রোজার ফজিলত ও জরুরি মাসাইল
রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: (তরজমা) হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমাজানের রোজা ফরজ করা হলো, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা-১৮৩)
হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমাজান শরিফের রোজ রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় তারাবিহের নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি শরিফ: হা: নং ১৯০১)
রোজার নিয়ত
রমজানের রোজর জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, ‘আমি আজ রোজা রাখবো’ অথবা দিনে আনুমানিক ১১টার পূর্বে মনে মনে এইরূপ নিয়ত করবে যে, আমি আজ রোযা রাখলাম। মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)
বি. দ্র. : আরবি ভালভাবে বলতে পারলে ও বুঝলে আরবিতেও নিয়ত করতে পারবে। অন্যথায় বাংলায় নিয়ত করা ভালো।সাহরি ও ইফতার
রোজাদারের জন্য সাহরি খাওয়া ও ইফতার করা সুন্নাত। বিশেষ কিছু না পেলে সামান্য খাদ্য বা কেবল পানি পান করলেও সাহরির সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
ইফতার খুরমা কিংবা খেজুর দ্বারা করা সুন্নাত। তা না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে এ দু‘আটি বেশী বেশী পড়বেঃ يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ
অর্থঃ হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)
بِسْمِ اللهِ وَعَلى بَرَكَةِ اللهِ
বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বারাকাতিল্লাহ বলে ইফতার শুরু করবে এবং ইফতারের পর নিম্নের দুটি দু‘আ পড়বেঃ
১. اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম।) (আবূ দাঊদ: ১/৩২২)
২. ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى
(অর্থঃ পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে।) (আবূ দাঊদ: ১/৩২১)
৩. ইফতারির দাওয়াত খেলে মেজবানের উদ্দেশ্যে এই দু‘আ পড়বেঃ
اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة
(অর্থঃ আল্লাহ করুন যেন রোজাদারগণ তোমাদের বাড়ীতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতাগণ যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে।) (আস্সুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১, ইবনুস সুন্নীঃ ৪৩৩)
রোজার গুরুত্বপূর্ণ মাসাইল
১. রমজানের প্রত্যেক দিনেই ঐ দিনের রোযার নিয়ত করা জরুরি। একদিনের নিয়ত পুরো মাসের রোজার জন্য যথেষ্ট নয়। (দুররে মুখতার: ২/৩৭৯)
২. যদি কেউ রোজার নিয়ত ব্যতীত এমনিতেই সারা দিন না খেয়ে থাকে, তাহলে এটা রোযা বলে ধর্তব্য হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)
৩. সুবহে সাদিকের পর খানা-পিনা জায়েজ নেই। আজান হোক বা না হোক। লোক মুখে যে প্রচলিত রয়েছে যে, সুবহে সাদিকের পরেও আজান পর্যন্ত খাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ ভুল। (রদ্দুল মুহতার:২/৪১৯)৪. রোজা অবস্থায় গোসল করলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। তবে কুলী করার সময় গড়গড়া করবে না এবং নাকে পানি দেয়ার সময় নাকের মধ্যে জোরে পানি টানবে না। (দুররে মুখতার: ২/৪১৯)
৫. রোজা অবস্থায় কাউকে রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। যদি রক্তদাতার শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে।(রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৯)
৬. রমাজান মাসের দিনে বা রাতে কেউ যদি বেহুঁশ হয়ে যায় এবং তা যদি কয়েকদিন বা অবশিষ্ট পুরো মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে প্রথম যে দিন বেহুঁশ হয়েছে ঐ দিন বাদ দিয়ে বাকী দিনগুলীর রোযার কাজা করতে হবে।(দুররে মুখতার: ২/৪৩২)
৭. রমাজান মাসে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে তার রোজা মাফ হয়ে যায়। তবে পুরো মাসের কোন অংশে সুস্থ হলে পূর্বের রোজাগুলোর কাজা করতে হবে।(আল বাহরুর রায়েক: ২/৫০৭)
৮. হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং তার কাজা আদায় করা জরুরী। এটা জঘন্য পাপকার্য। হাদিসে এইরুপ ব্যক্তির উপর লানত করা হয়েছে। (দুররে মুখতার: ২/৩৯৯)
৯. যদি রোজা অবস্থায় দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায় এবং তা পরিমাণে কম হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। আর যদি রক্ত থুথুর সমান বা থুথু থেকে বেশী হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং তার কাযা করতে হবে। (দুররে মুখতার: ২/৩৯৬)
১০. বাচ্চাকে দুধ পান করালে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু নামাজ অবস্থায় দুধ পান করালে নামায ভেঙ্গে যায়। (দুররে মুখতার: ২/৩৭১)
১১. সফরে যদি কষ্ট হয় তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ আছে বরং না রাখা উত্তম। আর সফরে কষ্ট না হলে রোজা রাখাই হল মুস্তাহাব। তবে রোজা রেখে ভাঙ্গা ঠিক নয়। কেউ যদি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে কাফ্ফারা আসবে কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও গ্রহণযোগ্য মত হল যে, এই সূরতে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪:৪৪)
১২. কেউ রোজা রাখার পর মারাত্নক অসুস্থ হয়ে গেলে অথবা পূ্র্বের রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ আছে। পরবর্তীতে কাজা করতে হবে। একান্ত কাজা করার শক্তি না পেলে উক্ত রোজার ফিদয়া দিতে হবে অর্থাৎ, প্রত্যেক রোজার বদলে একজন গরীবকে দু’বেলা খাওয়াতে হবে বা পোনে দু’সের আটা কিংবা তার মূল্য গরীবকে দিতে হবে। (দুররে মুখতার: ২/৪২২)১৩. নাবালেগ ছেলে-সন্তানদেরকে রোজা রাখার হুকুম করতে হবে, যদি তারা এর শক্তি রাখে এবং এর দ্বারা তাদের কোন ক্ষতি না হয়। আর দশ বৎসর বয়সে রোজা রাখতে শুরু না করলে প্রয়োজনে প্রহার করা যাবে।(দুররে মুখতার: ২/৪০৯)
১৪. রমাজানের দিনের বেলায় কোন ছেলে বা মেয়ে বালেগ হলে বা কোন কাফের মুসলমান হলে কিংবা মুসাফির সফর শেষ করলে বাকী দিন খানা-পিনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঋতুবতী মহিলার হুকুম
১. ঋতুবতী কোন মহিলার যদি দিনের বেলায় স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দিনের বাকী সময় খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। আর কোন মহিলার রোজা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে তার জন্য উপবাস থাকা জায়েজ নেই। বরং সে চুপে চুপে খানা-পিনা করবে এবং পরবর্তীতে রোজাগুলির কাজা করবে। (দুররে মুখতার: ২/৪০৮, ইমদাদুল আহকাম: ২/১৩৯)
২. যদি কোন মহিলা ঔষধ সেবন করে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে তাহলে তাকে পুরো মাসই রোযা রাখতে হবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত করার দরুণ কাজটি ঠিক হবে না। (ফাতাওয়া রহিমিয়া: ৬/৪০৪)
রোযা ভঙ্গ হওয়ার কারণসমূহ
১. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কোন কিছু খাওয়া বা পান করা অথবা স্ত্রী-সহবাস করা। এতে কাজা ও কাফফারা (একাধারে দুই মাস রোজা রাখা) ওয়াজিব হয়। ২. নাকে বা কানে তৈল বা ঔষধ প্রবেশ করানো। ৩. নস্য বা হাপানী রোগীর জন্য ইনহেলার গ্রহণ করা। ৪. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করা। ৫. বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। ৬. কুলী করার সময় পানি গলার ভিতরে চলে যাওয়া। ৭. দাঁতে আটকে থাকা ছোলার সমান বা তার চেয়ে বড় ধরনের খাদ্যকণা গিলে ফেলা। ৮. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পরে জাগ্রত হওয়া। ৯. ধুমপান করা। ১০. ইচ্ছাকৃতভাবে আগরবাতি কিংবা অন্য কোন সুগন্ধি দ্রব্যের ধোঁয়া গলধকরণ করা বা নাকের ভিতরে টেনে নেওয়া। ১১. রাত্র মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরী খাওয়া বা পান করা।
১২. সূর্যাস্তের পূর্বে সূর্য অস্তমিত হয়েছে ভেবে ইফতার করা। এগুলোতে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়, কাফফারা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার পর দিনের বাকী সময় রোজাদারের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার: ২/৪০২)
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ
১. মিথ্যা কথা বলা। ২. গীবত বা চোগলখোরী করা। ৩. গালাগালী বা ঝগড়া-ফাসাদ করা। ৪. সিনেমা দেখা বা অন্য কোন কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হওয়া। ৫. সকাল বেলায় নাপাক অবস্থায় থাকা। ৬. রোজার কারণে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা। ৭. কয়লা, মাজন, টুথ পাউডার, টুথপেষ্ট বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা। ৮. অনর্থক কোন জিনিস মুখের ভিতরে দিয়ে রাখা। ৯. অহেতেুক কোন জিনিষ চিবানো বা চেখে দেখা। ১০. কুলী করার সময় গড় গড়া করা। ১১. নাকের ভিতর পানি টেনে নেয়া। (কিন্তু উক্ত পানি গলায় পৌঁছলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।) ১২. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা। ১৩. ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করা। (দুররে মুখতার: ২/৪১৬, বাদাইউস সানায়ে: ২/৬৩৫, কিতাবুল ফিকহ: ১/৯২৩)
যে সমস্ত কারণে রোজার ক্ষতি হয় না
১. ভুলক্রমে পানাহার করা। ২. আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা বা ফুল ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া। ৩. নিজ মুখের থুথু ও কফ জমা না করে গিলে ফেলা। ৪. শরীর বা মাথায় তৈল ব্যবহার করা। ৫. ঠান্ডার জন্য গোসল করা। ৬. ঘুমে স্বপ্নদোষ হওয়া। ৭. মিসওয়াক করা। ৮. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া ৯. চোখে ঔষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা। ১০ যে কোন ধরনের ইন্জেকশন লওয়া।(রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার: ২/৩৯৪)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন