দক্ষিণ এশিয়ায় নির্বাচন : বাংলাদেশের পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক যাত্রায় কমবেশি একই ধরনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। তবে দুই পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে এক পক্ষের কোণঠাসা হয়ে পড়া এবং দেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিভক্ত রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল। বুধবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের এমন চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে।
‘দক্ষিণ এশিয়ায় সিদ্ধান্তের সময়: আসন্ন নির্বাচন ও গণমাধ্যম’ (সাউথ এশিয়া ডিসাইটস: আপকামিং ইলেকশন অ্যান্ড দ্য মিডিয়া) শীর্ষক ওই সেমিনারের যৌথ আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনিস্টার এবং শেভেনিং সাউথ এশিয়া জার্নালিজম প্রোগ্রাম। ‘ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্ট’ হাউসে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী এই সেমিনার।
আগামী দুই বছর দক্ষিণ এশিয়ায় অনেকটা নির্বাচনে মৌসুম। এ সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশগুলোতে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কর্তৃত্ববাদী আচরণ, বিরোধী মত দমন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে এ অঞ্চলের নির্বাচনী নিরপেক্ষতা আগাম আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান, গণমাধ্যমের ভূমিকা, নির্বাচনে প্রবাসীদের প্রভাব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুয়া সংবাদের প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টি-এই চারটি ভিন্ন ধাপে চলে দিনব্যাপী আলোচনা।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টারের ‘মিডিয়া হিস্ট্রি’ বিষয়ের অধ্যাপক জেন সিয়াটন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের প্রবণতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের অব্যাহত চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের চিফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স করেসপনডেন্ট গিডিয়ন রচম্যান বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আদর্শ গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে সামনে ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মনোরঞ্জনবাদী রাজনীতির উত্থান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন দেশে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদী অনেকটা একই কৌশলে গণমাধ্যমগুলোকে এড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার ও ফেসবুকে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এই পরিস্থিতি গণমাধ্যমগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে দলীয় নীতির ভিত্তিতে নির্বাচন হলেও বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানকার রাজনীতি দুই পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত। ফলে তৃতীয় কোনো রাজনীতিক দলের উত্থানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের অব্যাহতভাবে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে দেশের সুশীল সমাজকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার ভয়ে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া কঠিন। খালেদা জিয়ার জেলদণ্ড, বিরোধী মত দমন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, যে কোনো উপায়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে।
পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন না করতে পশ্চিমা দেশগুলো সরকারকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু ভারতের একক সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ ওই পরিস্থিতি গায়ের জোরে উতরে যায়।
দর্শক সারিতে উপস্থিত বিবিসির সাবেক সাংবাদিক উইলিয়াম ক্রাউলি বলেন, বাংলাদেশের প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি ভালো উপায় ছিল। কিন্তু সেটি বর্তমান সরকার বাতিল করেছে। বিবিসির আরেক সাবেক সাংবাদিক ডেভিড পেইজ বলেন, সাংবাদিকদের অনেকেই রাজনৈতিক কর্মীর মত আচরণ করেন। তারা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করেন। এটা গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা।
আলোচনা করে একমত হন যে, গণতন্ত্র কেবল বেশি ভোট পেয়ে জিতে যাওয়া নয়। ন্যায় সংগত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করাই আসল কথা। এ কাজে গণমাধ্যমগুলোকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
চ্যানেল ফোর-এর বার্তা প্রধান ডোরোথি বায়ার্ন বলেন, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের চাপ মোকাবিলায় স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চা আরও বেশি বেগবান করতে হবে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায় ও মিথ্যাচার মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে দেশে গণমাধ্যমগুলোর যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। পরিণতির ভয়ে কোনো সংবাদ গোপন না রেখে তা বিদেশি কোনো বন্ধু পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। গণমানুষের কাছে স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে চ্যানেল ফোর এর এই সাংবাদিক বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষ গোপনে ভিডিও চিত্র ধারণ করে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুরতার খবর ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে কাজ করলে প্রভাবশালীরা তথ্য গোপন রাখতে পারবে না।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিবিসির হার্ডটকের উপস্থাপক ডেভিড লিয়ন, বিবিসি রেডিও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ফিল টিনলিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক ম্যানু পিল্লাই, লেখক ও প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগার জেমি বার্লেট, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক নাইমুল করিম এলিন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনিস্টারের শিক্ষক ইফশিতা বসু এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সহকারী অধ্যাপক রাজেশ ভেনুগোপাল প্রমুখ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন