প্রফেসর মো. আবু নসর এর কলাম..
মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর
প্রফেসর মো. আবু নসর
‘‘লাইতুল কদর’’ আরবি শব্দ। এর অর্থ অতিশয় মর্যাদাপূণ সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা মহা পবিত্র রজনী। এ রাত্রিকে ‘‘লাইলাতুল কদর’’ হিসেবে নামকরন করার কারন হলো এ রজনীর মাধ্যমে উম্মতে মুহম্মীর সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ রাতে মানবজাতির তাকদির পূননির্ধারনও করা হয়। তাই এ রাত অতি পূন্যময় ও মহাসম্মানিত। এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথ প্রদর্শক ও মুক্তির সনদ মহাবিশ্বের মহাবিশ্বয়কর মহাপবিত্র ঐশীগ্রন্থ আল কোরান অবতীর্ন হয়েছে।
লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত, বরকতময় ও বৈশিষ্ট্য মন্ডিত এ জন্য যে এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব মহাত্ম্য ও মর্যদা সর্বপ্রনিধানযোগ্য। শবে কদর কোরআন নাযিলের রাত। রমজান মাসের এ রাতে পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে হযরত জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ন হয়। কদরের রাতে আল কোরান লওহে-মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়। {দ্রষ্টব্যঃ সুরা বাকারাহ- ১৮৫ ও সুরা দুখান-৩}
একদিন নবী করিম (সা:) বনী ইসরাইলের শামউন নামের একজন আবিদ-জাহিদের দীর্ঘকালের কঠোর সাধনা সম্পর্কে বলছিলেন। সেই মহৎ ব্যক্তি একহাজার মাস লাগাতর দিবাভাগে সিয়াম ও জিহাদে লিপ্ত থাকতেন এবং সারারাত জেগে আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর এক নেক বান্দার কঠোর সাধনার কথা শুনে বলতে লাগলেন হায়! আমারও যদি ঐ লোকটির মতো দীর্ঘায়ু পেতাম তাহলে আমরাও ঐ রকম ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে দিনরাত অতিবাহিত করতে পারতাম। তখন মহান দয়াময় আল্লাহ কোরআন কারিমে সুরা আল-কদর নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাযিল করলেন। এই সুরায় তিনি বলেছেন নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাযিল করেছি মর্যদাপূর্ণ ও মহিমান্নিত কদরের রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ:) এর সমভিব্যবহারে অবতরন করেন তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এ শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত। (সুরা-৯৭ কদর-আয়াত ১-৫)।
ইবনে আবী হাতেম (রা:) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স:) একবার বণী ইসরাইলদের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি একহাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকতেন এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেন নি। মুসলমানরা এ কথা শুনে বিষ্মিত হলে এই সুরা নাযিল হয়। এতে উম্মতের জন্য শুধু এক রাতের ইবাদতই সেই মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর (রা:) অপর একটি ঘটনা এ ভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী ইসরাইলের জনৈক ব্যক্তি সারারাত ইবাদতে মশগুল থাকতেন ও রোজা রেখে সকাল হলেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেতেন এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। তিনি এভাবে এক হাজার মাস পার করে দিতেন। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা এই সুরা কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্য প্রমাণ করেছেন। শবে কদরে কোরআন নাযিলের জন্য এ মহিমান্বিত রাত্রিকে আল্লাহ তাআলা অনন্য মর্যদা দিয়েছেন। এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে ও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র শবে কদরকে লইলাতুল কদর বলে। শবে কদর মাসে মর্যদা প্রাপ্তি ও মর্যদা বৃদ্ধির রাত। যারা তওবা করে পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা ইবাদত বন্দেগি করে তারা কদর লাভ করবে। আল্লাহর নিকট তাদের মর্যদা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। শবে কদর নিজেই মহিমান্বিত ও মর্যাদাসম্পান্ন রাত। শবে কদর যারা লাভ করবে তাদের মর্যাদাও শবে কদর বাড়িয়ে দিবে। এ রাতে আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন। বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তাই সবার উচিত মধ্য সাবান থেকে শবে কদর পর্যন্ত বেশী বেশী তওবা, এস্তেগফার ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ শান্তির ব্যবস্থা করা। যারা রমজান মাসে এবং শবে কদরে তওবা করবে, ইবাদত-বন্দেগি করবে, তাকওয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে ও ভালবাসায় নিজেকে সংশোধন করবে তারাই প্রকৃত মুমিন।
লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট রাত সম্পর্কে আলেম সমাজের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অনুযায়ী (সংখ্যা শুরু অংশের মতো) রমজানের শেষ দশ তারিখের কোন একটি বেজড় রাত হচ্ছে এই কদরের রাত। আবার তাদের মধ্যেও বেশির ভাগ আলেমের মত হচ্ছে সেটি রমজানের সাতাশ তারিখের রাত। বর্ণিত নির্ভরযোগ্য হাদিস গুলির আলোকে হজরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (স:) লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন: সেটি সাতাশের বা ঊনত্রিশের রাত (আবু দাউদ)। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) এর অন্য একটি রেওয়াতে বলা হয়েছে সেটি রমজানের শেষ রাত (মাসনাদে আহমদ)। তবে মাআরিফুচ্ছানাম কিতাবে শবে কদরের ইবাদতের জন্য ২৭ তারিখের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
লাইলাতুল কদরে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাঠে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করা যায়। লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পূন্যময় রজনী। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন। অপর হাদিসে বর্ণিত যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে আত্মসম্পর্কিত হৃদয় নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে আল্লাহ তার ইজ্জত ও মর্যদা বহুগুন বাড়িয়ে দিবেন। রমজান ও শবে কদর মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি, সম্প্রীতি ও মানবতাবোধ সৃষ্টি করে।
লেখকঃ
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কলারোয় সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।
সাবেক কলেজ পরিদর্শক, যশোর শিক্ষা বোর্ড, যশোর।
সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন