শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

একান্ত সাক্ষাতকার

কৃষি-খামারে দৃষ্টান্তের আলোয় উদ্ভাসিত কলারোয়ার আকলিমা

কলারোয়ার এক নারী প্রতিভা “আকলিমা”, যে কিনা সকল প্রতিকুল পরিবেশ অতিক্রম করে সফলতার শীর্ষে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্ব্বোচ খেতাব “বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে গ্রহন করেছেন তিনি। একজন নারীও যে কৃষিসহ নানান বাহ্যিক কাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারেন তার দৃষ্টান্ত তিনিই। কলারোয়ার দেয়াড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আকলিমা বিভিন্ন সংগঠন থেকে সন্মানসুচক ১৮টি পদকে সম্মাননা লাভ করেছেন।

সম্প্রতি প্রতিভাবান ‘আকলিমা’ একান্ত সাক্ষাৎকার দেন “কলারোয়া নিউজের” জন্য। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেছেন কলারোয়া নিউজের বার্তা সম্পাদক শিক্ষক শেখ শাহাজাহান আলী শাহিন :

কলারোয়া নিউজ :- আপনার নাম ও ঠিকানা কি?
আকলিমা- আকলিমা, পিতা- মৃত শামছুদ্দিন সরদার, মাতা- সুফিয়া খাতুন, গ্রাম- পাকুড়িয়া। আমরা ৪ বোন, কোন ভাই নেই। আমি সবার ছোট।

কলারোয়া নিউজ :- আপনি কোন কোন পদে আছেন?
আকলিমা- ইউপি সদস্য (মহিলা), সংরক্ষিত মহিলা আসন ৪,৫,৬ দেয়াড়া ইউপি ও ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান এবং কলারোয়া উপিজেলা সংরক্ষিত মহিলা আসন (কেরালকাতা, কুশোডাঙ্গা, দেয়াড়া)।

কলারোয়া নিউজ :- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা?
আকলিমা- এসএসসি-১৯৯৫, এইচএসসি-১৯৯৭, ইতিহাসে অর্নাস-২০০৩ এবং ইতিহাসে মাস্টার্স, বিএল কলেজ, খুলনা থেকে ২০০৪ সালে।

কলারোয়া নিউজ :- একজন মেয়ে হিসাবে কেন আপনি কৃষি কাজে আগ্রহী হলেন?
আকলিমা- ২০০০ সালে বন্যার সময় আমাদের এলাকায় সব ডুবে যায়। আমি তখন খুুলনাতে পড়াশুনা করি। খুলনা থেকে বাড়ি এসে দেখি গ্রামের সব মাঠ ডুবে গেছে। কোথাও কোন কাজ নেই। আমার পিতা তখন একদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে বাড়ি এসে ক্লান্ত হয়ে হয়ে বলে আর পারছি না। নিজের জমি সব শেষ। আর কোন কাজ করতে পারে না। সংসারে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। বাবা, ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন সংসারে অভাবে তাড়নায় হাল ধরতে হবে আমাকে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন একদিন নিজেদের প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমি দেখতে যায়। চিন্তা করলাম যে, যদি এই জমিগুলো কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে তো সাবলম্বী হতে পারি। সেই মোতাবেক কলারোয়া কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। তখন কৃষি অফিসের মনির ভাই আমাকে সার্বিক সহযোগীতা করেন। তিনি আমাকে উৎসাহ দেন ও কিভাবে ফসল ফলাতে হবে তার শিক্ষা দেন। সেই মোতাবেক আমি বন্যার পরে নিজের জমিতে কৃষি কাজে নেমে পড়ি। এবং সফলতার মুখ দেখতে থাকি।

কলারোয়া নিউজ :- এই একজন মহিলা হিসাবে কৃষি কাজ করতে যেয়ে গ্রামের লোকের বা সামাজিক ভাবে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কী?
আকলিমা- (একটু হেসে) সে কথা বলার মত না। চারিদিকে ঢিঢি পড়ে গেল। সব গেল শেষ হয়ে। আরে আকলিমা মাঠে নেমেছে এবার গজব পড়বে। আর গ্রামের কোন মহিলারাও যেন আমার সাথে কথা বলতে চায় না। পুরুষরা তো নানা ভাবে তীর্যক বাক্য ব্যবহার করতো, আমি শুধু মুখ বুঝে সহ্য করেছি। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেছি।

কলারোয়া নিউজ :- কৃষি কাজে মনোনিবেশ করার পর কি চিন্তা করলেন?
আকলিমা- আমি যখন কৃষিকাজ শুরু করলাম তখন গ্রামে দেখলাম মহাজন বা ফডিদারদের দৌরাত্ম। তাতে গ্রামের মানুষ পরিশ্রম করে ঠিকভাবে নায্য ফসল ঘরে তুলতে পারে না বা সঠিক মূল্য পায় না। সে বিষয়টি কৃষি অফিসে আলাপ করে একটি প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করে দেন। আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি কোমরে গামছা পেচিঁয়ে মাঠে “নয়ন মনি ধান” ব্লকে চাষ করি। তাতে আমি ১৮ মন ধান পায়। তখন গ্রামের কৃষকরা এই উৎপাদন দেখে আমার কাছে আসে। আমি কৃষি অফিসের মনির ভাইয়ের সাথে আলাপ করে গ্রামের ১৫ জন মহিলা এবং ১ জন পুরুষ নিয়ে ও.ঈ.গ. বিষয়ে এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি।
তারপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করে ঐ ২৫ জন কে নিয়ে “পাকৃড়িয়া ও.ঈ.গ. ক্লাব” ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে “পাকুড়িয়া ঈ.ও.এ (ফসল) কৃষি মহিলা সমবায় সমিতি” গঠন করি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল- গ্রাম্য মহিলাদের মাঠে নিজ হাতে কৃষিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা।

কলারোয়া নিউজ :- আপনি কৃষি কাজে নিজ উদ্দেগ্যে কি কি কাজ করেছেন?
আকলিমা- আমি নিজে ধান চাষ করি এছাড়া কম্পোষ্ট সার বা কেচোঁ সার ক্ষেত্র তৈরী ও প্রশিক্ষণ প্রদান, নিজস্ব উদ্যেগে বাড়িতে সবুজ বাগান (১২০ টি) লম্বু গাছ রোপন এবং বাড়িতে সকল প্রকার বিষমুক্ত সবজি চাষ করেছি।

কলারোয়া নিউজ :- গ্রামের উন্নয়নে বা গ্রাম্য মহিলাদের উন্নয়নে আপনি কি কিছু করেছেন?
আকলিমা- “পাকুড়িয়া ঈ.ও.এ (ফসল) কৃষি মহিলা সমবায় সমিতি” থেকে নিয়মিত ভাবে গরীব ও অসহায় দের জন্য বিনা সুদে ঋনের ব্যবস্থা করণ, কন্যা দায় গ্রস্থদের আর্থিক সাহায্য করা, গর্ভবতী দের সেবা বা চিকিৎসা সেবা দেয়া, মহাজনদের নিকট থেকে সুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিনা সুদের ব্যবস্থা করা । কৃষকরা এই সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ফসল উঠলে একে বারে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।

কলারোয়া নিউজ :- আপনি কৃষির উপর কোন প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন কি?
আকলিমা- হ্যাঁ,আমি কলারোয়া কৃষি অফিসের মনির ভাইয়ের সহযোগীতায় কলারোয়াতে চাষের উপর কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ পায়, এছাড়া পাবনা হটিকালচার থেকে পশুপালন ও ফসলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি এবং বর্তমানে প্রশিক্ষক হিসাবে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

কলারোয়া নিউজ :- মাস্টার্স পাস করেও কেন চাকরি করেন নি?
আকলিমা- মাস্টার্স পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু যেখানে আবেদন করি সেখানেই শুধু টাকা চাই কিন্তু আমার পরিবারের টাকা দেয়ার মত কোন সামর্থ ছিল না। তাছাড়া আমার কোন মামু-খালু নেই, টাকাও ছিল না। আর ঠিক সেই সময়ে বন্যা আর আমার পিতার মৃত্যু আমাকে অভাবের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়। বোনেদের বিবাহ দিতে হবে আর মায়ের চিকিৎসা করাতে হবে। এই সব মিলেয়ে আর আমার চাকরির পিছনে ছুটে যাওয়া হল না। (হাসি মুখে বললেন) এখন কৃষি কাজ ও ইউপি সদস্য হিসেবে বেশ সুখেই আছি।

কলারোয়া নিউজ :- আপনি এখন পর্যন্ত কি কি সন্মান সুচক পদক লাভ করেছেন?
আকলিমা- ধন্যবাদ, মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন থেকে ১৮ টি সন্মান সুচক পদক পেয়েছি। অবশ্যই তার মধ্যে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে “বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক” গ্রহন করা। উল্লেখ যোগ্য পদক প্রাপ্তি গুলো হলো: ১। মাদার তেরেসা পদক ২। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পদক ৩। মাওঃ ভাসানী পদক ৪। কাজী নজরুল ইসলাম পদক ৫। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব থেকে সন্মমনা পদক এবং সেরা প্রাপ্তি “বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক”।

কলারোয়া নিউজ :- আপনার এই কঠিন পথ চলায় কাদের নিকট থেকে সহযোগীতা বা উৎসাহ পেয়েছেন?
আকলিমা- অবশ্যই কলারোয়া কৃষি অফিসের মনির ভাই, বর্তমানে কৃসি অফিসার মহাসীন স্যার, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ভাই এবং মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। এনাদের নিকট আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।

কলারোয়া নিউজ :- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আকলিমা- গ্রাম্য মহিলাদের নিয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করা। নিজ হাতে যে কোন কাজ করতে উদ্বৃত করা। যেখানে কৃষি প্রধান দেশ আমাদের বাংলাদেশ। সে মহিলা বা পুরুষ সবাই কে কৃষি কাজে নিজ হাতে করে সেই ব্যবস্থা করা বা উদ্বুদ্ধ করা।

কলারোয়া নিউজ :- বর্তমান তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
আকলিমা- নিজে শিক্ষিত হয়ে কারো মুখাপেক্ষি না থেকে নিজে নিজে যে কোন কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই তরুনদের কে চাকরির প্রতি মুখাপেক্ষি না থেকে নিজ হাতে যে কোন কাজ করার আহবান জানান।

কলারোয়া নিউজ :- রসিক প্রশ্ন করি একটা, আপনি বিয়ে করেন নি কেন?
আকলিমা- আমার কোন ভাই না থাকায় আর চার বোনের ও মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে তা বুঝতেই পারিনি। তাছাড়া জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। আল্লাহ চাইলেই সবই সম্ভব।

কলারোয়া নিউজ :- আপনি কি “কলারোয়া নিউজ” দেখেন?
আকলিমা- হ্যাঁ, আমি নিয়মিত “কলারোয়া নিউজ” দেখি ও পড়ি।

কলারোয়া নিউজ :- “কলারোয়া নিউজ”কে একটু সময় দিয়ে সাক্ষাতকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আকলিমা- আপনাদের “কলারোয়া নিউজ” পরিবারকে আমার খামার ও বাগান পরিদর্শনের দাওয়াত রইল। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইল। কলারোয়া নিউজ ও আপনাকে ধন্যবাদ।

ছবিতে আকলিমা ও তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি:

একই রকম সংবাদ সমূহ

১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন

‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি

সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন

কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন

  • কলারোয়ায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমন
  • কলারোয়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
  • কলারোয়ায় ‘মিনা দিবস’ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
  • কলারোয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • কলারোয়ায় দলীলি সম্পত্তি জবরদখল ঠেকাতে সংবাদ সম্মেলন
  • ‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
  • কলারোয়ার বেত্রবতী হাইস্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ শীর্ষক স্মৃতিচারণ
  • কলারোয়ায় মন্দিরে মন্দিরে দূর্গাদেবীর আবির্ভাব ঘটাতে চলছে রং-তুলির আচঁড়
  • কলারোয়ার জয়নগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠন
  • সংবাদ প্রকাশের পর আপডেট হলো কলারোয়া প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য
  • কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সভা অনু্ষ্ঠিত
  • কলারোয়ায় ১নং সীমান্ত পিলার এলাকা পরিদর্শনে ভূমি দপ্তরের বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ কর্তারা