‘রাজনীতি এখন পৈত্তিক সম্পত্তি’
দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন উত্তরাধিকারী অর্থাৎ পরবর্তি প্রজন্ম। কিন্তু রাজনীতিও এখন পৈত্তিক সম্পত্তির মতো পরিবারের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন হচ্ছে। এই বন্টন ব্যবস্থা বহুল প্রচলিত। মন্দ দিক হলো-পৈত্তিক সূত্রে সম্পদ প্রাপ্তদের মধ্যে ভালো লোকের অাধিক্য থাকলেও রাজনীতিকদের মধ্যে তা নেই। তারপরও কেন জানি রাজনীতি নামক মহান আদর্শিক ব্যবস্থাটি আজ পৈত্তিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ব্যবহারের মতো হয় গেছে।
আমাদের দুর্বল সমাজে প্রকটভাবে রাজনীতি নগ্ন চর্চা লক্ষনীয়। রাজনীতির নোংরামির কারণে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শের পরিবর্তন ঘটছে। সমাজে ‘মিউচ্যুয়াল আন্ডারস্টান্ডিং’ একেবারে উঠে গেছে। পচনের দ্বারপ্রান্তে দীর্ঘদিন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা। যারা সমাজের পরিবর্তন ঘটাবে সেই রাজনীতিকরাই এই পরিবর্তনশীল খারাপ সমাজ বির্নিমানে বহুলাংশে দায়ী। কেননা সমাজের যিনি রাজনীতিক তিনি রাজনীতিকে পৈত্তিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে যাচ্ছে। যখন ইচ্ছে তখন রাজনীতিও বেচা-কেনা করছে। এই পরিস্থিতির জন্য সৃষ্টি হয়েছে কিছু ‘পতিতা’। আমাদের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল এই কিছু ‘রাজনৈতিক পতিতা’ সৃষ্টির উর্বরভূমি।
পতিতা কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে হয় না। বাস্তবতার কঠিন পরিস্থিতিতে পরাজিত বা প্রতারিত হয়ে কেউ কেউ পতিতাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করে। দিনরাতে পতিতারা বারবার অর্থের বিনিময়ে দেহ বিক্রি করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু ‘রাজনীতিক পতিতারা’ কি করে? তারা তো দেহে বিক্রি করতে পারে না। তাদের দেহে কোন রসকষ নেই। তাদের দেহ আকৃষ্ট করার মতো ফিগারও নেই। যে জিনিসটি আছে, সেটি হলো ‘কথা’। একজনের মিথ্যা কথা অন্য রাজনীতিকের কাছে সত্যভাবে উপস্থাপন করা। অন্যজনের সত্যকথা আরেকজনের কাছে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা। মিথ্যাকথাকে সত্যভাবে আর সত্যকথাকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপনকারী কিছু রাজনৈতিক পতিতার কারণে ফলাফল কোন বিচার বিশ্লেষন ছাড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতিসাধন। কিছু রাজনৈতিক পতিতার আর্বিভাবে কারণে ‘রাজনীতি’ পচে গন্ধে রুপ নিয়েছে।
সমাজের ভালো কাজে কোন সমাজ অনুরাগীর সম্পৃক্ততা বা কোন ভালো রাজনীতিক আদর্শিক ধারায় চললে তাদের গতিপথকে বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। সেই বাঁধাগ্রস্থ করার কাজটি নিপুনভাবে করছেন কিছু রাজনীতিক পতিতা। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন পৈত্তিক সূত্রেপ্রাপ্ত রাজনীতিক উত্তরাধিকারীরা। সমাজের বিদ্যমান এই নষ্ট প্রথা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ বা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকেছে। অবিশ্বাস এবং অস্বস্তি থেকে জনগন নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্যক্তিমনা হয়ে গেছে।
সম্প্রতি রাজনীতির দৈন্যদশা নিয়ে জনগনের মনের কথা তুলে ধরেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি ‘বাউজ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যতদূর জানি কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর অঞ্চলে ভাইয়ের বউকে ‘বাউজ’ বলে। গরিব মানুষের অসহায়ত্বকে বোঝাতে বলেছেন ‘গরিবের বউ সবারই বাউজ’। রাষ্ট্রপতি বলেছেন , রাজনীতি এখন ‘গরিবের বাউজ’ হয়ে উঠেছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাজনীতি এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। উনি বৃহৎ পরিসরে সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদ এবং ৩ লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে সৃষ্টি বাংলাদেশে সত্য কথা বলার মানুষ সংকোচিত হয়ে গেছে। যারা যুদ্ধ হাতে এই রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের পরবর্তি প্রজন্ম আজ হাতাশায়। কিছু রাজনৈতিক পতিতা সমাজ ব্যবস্থাটাকে চুরমার করে দিয়েছে। আশাবাদি এই কারণে অপচেষ্টা বা কূটকৌশলিরা কখনই স্থায়ি বিজয়ী হতে পারেন না। তাদের সাময়িক জয়ী হয়তো তৃপ্তি দেবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে স্বস্তিতে থাকবো আমরা। কেননা আমরা জনগন, আমরা বাংলাদেশী। বড় পরিচয় হলো, আমি বাংলাদেশী-এটিই আমার পরিচয়, এটিই আমার গর্ব। বাংলাদেশ কখনো পরাজিত হয় না, হবেও না।
লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক ইত্তেফাক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন