রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

লিখেছেন আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসর

‘‘শবে মিরাজের তাৎপর্য’’

সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ৬৩ বছর জীবনের অসংখ্য ও অগনিত বিশেষত্বের মধ্যে সবচেয়ে গৌরবমন্ডিত, বৈশিষ্টমন্ডিত, গৌরবজ্জল ও চমকপ্রদ ঘটনা হলো মিরাজ বা উর্দ্ধজগত ভ্রমন। মহানবী (সঃ) এর মিরাজ মহাবিশ্বের মহাবিস্বয়।

মিরাজ আরবি শব্দ। মূল শব্দ “উরুজ” অর্থাৎ উত্থান। সাধারন অর্থে ঊর্ধ্বারোহন বা সিঁড়ি বা সোপান । অন্য অর্থে ঊর্ধোলোকে আরোহন বা মহামিলন। ইসলামি পরিভাষায় এটি একটি অলৌকিক ঘটনার স্পস্ট ইঙ্গিত যার সাথে রয়েছে ঈমানের গভীরতম সম্পর্ক । এটি বিজ্ঞানের এবং মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় । মিরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজতে যাওয়া অবান্তর চিন্তা মাত্র । কারন যুক্তি ঈমানের ভিত্তি নয় বরং ঈমানই যূক্তির ভিত্তি। যুক্তির ক্ষমতা যেখানে শেষ, ঈমানের যাত্রা সেখান থেকে শুরু।

মিরাজ মূলত: একটি মোজেজা। মিরাজ বিশ্বের ইতিহাসে শুধু সাধারন ঘটনা নয় বরং মানবতার মুক্তির দূত নবীকুল শিরোমনি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে একটি অত্যাশ্চর্য ও বিস্বয়কর অধ্যায়। ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র শবে মিরাজ খুবিই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যেবোধ সম্পন্ন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ৫০ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়াতের দশম বর্ষে, হিজরতের দেড় বছর পূর্বে ৬২০ খৃষ্ট্রাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিথ দিবাগত রাতে লাইলাতুল মিরাজের মহিমান্বিত ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে।
মিরাজের প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ মক্কা নগরের কাবা শরিফে বা মসজিদুল হারামের হাতিম থেকে পবিত্র জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত বোরাকে আরোহন ও অবতরন করা পর্যন্ত ইহলোক ভ্রমনকে “ইসরা” বলা হয়। এখান থেকেই নূরের চলন্ত সিঁড়ি যোগে মহাকাশ তথা উর্দ্ধলোকে সফরকে মিরাজ বলে । সামগ্রিক ভাবে এ নভোমন্ডল পরিভ্রমন শবে মিরাজ নামে পরিচিত।

পৃথিবীর ইতিহাসে এহেন শীর্ষস্থানীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা পবিত্র কুরআনে একাধিক সুরায় ও হাদিস শরিফে সর্বস্তরে লাইলাতুল মিরাজের বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সঃ) মিরাজের রজনীতে আল্লাহর আদিগৃহ পবিত্র ক্বাবাগৃহের চত্বরে নিদ্রিত ছিলেন। এ সময় আল্লহর নির্দেশে গভীর রাতে হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও হযরত মিকাইল (আঃ) নবীজির নিকট আগমন করেন। মহানবী (সঃ) কে হাতিমের কাছে নিয়ে আসা হয়। পরে বিদ্যুতের চেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন একটি বেহেশতী যান “বোরাকে” নবীজিকে আরোহন করানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকে। এক হাজার মাইল দূরুত্বে প্রথমে মদিনা মুনাওয়ারা পরে সিনাই পর্বত, তারপর হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মস্থান “রায়তে লাহম” হয়ে এক নিমিষে চোখের পলকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দসে গিয়ে পোঁছালেন। এখানে সকল নবী রাসুল নবীজিকে প্রানঢালা স্বাগতম ও অপূর্ব সংবর্ধনা জানান।
হযরত জিব্রাইল আমিন আযান ও ইকামত দেন। নবী রাসূলদের মুকুটমনি সেখানে আম্বিয়া কেরামগনের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজের জামাতে ইমামতি করেন। তিনি হলেন ইমামূল মুরসালিন অর্থাৎ সকল নবী রাসূলের ইমাম। নামাজের পর জিব্রাইল (আঃ) উপস্থিত সকলের সঙ্গে রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দেন।

নৈশ ভ্রমনের প্রথমাংশ সমাপ্ত হওয়ার পর নবী করিম (সঃ) পুনরায় বোরাকে আরোহন করলে তা দ্রুত গতিতে ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা শুরু করে । প্রথম আসমানে হযরত আদম (আঃ), দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা (আঃ) ও ইয়াহিয়া (আঃ), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ), চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস (আঃ), পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আঃ), ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আঃ) এবং সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সঙ্গে মহানবী (সঃ) এর সাক্ষাত হয় এবং পরস্পর শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় হয়।
সপ্তম আসমানে অবস্থিত আসমানি ক্বাবাগৃহ বায়তুল মামুরে তিনি অসংখ্য ফেরেস্তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন।

এরপর, তিনি জিব্রাইল (আঃ) এর সঙ্গে বেহেস্থ ও দোযখ পরিদর্শন করেন। এভাবে সপ্তম আসমান থেকে “সিদরাতুল মুনতাহা” পর্যন্ত এসে সফর সঙ্গি সফর সঙ্গী হযরত জিবরাঈল (আঃ), হযরত মিকাঈল (আঃ) ও রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর ঐশী বাহন বোরাকের গতি স্থির হয়ে যায়। জিবরাঈল (আঃ) এখানে থমকে দাড়িয়ে মহানবী (সঃ)কে বললনে যে, সামনে অগ্রসর হওয়ার আর কোন ক্ষমতা তার নেই। এখানেই রাসুলাল্লাহ (সঃ) ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ)কে তার স্বরূপে দেখতে পান। নবীজির বাহনের এখানে পরিবর্তন হয়।

‘রফরফ’ নামক বিশেষ স্বর্গীয় বাহনে আরোহণ করে রাব্বুল আলআমিনের অসীম কুদরতে কল্পনাতীত দ্রুত বেগে ৭০হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে মোয়াল্লার (আরশে আজীম) সন্নিকটে পৌছিয়ে আল্লাহ’র দরবারে হাজির হলেন। নূর আর নূরের সৌরভের মহাসমারোহে তিনি অভিভূত হয়ে যান। এখানেই আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দিদার ও কথোপকথন হয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একমাত্র মহামানব যিনি সশরীরে চর্মচক্ষে এ সময়ে আল্লাহ’র একান্ত সান্নিধ্য লাভ করেন। রাসুলাল্লাহ (সঃ) আল্লাহর নৈকট্য, সান্নিধ্য ও দিদার লাভ করার পর মহান গরিমায় মহীয়ান হয়ে তার প্রশংসা ও গুনকীর্তণ করেন। তার করুণা ও শুভেচ্ছার নিদর্শণ স্বরূপ পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ’র বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ওই রাত ও ঊষার সন্ধিক্ষণে আবার মক্কায় নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ফিরে এসে দেখতে পান তার অজুর পানি তখনো গড়াচ্ছে এবং বিছানা ঊষ্ণই ছিল।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী (সঃ) এর এই বিষ্ময়কর ও আশ্চার্যজনক ভ্রমণে দীর্ঘ ২৭বছর কেটে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য প্রথম পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলেও পথিমধ্যে হযরত মুসা (আঃ) এর পরামর্শে আল্লাহর দরবারে সুপারিশক্রমে ১০ বারে কমতে কমতে পাঁচ ওয়াক্তে এসে দাড়ায়। তবে পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সমান সওয়াবদানভুক্ত হিসেবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, নামাজ যেহেতু আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের বাস্তবরূপ সেহেতু নামাজ আল্লাহর সঙ্গে মিরাজ সমতূল্য। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় এবং মুমিনগণ আত্মিকভাবে আল্লাহর দিদার পেয়ে থাকে। বস্তুত: মহানবী (সঃ) এর মিরাজ একটি বিষ্ময় সৃষ্টিকারী মোজেজা এবং এটি রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বেও জলন্ত প্রমাণ।

রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর মিরাজের অনুপম শিক্ষা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবিবকে নিজের সানিধ্যে ডেকে নিয়ে তাকে সমাজ সংষ্কারের একটি পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মহাবিশ্বে পরিভ্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টি রহস্য উদঘাটনের পরম সৌভাগ্য রাসুলাল্লাহ (সঃ) কে প্রদান করে মানব মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহ তায়ালা মিরাজের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন। এ রাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে মহানবী (সঃ) এর ইমামতিতে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল নবী রাসুলের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে নবীজির সর্বশ্রেষ্ঠত্ব ও তার নৈতিক, আদর্শিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার অনুসরণীয় বিশ্বজনীন স্বরূপটিই প্রমাণিত হয়।

 

লেখক:
আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসর
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।
প্রাক্তন কলেজ পরিদর্শক, যশোর শিক্ষা বোর্ড।
প্রাক্তন ডেপুটি রেজিস্ট্রার, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

একই রকম সংবাদ সমূহ

১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন

‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি

সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন

  • কলারোয়ায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমন
  • কলারোয়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
  • কলারোয়ায় ‘মিনা দিবস’ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
  • কলারোয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • কলারোয়ায় দলীলি সম্পত্তি জবরদখল ঠেকাতে সংবাদ সম্মেলন
  • ‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
  • কলারোয়ার বেত্রবতী হাইস্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ শীর্ষক স্মৃতিচারণ
  • কলারোয়ায় মন্দিরে মন্দিরে দূর্গাদেবীর আবির্ভাব ঘটাতে চলছে রং-তুলির আচঁড়
  • কলারোয়ার জয়নগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠন
  • সংবাদ প্রকাশের পর আপডেট হলো কলারোয়া প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য
  • কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সভা অনু্ষ্ঠিত
  • কলারোয়ায় ১নং সীমান্ত পিলার এলাকা পরিদর্শনে ভূমি দপ্তরের বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ কর্তারা