সাতক্ষীরায় স্বামীর পরকীয়া ও মাদকে সর্বনাশ স্ত্রীর জীবন
স্বামীর পরকীয়া, মাদক ও যৌতুকের কারনেই আস্বিয়া সুলতানার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। পারিবারিকভাবে দেখা-শুনা করেই বিয়ে হয়েছিল তার। ভালই চলছিল বিয়ের পর তাদের সাংসারিক জীবন। প্রথম দিকে স্বামীর অতীত সম্পর্কে না জানলেও ধীরে ধীরে তার কাছে সব পরিষ্কার হতে থাকে। নাইট ক্লাব, ডিজে, ডিস্কো পার্টি ও ড্রিংকস ছিলো স্বামীর নিত্যদিনের সঙ্গী। স্বামী তিতাস আম্বিয়ার কাছে সবকিছু লুকানোর চেষ্টা করেও প্রায় সময় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরলে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখিতে আসল ঘটনা বেরিয়ে পড়তো। সবকিছু নীরবে সহ্য করেও আম্বিয়া কখনো তার বাবার বাড়িতে এসব জানাতো না। হয়তে স্বামী তিতাসকে অন্ধকার জগৎ থেকে ফেরাতে পারবে এই আশায় বুক বেঁধে থাকতো। অনেক চেষ্টায় কাজ না হওয়ায় এসব ঘটনা শ্বাশুড়ীকে বলেও কোন লাভ হয়নি। বরং শ্বাশুড়ী তাকে বুঝাতে থাকে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। সবকিছুতেই যেন আম্বিয়া সুলতানা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আবার মাঝে মাঝে তিতাস তাকে চাপ দিতো বাপের বাড়ী থেকে যৌতুকের টাকা আনতে। কন্যার সুখের কথা চিন্তুা করে জামাইয়ের প্রয়োজনে কষ্ট করে হলেও এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকা তিতাসের হাতে তুলে দিয়েছে তার পরিবার। আম্বিয়া সুলতানার পিতার বাড়ী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামে। সে শেখ আমিনুল ইসলামের কনিষ্ঠ কন্যা। আমিনুল ইসলাম একজন গরু ও দুগ্ধ খামার ব্যবসায়ী। সন্তান বলতে তার ৩টি কন্যা সন্তান। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ে হিসাবে আম্বিয়া সুলতানা অত্যন্ত সহজ-সরল ও লাজুক স্বভাবের। ২০০৯ সালে এইচ,এস,সি পাশ করে আম্বিয়া ডিগ্রিতে ভর্তি হয়। ডিগ্রী পরিক্ষায় সে উত্তীর্ন হতে পারেনি। এরই মধ্যে সে ২০১১ সালে গণস্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকুরী লাভ করে।
জানা যায়, বাগেরহাট জেলার খানজাহান আলী থানার সারুইপাড়া গ্রামের মৃত শেখ বনি ইসরাইলের পুত্র শেখ নাজমুল হাসান ওরফে তিতাস (৩৩) এর সাথে গত ইং ১৫/০৪/১৩ সালে আম্বিয়া সুলতানা (২৫) বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিতাসকে আম্বিয়া সুলতানার পরিবার প্রায় ৪ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র প্রদান করে।
উচ্চশিক্ষিত তিতাস দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রবি (মোবাইল ফোন কোম্পানী) তে মার্কেটিং অপারেটর হিসাবে কর্মরত। উচ্চশিক্ষিত, সুদর্শন ও ভালো বেতনে চাকুরীর সুবাদে আম্বিয়ার পরিবার তাকে পাত্র হিসাবে পছন্দ করে। স্ত্রীর চাকুরী করা মোটেই পছন্দ করতো না তিতাস। একপর্যায়ে স্বামীর চাপেই বিয়ের দুই মাসের মাথায় চাকুরী ছাড়তে হয় আম্বিয়ার। তিতাসকে খুশী রাখতে ও তার পছন্দ অনুযায়ী চলতেই চাকুরী ছেড়ে দিতে হয়।
তিতাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাকুরীর কারনে স্ত্রী আম্বিয়া ও তার মাকে ঘর ভাড়া করে কাছে-সাথেই রাখতো। তিতাসের বর্তমান কর্মস্থল রবির সাতক্ষীরা অফিসে। তিতাস বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ পলাশপোল এলাকার ডাঃ বাসার সাহেবের বাড়ীর পাঁচতলা ফ্লাটের ভাড়াটিয়া। ইং ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর তিতাস-আম্বিয়া দম্পতির ঘর আলো করে আয়াত হাসান নামের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে। এরপরেও তিতাস স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে নারাজ। যশোর ও সাতক্ষীরায় চাকুরীর সময়ে অন্তত এক ডজন মেয়ে ও অন্যের স্ত্রীর সাথে তিতাস প্রেম-ভালবাসা ও পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছে। শুধু তাই নয় এখনো মাঝে মাঝে নাইট ক্লাব, ডিজে, ডিস্কো ও ড্রিংকস পার্টিতে যোগ দিতে যশোর, ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে যায় তিতাস। এছাড়া প্রতিদিন মদ না খেলে তার জীবন চলে না। এসব কিছু জানতে পেরে তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে আম্বিয়ার উপর নেমে আসতো চরম নির্যাতনের খড়গ। দিনে-রাতে দীর্ঘক্ষন মোবাইলে মেয়েদের সাথে কথা বলতো তিতাস। এটি নিয়ে সব সময় অশান্তি লেগেই থাকতো পরিবারে। তাছাড়া দীর্ঘ রাত পর্যন্ত মদপান করে বাসায় ফিরতো তিতাস। সম্প্রতি তিতাস তার স্ত্রীর মাধ্যমে শ্বশুরের কাছে জমি কেনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা আবারও যৌতুক হিসাবে দাবী করে। এ নিয়ে একাধিকবার জটিলভাবে চাপ প্রয়োগ হয়েছে। তিতাসের মা নাজমুন নাহারের কু-চক্রী বুদ্ধিমত্তায় আম্বিয়ার ঘর-সংসার করা প্রায় নাভিশ্বাস উঠে যায়। ছেলেকে শাসন না করে উল্টো সব সময় আম্বিয়াকে মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখতো। গত ১৬ জুন আম্বিয়ার পিতার বাড়ীতে মাহে রমজানের দাওয়াতে আসে তিতাস ও তার মা নাজমুন নাহার। ঐদিন রাতে আবারো যৌতুকের টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি ও বাক-বিতন্ডা শুরু হলে তাকে ছেলে ও মা মিলে মারপিট ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে তিতাস ও তার মা কৌশলে পালিয়ে যায়। এদিকে আহত আম্বিয়াকে উদ্ধার শেষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় আম্বিয়া সুলতানা বাদী হয়ে তিতাস ও তার মাকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ১১ (গ)/৩০ ধারায় একটি মামলা করেছে। মামলা নং-১৫, তাং-০৪/০৭/১৭ ইং। মামলার পরেই মূল আসামী তিতাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে সে জেল হাজতে আটক রয়েছে। তাকে জামিনে মুক্ত করতে একটি মহল মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিশনে নেমেছে।
অপরদিকে, ৭ মাসের শিশু সন্তান আয়াত হাসানকে নিয়ে পিতার বাড়ীতে অনিশ্চয়তার মাঝে জীবন-যাপন করছে আম্বিয়া সুলতানা। সন্তানকে বুকে আকড়ে ধরে দিন কাটছে তার। স্বামীর পরকীয়া, মাদক ও যৌতুকের কারনেই সুখের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আম্বিয়ার। একদিকে স্বামীর সংসার অন্যদিকে সরকারী চাকুরী সব হারিয়ে এখন সে চরম দিশেহারা। এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় কিভাবে কাটিয়ে উঠবে আম্বিয়া? এমন প্রশ্ন এখন সকলের কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে। আম্বিয়া সুলতানা এ প্রতিবেদককে জানান, তিতাসের মত লম্পটের জন্য আমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি তার উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি চাই। এছাড়া সাংবাদিকদের মাধ্যমে সে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রবি (মোবাইল ফোন কোম্পানী) এর কাছে তিতাসের চাকুরীচ্যুত সহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবী জানিয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন