আরো খবর...
সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
লন্ডন থেকে দেয়া এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘তার মৃত্যুতে আমরা একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারালাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা বাংলাদেশ সব সময় স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতরাতে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে (এআইআইএমএস) শেষনি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বিজেপি’র একজন প্রবীণ নেতা ছিলেন।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর নেই
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি’র সিনিয়র নেতা সুষমা স্বরাজ মঙ্গলবার রাতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। এআইআইএমএস একথা জানায়। খবর পিটিআই’র।
বিজেপি’র সিনিয়র এ নেতাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে এআইআইএমএসে আনা হলে তাকে সরাসরি জরুরি ওয়ার্ডে নেয়া হয়।
এআইআইএমএস’র চিকিৎসকরা জানান, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটার বার্তায় বলেন, ‘ভারতের রাজনীতির গৌরবান্বিত এক অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। ভারত বিশিষ্ট এ নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে। তিনি জনসাধারণের সেবা এবং গরীবদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতিসাধনে জীবন উৎসর্গ করেন। সুষমা স্বরাজ ছিলেন খুবই অমায়িক ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। তিনি কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন।’ তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর হর্ষ বর্ধন, রাজনাথ সিং,স্মৃতি ইরানি প্রকাশ জাভেদাকরসহ সিনিয়র অনেক মন্ত্রী সেখানে যান।
জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কেন্দ্রের পদক্ষেপের পর প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বরাজ সন্ধ্যায় টুইটারে একটি বার্তা পোস্ট করেছিলেন।
ওই বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি জি- আপনাকে ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি আমার জীবদ্দশায় এই দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী মোদি তার টুইটার বার্তায়, একজন ‘ভাল বক্তা এবং বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সদস্য’ হিসেবে স্বরাজের প্রশংসা করেন। মোদি বলেন, তিনি সকল দলের কাছে প্রশংসিত ও শ্রদ্ধেয় ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আদর্শ ও বিজেপি’র স্বার্থের ব্যাপারে তিনি আপোসহীন ছিলেন।
সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সুষমা স্বরাজের মৃত্যুর খবর শুনে আমরা শোকাহত হয়েছি। আমরা তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি শোক প্রকাশ করছি।’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইটার বার্তায় বলেন, ‘সুষমা স্বরাজের মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত হয়েছি। তিনি একজন অসাধারণ রাজনৈতিক নেতা, ভাল বক্তা ও ব্যতিক্রমী পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। দেশের সকল দলের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি।’
২০১৬ সালে স্বরাজ তার শরীরে একটি কিডনী প্রতিস্থাপন করেছিলেন এবং স্বাস্থ্যগত কারণে এ বছরের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত ছিলেন।
হেফাজতে নির্যাতনের মানসিকতা সরকারের নেই : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোন ধরনের নির্যাতনের মানসিকতা তাঁর সরকারের নেই এবং সরকার এ ধরনের কাজ করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যিকথা বলতে কি, এ ধরনের কোন মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটা করিও না।’
শেখ হাসিনা আজ বিবিসি’তে প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে একথা বলেন। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সিনিয়র সাংবাদিক মানসী বড়–য়া এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গণতন্ত্র এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কেও কথা বলেন।
মানসী বড়–য়া বলেন, বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ইতিহাস অনেক দিনের। এটি কোন বিশেষ সরকারের আমলে যে ঘটেছে তা নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে? জানতে চান তিনি।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনাচক্রে কিছু (দু-একটি) ঘটনা ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত ১০ বছরে আমাদের অবস্থানটা দেখেন- আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি আমার নিজের কথাটাই চিন্তা করেন- যখন আমি আমার বাবা-মা-ভাইদের সব হারালাম, খুনীদেরকে বিচার না করে ইনডেমনিটি দেওয়া হলো, অর্থাৎ আপনি অপরাধকে প্রশ্রয় দিলেন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁকে বিচার পেতে ৩৫টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েই একটা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় সেই দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।’
‘তবে আমরা যেকোন অপরাধের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন ঐভাবে কখনই হেফাজতে মৃত্যু হয় না বা নির্যাতনও যে খুব একটা করা হয়, তাও নয়,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীদের থেকে তথ্য সংগ্রহের যে কতগুলো নিয়ম রয়েছে-সেজন্য আমরা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসি। তারা এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহুদেশে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতিতেই অপরাধীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে কোন কিছুই করা হয় না, এটা হলো বাস্তবতা।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হবার সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলো। এই কালচারটাই চলে এলো, এটাই প্রচলিত হলো।
তিনি বলেন, ‘সে সময় দেশে সামরিক শাসন বলবৎ ছিল (কখনও সরাসরি আবার কখনও নাম পরিবর্তন করে) যেখানে ক্ষমতাটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই ছিল।’
‘সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে দেশকে একটু সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা একটা কঠিন দায়িত্ব, এই কঠিন দায়িত্বটা আমরা পালন করে যাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখন যারা সমালোচনা করছে তাদেরকে যদি আপনারা সুনির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে, আমার মনে হয়, এ সম্পর্কে তারা খুব বেশি তথ্য দিতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা শ্রেণী আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারটা বেশি করে চালাচ্ছে। দেশে অসাংবিধানিক এবং অস্বাভাবিক সরকার বা মার্শাল ‘ল’ থাকলেই তাদের খুব লাভ হয়।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা সারাক্ষণ আমাদের নানা খুঁটিনাটি দোষক্রটি খুঁজে বের করতে লেগেই আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা হলো আমার দেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে কি না, তারা ভালো আছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, জেনেভাতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং আমাদের আইন মন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরাও সেখানে ছিলেন এবং এর যথাযথ উত্তর তারা দিয়ে এসেছেন।’
উল্লেখ্য, ৩০ ও ৩১ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির (কমিটি এগেইনস্ট টর্চার-ক্যাট) কাউন্সিলে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ বন্ধে বাংলাদেশের সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ‘যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চলমান মেডিকেল চিকিৎসা শেষে (চোখের) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং রাষ্ট্রদূতদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘দূত সম্মেলনে’ যোগদান এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গত ১৯ জুলাই লন্ডন পৌঁছেন।
মানসি বড়–য়া বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন খুবই ভালো করছে। গত বছর অন্যতম দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল। তিনি জানতে চান- এ প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে কি পৌঁছুচ্ছে?
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই’। তিনি বলেন, ‘একটু চিন্তা করেন ২০০৫-০৬ সালে যেখানে আমাদের দারিদ্রের হার ৪১ শতাংশ ছিল সেখানে আজকে সেটা কমে ২১ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। গত ১০ বছরের মধ্যে আমরা এটা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় যেটা মাত্র ৪শ’/৫শ’ মার্কিন ডলার ছিল আজকে সেখানে ২০০০ ডলারের কাছাকাছি আমরা পৌঁছে যাচ্ছি। প্রবৃদ্ধি এখন ৮ দশমিক ১ ভাগ অর্জন করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে স্বভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি বাড়ে, সেখানে আমরা কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেইনি। আমরা কিন্তু তা ৫ দশমিক ৫ বা ৬’র মধ্যেই ধরে রেখেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব স্বাভাবিকভাবে এর সুফলটা কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছেই পৌঁছায়।’
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পরেও বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে অভিবাসন প্রত্যাশায় দেশের জনগণের একটি অংশের দেশ ত্যাগের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা।’ তিনি বলেন, ‘আদিকাল থেকেই মানুষের একটা প্রবণতা রয়েছে, এই জায়গায় নয়, অন্য জায়গায় গিয়ে আমার ভাগ্য গড়তে হবে। এটার সাথে দারিদ্রের বিষয়টাকে ঠিক যুক্ত করা যায় না।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ যদি বাংলাদেশে কাজ করতে চায় তাহলে আমরা বিনা জামানতে আমাদের যুব সমাজকে ব্যাংক ঋণ দিচ্ছি।’
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে দেশে বিদ্যমান খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতোটা প্রচার হয় বিষয়টা কিন্তু ততোটা নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আসার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকের সচিবের সাথে সভা করেছি। ঋণ নিয়ে না দেয়ার প্রবণতা, এই কালচারটা আমাদের দেশে শুরু হয় সামরিক শাসকদের শাসনামলে। আমরা যখনই সরকারে এসেছি তখনই চেষ্টা করেছি তাদের (খেলাপি) কাছ থেকে টাকাটা আদায় করার।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন, ‘সব সময় মার মার কাট কাট করলেতো হবে না, তাদেরকে নরমে-গরমে যেভাবে সম্ভব ঋণ পরিশোধের নিয়মের আওতায় আনতে হবে। এবারের বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে যে, আপনারা বেঁধে দেয়া সময়ে ঋণটা ফেরত দিলে আবার নতুন ঋণ পাবেন। না হলে আর দেয়া হবে না।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন- দেখুন এই সমস্যাগুলো যদি এতবড় হতো তাহলে কি আমাদের অর্থনীতি এতটা শক্তিশালী হতো, মজবুত হতো, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি কি এতটা হতে পারতো? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে দেশের মানুষের কাছে আমি খুব কৃতজ্ঞ। কারণ আমি যখন ডাক দেই বা একটু কথা বলি, আপনাদের এটা করতে হবে- আমি দেখেছি, মানুষ তাতে সাড়া দেয়।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আমাদের দেশে আমি সরকারে আসার আগে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে ’৭৫ এর পর থেকে বাংলাদেশে একটিমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল, সেটাও সরকারি- বিটিভি। একটামাত্র রেডিও। আর কয়েকটি সংবাদপত্র এবং কিছু সরকারি সংবাদপত্র। তিনি বলেন, ‘আমি এসে সব উন্মুক্ত করে দিলাম বেসরকারি খাতে। এখন ৪৪টি টেলিভিশন। অবশ্য আমার উদ্দেশ্য ছিল অন্যরকম। আমার উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।’ মানষি বড়–য়া জানতে চান- এ সকল সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বর্তমানে কতটুকু রয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বিদ্যমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যদি না থাকতো তাহলে সত্য মিথ্যার মিশ্রণে সরকারের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার তারা কিভাবে করছে আমাকে বলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, যখন সামরিক স্বৈরশাসকেরা ক্ষমতায় ছিলো- এরশাদের আমলে বা জিয়ার আমলে বলেন, এমনকি খালেদা জিয়ার আমলে- এই স্বাধীনতা কি কেউ ভোগ করেছে। সাংবাদিকদের ওপর কি অত্যাচারটা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবাই সব কথা বলে, তারপর বলে স্বাধীনতা নাই। তাহলে স্বাধীনতা না থাকলে এত কথা বলল কিভাবে?’
সরকারের সমালোচনা সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করা যায় না, একথা বলারতো সাহস পাচ্ছেন। এটাওতো সমালোচনা। আর টক শো আপনি যদি শোনেন, আপনি একটু শুনে দেখবেন যে, তারা কি বলে।’ তিনি বলেন, ‘সকলে মিলে আমরা চেষ্টা করছি একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে, সেখানে যখন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয় তখন কি হাত গুটিয়ে কেউ বসে থাকবে। পৃথিবীর কোনো দেশ কি এরকম হাত গুটিয়ে বসে থাকে? কেনো দেশই থাকে না। কারণ সরকারকেতো মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। নিরাপত্তার জন্য যেটা করণীয় সেটাতো করতেই হবে।’
দেশের ডেঙ্গুর বিস্তার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের সমস্যা বেশ কয়েকবার সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক বছর আগে যখন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে, তখন দেশে গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আমাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে এখন চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সিটি কর্পোরেশন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না- এ কথা ঠিক নয়। তিনি বলেন, এডিস ভিন্ন ধরনের মশা। যে সব এলাকায় উচ্চ ও মধ্য বিত্ত মানুষ বসবাস করে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি।
তিনি বলেন, মশা নির্মূলে আমরা বস্তি এলাকা ও নর্দমার ওপর আলোকপাত করেছিলাম। এটি নিয়মিত কাজ এবং নিয়মিতভাবেই করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাসময় মশা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। সিটি কর্পোরেশন তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। তাদেরকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপারে প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বাড়ি-ঘর এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পানি জমে না থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশারি টানিয়ে ঘুমানোর একটি চর্চা রয়েছে। কিন্তু এ অভ্যাসটি ক্রমান্বয়ে চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ মশারি টানায় না। তারা প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক ডেঙ্গুতে মারা গেছে- এটি দুঃখজনক। এভাবে কারো মৃত্যু হোক, তা আমরা চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি তার দলের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্ট করেছেন। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ অভিযান সারা বছর অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা মশার প্রজননের বিষয় গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেকে যদি প্রস্তুত থাকে তাহলে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করবে না।’
গুজব ছড়ানো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ইতোমধ্যে তার দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ যেনো গুজব ছড়াতে না পারে, সেব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত কিছু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই চক্রান্ত শুরু হয়। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়িয়েছে সেসব দুর্বৃত্তদের আমরা খুঁজে বের করেছি।
গত সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে গত নির্বাচন যদি অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে তাঁর সরকার থাকতে পারতো না।
সূত্র : বাসস
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন