সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ: সদর আসনের এমপির সাঙ্গপাঙ্গে সর্বশান্ত নিমাই ঢালী!
ঘুষের পরিমান সাড়ে চার লাখ টাকা। সঙ্গে বাগদা চিংড়ী, কৈ, ভেটকি মাছ, আঙ্গুর, আপেল, কলা ও মিষ্টি ছিল বোনাস। এরপর বাছাই পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চাকরি হয়নি রাজ কুমারের। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ঘুষের পরিমান ছিল ৬ লাখ টাকা। তাই বাছ্ইা পরীক্ষায় ৬ নম্বরে থেকেও চাকুরি হল অসীমের।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৯৬নং ব্যাংদহা প্রাইমারি স্কুলে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে এভাবেই সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবির সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুললেন সদর উপজেলার ব্যাংদহা গ্রামের মৃত রাধাপদ ঢালীর ছেলে নিমাই চন্দ্র ঢালী।
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সামনে অঝর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, তিনি রাইচ মিলের কর্মচারি। সারা জীবনের অর্জিত অর্থ ঘুষ দিয়েও তিনি ছেলের চাকরিটা করাতে পারেননি। সেই শোকে তিনি নিজেই প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন। সাংবাদিকদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের মত মানুষের জন্য এদেশ যেন হারাম হয়ে গেছে।
নিমাই চন্দ্র ঢালী বলেন, ২০১৪ সালে তার ছেলে রাজকুমার ঢালী সদর উপজেলার ব্যাংদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে। চাকরির আশায় তিনি নিয়োগ পরীক্ষার আগে ফিংড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খায়ের সরদারকে ২০ হাজার টাকা দেন। পরে খায়ের সরদারের কথামত ব্যাংদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আশরাফুজ্জামান ও সহ-সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাসকে ২ লাখ টাকা দেন। পরে খায়ের সরদারই তাকে ফোন করে জানান, ৫০ হাজার টাকা সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্যকে দিতে হবে। সে কথা মোতাবেক, গাছ বিক্রি করে তিনি ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে সাতক্ষীরা শহরে আসেন। শহরের অশোক ঘোষের ভিসা অফিসে বসে তিনি সংসদ সদস্যকে দেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পাশাপাশি এতগুলো টাকা দিয়েও ছেলের চাকরি না হওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। ছেলের চাকরির আশায় এ দ্বার থেকে ওদ্বারে হাটতে থাকেন নিমাই চন্দ্র ঢালী। পরবর্তীতে তার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র আরো টাকা হাতানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ফাঁদ পাততে থাকে। সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করার জন্য ওই সাংবাদিককে আরো ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। তাতেও চাকরি হয় নি। বাড়তে থাকে ঘুষের অংক। দহকুলার যুবলীগের ছোটখাটো এক নেতাও বাদ যাননি ঘুষের টাকা নিতে। তাকেও দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এরপর তিনি সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মুখোমুখি হন। চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে সাতক্ষীরা রেড ক্রিসেন্ট অফিসে বসে আরো ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়।
নিমাই চন্দ্র ঢালী বলেন, রেড ক্রিসেন্ট অফিসে গিয়ে তিনি চাকরির বিষয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! নিয়োগপত্রের পরিবর্তে তার হাতে জোটে বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ফলাফলের কাগজপত্র।
এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ হলে সাংসদ তাকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বলেন, চাকরি পেতে তাকে আরো খরচ করতে হবে। পরবর্তীতে ছেলের চাকরি না হওয়ায় তার হতাশা আরো বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চাকরি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে সংসদ সদস্যের ৩জন ঘনিষ্ঠাভজন ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
নিমাই ঢালী আক্ষেপ করে বলেন- শুধু টাকাই নয়, চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্ন সময়ে বাগদা চিংড়ি, কৈ মাছ, ভেটকি মাছ, আপেল, কলাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি নিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করেছে। সাড়ে চার লাখ টাকা ও এতকিছু দেওয়ার পরেও তার ছেলের চাকরি হয়নি। চাকরি পেয়েছে নিয়োগ পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকারী অসিম কুমার দাশ। এমপি’র ঘনিষ্ঠভাজনরা ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে অসিমকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে।
কাদো কাদো কণ্ঠে নিমাই ঢালি বলেন, ছেলের চাকরি না হওয়ায় তিনি খায়ের সরদারের বাড়িতে যান টাকা ফেরত চাইতে। তবে টাকা ফেরত পাওয়ার পরিবর্তে তিনি চরমভাবে লাঞ্ছিত হন। এই শোকে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। এতে প্যারালাইজড হয়ে বর্তমানে পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন। ফলে তার চাল-কলের চাকরিটাও চলে যাওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন তিনি।
টাকা ফেরত পেয়েছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রসাত্মক অথচ মর্মান্তিকভাবে সংসদ সদস্য তার বাড়ির দ্বি-তলা থেকে টাকার ব্যাগে দড়ি বেঁধে এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। ব্যাংদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস তাকে ১লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর উপজেলা শিক্ষা অফিসার লাবন্য সরকার তাকে ফেরত দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা ফেরত পাওয়ার আশা তিনি ছেড়েই দিয়েছেন।
পরিশেষে তিনি অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল খায়ের সরদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। চাকরিটা না হওয়া দুঃখজনক।
তবে সংসদ সদস্যের পিএস মকছুমুল হাকিম নিতাই ঢালীর নিকট থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
তবে, দেশের বাইরে অবস্থান করায় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন