ভোট হতে পারে ২৩ ডিসেম্বর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ৮ নভেম্বর
আগামী ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই দিন বিকালের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করবেন।
ইসির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০ অথবা ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হতে। তবে ২৩ ডিসেম্বরকে ভোটের তারিখ রাখার পক্ষে কমিশন।
রবিবার কমিশন সভা শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, আগামী ৮ নভেম্বর আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে এই তফসিল ঘোষণা করবেন। ঘোষণা অপরাহ্নে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারআগে তফসিল চূড়ান্ত করতে সিইসি কক্ষে জরুরি ভিত্তিতে ৩৯তম কমিশন ডাকা হয়।
তবে ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হলেও বৈঠকে মনোনয়নপত্র দাখিলও ভোট গ্রহণের তারিখসহ বিস্তারিত সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি। ৮ নভেম্বর সকাল ১০টায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে কমিশনের আরেকটি সভায় এ সময়সূচি নির্ধারণ এবং সিইসির ভাষণ রেকডিং সম্পন্ন করার পর তা প্রচার হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের এই অনুরোধ ইসি বিবেচনা করেছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ৪ নভেম্বরই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ৪ নভেম্বরের পরিবর্তে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা আশা করছি ঐক্যফ্রন্ট ৮ নভেম্বরের আগেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপের সুযোগ পাবে।
গত শনিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাধোরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমরা আট তারিখ পর্যন্ত যেতে পারছি না। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫টি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বসতে চায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে। এদিনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে রাজনৈতিক দল/ জোটগুলোর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নিবৃাচনের তফসিলের দিনক্ষণ ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এদিকে তফসিল ও ভোটগ্রহণের মধ্যে কত দিনের ব্যবধান থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘একটা স্ট্যাণ্ডার্ন্ড সময় অনুযায়ী আমরা ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবো। এটা ৪৫ দিনের কাছাকাছি হতে পারে।’ গত ১৮ অক্টোবর ই্উরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলকে সিইসি জানিয়েছিলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির সাথে নির্বাচনের কমিশনের সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ হয় ১ নভেম্বর। এ অবস্থায় ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল ২ ও ৩ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ১ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে এ নির্বচনের প্রস্তুতি নিয়ে সাক্ষাৎ শেষে সিইসি কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের জানান, ৪ নভেম্বর তফসিল নিয়ে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
ইসি সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাজনৈতিক দল বা জোটের সংলাপকে বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের ২০ অথবা ২৩ তারিখের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে। এছাড়াও ২৭ ডিসেম্বরকেও বিবেচনাও রাখা হয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর ভোট গ্রহণ হয় তফসিল ঘোষণার ৪০ থেকে ৪৫দিনের ব্যবধানে। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের ৪৫ দিন আগে। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর ঘোষিত ওই তফসিলে ১৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা এ তফসিল অনুসারে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে বিরত থাকে। এরপর সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতার মাধ্যমে ২৩ নভেম্বর পুন:তফসিল ঘোষণা করে ২৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর যে তফসিল ঘোষণা করা হয় তাতে ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জামা দেয়ার শেষ দিন, বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ১৩ ডিসেম্বর এবং ভোট গ্রহণের তারিখ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এতে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণে সময়ের ব্যবধান ছিল ৪০ দিন। সে সময় নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণের সময় আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল কমিশনের।
অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল :
সন্ধ্যা সাতটায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহণের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তার সাথে অনলাইনে মনোনয়নপত্র গ্রহণের জন্য আমরা বিধি প্রণয়ন করেছি। সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। ইভিএম ব্যবহারের বিধিমালায় একইভাবে আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। নির্বাচনে সেনাবহিনী মোতায়েনের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও শাহাদত হোসেন চৌধুরী জানান। বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের কথা জানান তিনি। তবে ক’দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা হবে নিশ্চিত জানাননি এ নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নিষ্পত্তি করবো কিনা সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি। যেহেতু আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয় রয়েছে; বাধ্যবাধকতা রয়েছে। খুব খুব শিগগির তা আমরা তা করবো। ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কমিশনের ৩৮ তম সভা চলে। সন্ধ্যা ছয়টার পর বসে ৩৯ তম কমিশন সভা। এ সভায় তফসিল কবে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কমিশন সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো :রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সীমিত আসনে ইভিএম, বিধিমালা চূড়ান্ত :
অধ্যাদেশ জারির পর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিধিমালাও চূড়ান্ত করেছে ইসি। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে তা গেজেট আকারে জারি করবে ইসি সচিবালয়। গত শনিবার শুরু হওয়া মূলতবি সভায় গতকাল বিকেলে এ বিধিমালা চূড়ান্ত রুপ পায়। এর মাধ্যমে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রযুক্তির সহায়তায় ভোটগ্রহণের পথ খুলল। তবে কি পরিমান আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, কত সংখ্যক কেন্দ্রে বা আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নাই। তবে এটা সীমিত আকারে হবে এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ভোটারদের শিক্ষা দিক্ষা বিবেচনায় নিব।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের অধীনে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন