শিক্ষিতদের ফসলের মাঠে নিতে চান প্রধানমন্ত্রী
পড়াশোনা শিখে অনেকেই কৃষি কাজ করতে সংকোচ বোধ করেন বলে প্রধানমন্ত্রী ছোট বেলা থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিতে চান। তিনি চান, শিক্ষিতরাও ফসল ফলাবে। আর এই পরিবেশ করে দিতে সরকার কৃষিতে আধুনিক চাষ পদ্ধতি প্রয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৩ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ফসল ফলানো, কৃষি খামার, কৃষি গবেষণা, মৎস্য চাষে অবদান রাখায় ৩২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পদক তুলে দেন। এদের মধ্যে চার ব্যক্তি এবং মৎস্য অধিদপ্তর পেয়েছে স্বর্ণ পদক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখাপড়া শিখে অনেকেই জমিতে কাজ করতে যেতে চাইবে না। আমি বলব, আমাদের কৃষিমন্ত্রী এখানে আছেন, যে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে কৃষি কাজে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন আন্তরিক হয় এবং তার ব্যবহারিক শিক্ষা যেন থাকে সেটার দিকে বিশেষভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’
‘সে জন্য আমি চাইছি যে, ছেলেমেয়েরা যেন ছোট বেলা থেকেই এটা শিখে নেয়, তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি থেকে ধীরে ধীরে আমরা শিল্পে উন্নীত হবো, কিন্তু কৃষি বাদ দিয়ে না। কারণ, কৃষিই তো আমার কাঁচামালের যোগানটা দেবে। আর খাদ্যের যোগান দেবে।’
‘আমাদের শিক্ষার্থীদেরকেও এই যোগানটা দিতে হবে। মাটিতে চারা রোপন করলে বা কাজ করলে লজ্জার কিছু নেই, বরং নিজের হাতে বাগান করলে সেই বাগানের যখন একটা ফল হয়, তখন সেটা ছিড়ে খেতে গর্ববোধ হয়।’
‘তাছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা চাষচাষ শুরু করেছি, কৃষিকে আমরা যান্ত্রিকীকরণ করে দিচ্ছি। এখন আর হাত দিয়ে চারা রোপন করা লাগবে না। আমরা মেশিন দিয়ে চারা রোপন করতে পারব, জমি চাষ করতে পারব, ফসল কাটতে পারব, ফসলকে আলাদা করতে পারব।… সেদিকে আমরা যাব, আমরা যাচ্ছি, সেদিকে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলকে উৎসাহিত করা উচিত, সবাই যদি নিজের ঘরেও বাগান করে।… অনেকে গ্রামে থাকেন না, কিন্তু বহু জমি পড়ে আছে। কোঅপারেটিভের মাধ্যমে এগুলো চাষ করা যায়, তাহলে আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব তো হবেই না, বরং আমরা রপ্তানি করে বিশ্বের অনেক মানুষকে আমরা খাদ্য সাহায্য দিতে পারব।’
স্বাধীনতার পরবর্তী পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশে এমনও সময় ছিল মানুষ এক বেলাও পেট ভরে খেতে পারত না। সেই মানুষদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
‘দেশ যেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে সে জন্য আমরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণায় একটা টাকাও ছিল না। আমরাই প্রথম থোক বরাদ্দ দিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করি। কারণ, গবেষণা ছাড়া খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব না।’
‘তার শুভফল আজকে দেশবাসী পাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন দেশে ৪০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা খাদ্যে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করিনি, ধান উৎপাদনে বিশ্বে আমরা চতুর্থ অবস্থান অধিকার করেছি।’
‘গবেষণার কারণে আমাদের অনেক তরিতরকারি, আমাদের আগে খাবার জন্য বসে থাকতে হতো কবে শীতকাল আসবে তবে একটা পাতাকপি খাব, ফুল কপি খাব, গাজর থাব, শিম খাব, লাউ খাব। এখন কিন্তু আর তা লাগে না। এখন ১২ মাস সব কিছু হচ্ছে।’১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল অবধি বিএনপি শাসনামলে সারের দাবিতে কৃষক আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সারের দাবিতে কৃষক আন্দোলন করেছিল, কিন্তু তারা সার পায়নি পেয়েছিল গুলি। সেই দিন আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যদি আমরা ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে সারের জন্য কৃষকদের দাবি করতে হবে না, তাদের মিছিল করতে হবে না, আন্দোলন করতে হবে না। সার কৃষকদের কাছে পৌঁছে যাবে। আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
‘বিএডিসিকে বিএনপি সরকার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে। কারণ এটা নাকি লাভজনক না। আর বীজ উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতে দিয়ে দেয়া হয়েছিল। ফলে বীজের মান ঠিক ছিল না। কিন্তু আমরা সরকারে এসে বলেছি, না, বেসরকারি খাত করে করুক, তাদেরকে উৎসাহী করব। কিন্তু সরকারের একটা থাকতে হবে।’
‘গরিব কৃষকরা ন্যয্যমূল্যে যেন বীজটা পায় এবং উন্নত বীজটা পায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিএডিসিকে আমরা নতুন করে গড়ে তুলেছি। সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিকটন বীজ আমরা বিতরণ করেছি ১০ বছরে।’
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ খাদ্যে প্রথমবারের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর বিএনপির সমালোচনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, সংসদে বিএনপি বলেছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, এতে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায় না।
কৃষিতে সেচের জন্য সরকার খাল, নদী খনন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করে ভূ উপরিস্থ পানি ব্যবহারের বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে ফসলও ভালো হবে, আর পানির স্তরও নেমে যাবে না।
কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণ কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। দুই কোটি কৃষক সে কার্ড পাচ্ছে। এতে তারা স্বল্প খরচে কৃষি উপকরণ পাচ্ছে।
‘আবার তাদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তাতে ভর্তুকিসহ সব সহায়তা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। যতটুকু দরকার তারা ব্যবহার করে, বাকি টাকা তারা সঞ্চয় করে।’
‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি, যাতে তাদের অব্যবহৃত জমি যেন ব্যবহার করতে পারে এবং নিজেদের স্বচ্ছল করতে পারে এবং আশপাশের অন্য মানুষ যেন কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এটা করে দিচ্ছি।’
‘কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য। কোন এলাকায় কোন জিনিসের উৎপাদন বেশি হয়, সেটা হিসাব করে সেগুলোকে সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাত করা… এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে দেশের চাহিদা মেটাতে পারব এবং বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ফসল উৎপাদন, ফলমূল, মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে আমরা একটা অবস্থান করে নিয়েছি। এবং এটা আরও করতে পারব। আর সেগুলো আমরা প্রক্রিয়াজাত করে নিজস্ব বাজার আমাদের সৃষ্টি হচ্ছে, আর বিদেশে রপ্তানিও করতে পারব।’
পরিবেশ রক্ষার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে জানিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ এবং সম্প্রসারণকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন