সাতক্ষীরায় দেড় লক্ষাধিক পৌরবাসির পানি সংকট চরমে
সাতক্ষীরা পৌরসভায় পানি সংকট চরমে উঠেছে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়া ও সরবরাহকৃত পানি নোংরা হওয়ায় চরম দূর্ভোগে রয়েছেন দেড় লক্ষাধিক পৌরবাসি। এছাড়া এসব পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহর উপকণ্ঠের বাটকেখালিতে নির্মিত পানির প্লান্ট চালু হলে স্থায়ীভাবে নিরসন হবে এ সংকটের।
পৌরসভার পানি বিভাগের কর্মকর্তা সেলিম সারোয়ার জানান- পৌর এলাকার মধ্যে পানির মোট গ্রাহক ৯ হাজার ৩৬১জন। এরমধ্যে মিটারসহ গ্রাহক ৪ হাজার ২৪ জন। মিটার ছাড়াই সরাসরি লাইনের গ্রাহক ৫ হাজার ৩৭৭জন। প্রতিটি মিটারের মাসিক আবাসিক পানির বিল ৯০ টাকা এবং অনাবাসিক বিল ১৮০ টাকা। পাশাপাশি মিটার ছাড়াই আবাসিক গ্রাহকের মাসিক বিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে অনা বাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এসব চাহিদার বিপরিতে পৌর শহরে দৈনিক পানির চাহিদা ১লাখ ৩০ হাজার লিটারের বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৮৫ হাজার লিটার। জেলা শহরে সর্বোচ্চ পানির বিল আসে জেলাখানা থেকে। সেখানে প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে বিল প্রদান ও নিয়মিত আদায় করা হয়।
তিনি জানান- বর্তমানে পৌরবাসির কাছে পানির বিল বকেয়া রয়েছে ১কোটি টাকার উর্দ্ধে। বিল আদায় কার্যক্রম অব্যহত থাকলেও সেটির অনেকটাই ধীর গতি। বিগত ২০১১ সালের আদম সুমারীর তথ্যনুযায়ী ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২২জন পৌরসভার বাসিন্দা থাকলেও এখন সেটি বে-সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ৭০ হাজার জনগোষ্টির এই পৌরসভায় কোটি টাকার উর্দ্ধে বিল বাকি থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন- শহরের সব এলাকায় পানি সরবরাহ ঠিকঠাক মত থাকলেও রসুলপুর এলাকার কিছু গ্রাহকের বাসায় পানি উঠে না। এটা নিয়ে দীর্ঘ সমস্যা থাকলেও সেটি সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।
পৌরসভার পানি বিভাগের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম জানান- পানি যাক আর না যাক বাসায় মিটার সংযোগ থাকলে তাকে বিল দেয়া লাগবে। নইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে মোট গ্রাহকের ২৫ ভাগ ঠিকমত পানি না পাওয়ার কথা স্বীকার করলেন এই কর্মকর্তা।
শহরের আট পুকুর এলাকার একটি বাসা বাড়ির মালিক আব্দুর রহমান জানান, প্রায় ১০ বছরের অধিক সময় আমি এখানে বাড়ি করেছি। পানির মিটার সংযোগও আছে এবং প্রতি মাসে বিল দিয়ে যাচ্ছি পৌরসভার পানি পাইনা। ফলে অতিরিক্ত মিটার সংযোগ করে পানি তুলতে হয় এতে বিদ্যুত খরজ বেড়েই যাচ্ছে।
এদিকে পৌরসভার পানি বিভাগের হিসাব সহকারি জহুরুল হক জানান- শহরের মুনজিতপুর এলাকার শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি এনডিসির নামে ১লাখ ৪১হাজার ৭০০টাকার বিল বকেয়া রয়েছে। বিগত ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পানির বিল পরিশোধ করেন না। শহরের সুলতানপুরের আসাদুল হকের বাসায় পানির বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১০ টাকা। জুলাই ১১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি বিল পরিশোধ করেননি। সুলতানপুরের আবু বক্কর সিদ্দিকের বাসায় বিগত ১৫ সাল থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত পানির বিল বাকি ৩৫ হাজার ৪৯০ টাকা। শহরের ইটাগাছা হাটের মোড় এলাকার আব্দুস সবুরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের নামে পানির বিল বকেয়া আছে ৪৬ হাজার ৬০০ টাকা। সরকারি কলেজে পানির বিল বাকি ছিল ২ লাখ টাকা। তাগাদায় ১ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি টাকার কোন খোজ নেই।
কয়েকটি বিলের হিসাব দিয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান- মাত্র ৫/৬টি পানির মিটারে এই পরিমান বিল বকেয়া থাকলে আরও তো আছে। ফলে নানা কারণে পৌরসভা জনগনের চাহিদামত পানি সরবরাহ করতে কষ্ঠের মধ্যে পড়ছে, তেমনি আর্থিক সংকটও লেগে আছে।
তবে জেলা শহরের বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠির পানি চাহিদা মিটছে নানা পন্থায়। বর্তমানে জেলায় ২০টির অধিক জার পানির কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে বিএসটিআই অনুমোদিত আছে মাত্র ৩টি। বাকিরা চলছে সব হাওয়ার উপরে। সরকার অনুমোদিত ছাড়াই এসব পানির কোম্পানি গুলো কতটা স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করছে তা নিয়ে রয়েছে রীতিমত উদ্বেগ।
অপর দিকে শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে বিগত ১৪ সালের ২০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় এসে শহরের বাটকেখালি এলাকায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে বৃহৎ একটি পানির প্রকল্প উদ্বোধন করেন। যা বিগত ১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও সেটি চলমান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে নয় ছয়েরও অভিযোগ।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকীন আহম্মেদ চিশতী জানান- ৬ হাজার নগরবাসির কাছে পানির বকেয়া বিল আদায়ে রিমান্ডার দেয়ার পরও সেটি ধীর গতিতে আদায় প্রক্রিয়া অব্যহত আছে। পাশাপাশি বাটকেখালি এলাকার নতুন পানির প্লান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও পরিক্ষামুলক পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে এখন ৮০ ভাগ মানুষ তাদের চাহিদামত পানি পাচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান- পৌরসভার মধ্যে আর্সেনিক মুক্ত টিউবঅয়েল রয়েছে ৬৪৮টি। এর কিছু নষ্ট থাকতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো টিউবঅয়েল এই হিসাবের বাইরে।
তিনি আরও বলেন, বাটকেখালির নতুন পানির প্লান্ট পানি উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। অতি শিঘ্রই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন পানির প্লান্টটি উদ্বোধন করবেন। এখান থেকে প্রতি ১০ ঘন্টায় সাড়ে ৩৫ লাখ লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব হবে। এরপর পৌরবাসির মধ্যে পানির কোন সমস্যা থাকবে না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন