাদের জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে।
• রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে গঠনমূলকভাবে আলোচনার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
• রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে নিরাপদ সন্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সাথে সফলভাবে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
• রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছে।
মানসম্মত শিক্ষা |
আজকের বিশ্ব জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিশ্ব। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে জাতি যত সাফল্য অর্জন করবে, সে জাতি জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে ও মানবিক গুণাবলী বিকাশে ততটাই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে। অঙ্গীকার অনুযায়ী বর্তমান শিক্ষা বান্ধব আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মানোন্নয়নের ওপর অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে গুরুত্বারোপ করে আসছে। ২০২৩ সালের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা পাবে দেশের ৯৫% শিশু, এবার এমনটাই পরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনার চর্চা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র তৈরির ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা আছে ২০১৮ সালের ইশতেহারে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসিন্ধৎসা, জ্ঞান আহরণ এবং দেশ ও জাতির অবিকৃত সত্য ইতিহাস জানার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
• শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
• বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূণ্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শতকরা ২০ ভাগের নীচে নেমে এসেছে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার শতকরা ৫ ভাগে নামিয়ে আনা হবে।
• স্কুল ফিডিং সকল গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলসমূহে পর্যায়ক্রমে সার্বজনীন করা হবে।
• প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে ।
• শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা।
• প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বোতভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। সকল জেলায় অন্তত একটি প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
• মাদ্রাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার সাথে কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করা হবে।
• নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সকল বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায়ও তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।
• সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্যন্ত সকলস্তরের বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদেরও মানবসম্পদে পরিণত করা হবে।
• শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উন্নত স্বাস্থ্যসেবা |
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ
দেশের প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা একটি সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে আগামীর সুস্থ সবল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ জোর দিচ্ছে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা, গ্রামীন মানুষের কাছে উন্নত চিকিৎসাসেবা সুলভ করার ওপর।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে।
• ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকলকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।
• সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
• প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যান্সার ও কিডনী চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার ও কিডনী চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
• সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরো নির্ভূল ও জনবান্ধব করা হবে। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে।
• কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সকল সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে।
• আয়ুর্বেদ, ইউনানী, দেশজ ও হোমিওপেথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে।
• গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
নারীর অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংবিধানের ১০ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ’ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। প্রসূতি মায়েদের জন্য ছয় মাসের ছুটি এবং পিতার সাথে মাতার নাম লেখার নীতি প্রভৃতি সব আওয়ামী লীগেরই অবদান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কর্মের সব পরিসরে নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি আরো বৃদ্ধি করা হবে।
• নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
• ‘জয়িতা’ ফাউন্ডেশন সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে।
• নারীদের পুরুষের সমান মজুরীর নিশ্চয়তা দেয়া হবে এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও সকল ক্ষেত্রে নারীদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
• সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চমৎকার ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ গড়ে তোলা হবে এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ পর্ব-২ |
আমাদের সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিজিটাল যুগে বিশ্ব পরিমন্ডলে সামনের কাতারে থাকা। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে মুজিব বর্ষ ২০২০, ডিজিটাল বাংলাদেশ বর্ষ ২০২১, এসডিজি বর্ষ ২০৩০ ও উন্নত বাংলাদেশ বর্ষ ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়ন করা। এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডিজিটাল ক্ষেত্রে বর্তমানে যে বিপ্লব চলছে, তা ক্রমে যুগোপযোগী করে অগ্রসর করার ভেতর দিয়েই গড়ে উঠবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
• ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে।
• ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা হবে।
• শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
• আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে।
• তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে।
• বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ এবং সাবমেরিন ক্যাবল ৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
• সামরিক বাহিনী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
• ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তি সংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
ইশতেহার দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন