ব্যস্ততা বেড়েছে যশোরের ‘ব্যাটের গ্রাম’র কারিগরদের
ইংল্যান্ডে জমে উঠেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের লড়াই। এ লড়াইকে ঘিরে দেশে বর্ষা মৌসুমেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ক্রিকেট সামগ্রীর বাজার, বিশেষ করে ব্যাটের। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে ‘ব্যাটের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের কারিগরদের।
এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তৈরি ব্যাট বিক্রি হচ্ছে দেশের অন্তত ৩২টি জেলায়।
জানা গেছে, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট। এরই ফলে ওই গ্রাম পরিচিত লাভ করেছে ‘ব্যাটের গ্রাম’ হিসেবে। তবে নরেন্দ্রপুর ছাড়াও এ ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া, বটতলা, মহাজেরপাড়া, রূপদিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে এখন তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট। এ ব্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ছাতিম, কদম, নিম, পুয়ো, আমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় গাছের কাঠ।
শ্রমিকদের পাশাপাশি গৃহিণী ও কিশোর-কিশোরীরাও পুটিং লাগানো, ঘষামাজা, রঙ করা, স্টিকার লাগানো, প্যাকেটজাত করার কাজ করেন।
স্থানীয়রা জানায়- নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে ব্যাট তৈরি শুরু হয় মূলত সঞ্জিত মজুমদার নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে। তিনি ১৯৮৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে কাঠের শিল্পকমের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে দেশে ফিরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির পদ্ধতি শেখেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাট তৈরি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে শুরু। পরে তার দেখাদেখি আরো অনেকে জড়িয়ে পড়েন এ পেশায়। সঞ্জিত মজুমদারের দুই ছেলে তপন ও সুমন মজুমদারও এখন ব্যাট তৈরির কাজ করছেন।
তপন জানান- উত্তরবঙ্গের জেলা গুলো মূলত তাদের বাজার। দেশের ৩২টি জেলায় এসব ব্যাট বাজারজাত করা হয়। সাধারণত পূর্ণ মৌসুম ধরা হয় অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত। তবে এবার বিশ্বকাপের কারণে বর্ষা মৌসুমেও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
সঞ্জিত মজুমদার জানান- শুরুতে সব কাজ হাতে করা হলেও এখন তা মেশিনে করা হয়। এতে কাজের গতি বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাট তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন- অর্থনৈতিক টানা পড়েনের কারণে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। তবে ফরিদপুর অঞ্চলে ‘বইন্যে কাঠ’ নামে একটি গাছের সন্ধান পেয়েছি। খালপাড়ে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় হয়, হালকা কিন্তু টেকসই। এ কাঠ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট তৈরির ইচ্ছা আছে আমার।
সঞ্জিত মজুমদারের কাছে ব্যাট তৈরির পদ্ধতি শিখে নিজেই কারখানা দিয়েছেন গৌরাঙ্গ মজুমদার নামে এক ব্যক্তি। ব্যাট তৈরির সুবাদে এখন তিনি স্বাবলম্বী। পাঁচ-ছয়জন কর্মী নিয়মিত কাজ করেন তার কারখানায়। অথচ একসময় দিনমজুরি করে তাকে সংসার চালাতে হতো।
গৌরাঙ্গ মজুমদার বলেন- প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যাট তৈরি ও বিক্রির কাজ করছি। আমার কারখানায় সাত থেকে আট প্রকারের ব্যাট তৈরি হয়। প্রতিদিন ন্যূনতম ১০০টি ব্যাট তৈরি সম্ভব। ‘উইলো’ কাঠ পাওয়া গেলে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটও তৈরি করতে পারব। এ অঞ্চলে কেবল আমি একা নই, প্রায় সবাই ব্যাট তৈরির কাজ শিখেছেন সঞ্জিত মজুমদারের কাছ থেকে।
প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাজ করছেন একই এলাকার ওমর আলী। তিনি জানান- প্রকারভেদে প্রতিটি ব্যাট তৈরিতে খরচ ১৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর বিক্রি হয় ৩০ থেকে ২৫০ টাকা। তার অধীন ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। ধরন অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাট তৈরির জন্য শ্রমিককে মজুরি দেয়া হয় ৬ থেকে ২০ টাকা। তাদের তৈরি ব্যাট যশোরের বাজার ছাড়াও বগুড়া, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর অঞ্চলে বিক্রি হয়।
নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজিত বিশ্বাস বলেন, শুধু মিস্ত্রিপাড়ায় ব্যাট তৈরির কারখানা রয়েছে ২০টির বেশি। তবে এ এলাকার একমাত্র সমস্যা কাঁচা রাস্তা। আমরা চেষ্টা করছি, শিগগিরই এ রাস্তা পাকা করতে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইম একাদশ, গদখালি ও পাথরঘাটা সেমিতে
কলারোয়ায় ৮দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় খেলায় ফাইমবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মাধবকাটিকে হারালো স্বাগতিকরা
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সাতক্ষীরা সদরের মাধবকাটি ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
সাতক্ষীরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখবিস্তারিত পড়ুন