‘শিক্ষক ছাত্রদের আস্থায় নিতে পারলেই মান সম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব’
প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি বলেছেন, আজকের শিক্ষকের চেয়ে আমাদের যারা শিক্ষক ছিলেন, তারা তো বেশী যোগ্য ছিলেন। তা না হলে, কিভাবে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম।
তারা এমন শিক্ষা দিয়েছিল বলেই তো আমরা এক ডাকে সবাই যুদ্ধে শামিল হয়েছিলাম। তাদের তো এখনকার শিক্ষকদের মত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারা কিভাবে মান সম্পন্ন শিক্ষা দিতে পেরেছে? এর পরও আমরা সন্তুষ্ট কেন হতে পারি না, সেটি ভেবে দেখা দরকার। আজ রবিবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে দিনাজপুর শিশু একাডেমী মিলনায়তনে ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্বুদ্ধকরণ সভা ও ডিজিটাল উপকরণ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকের বিষয় হলো- মান সম্পন্ন শিক্ষা। শিক্ষক তো মান সম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার জন্যই। গাভী যেমন দুধ দেওয়ার জন্য, ঘোড়া যেমন চলার জন্য, তেমন শিক্ষকও মান সম্পন্ন শিক্ষা দেবার জন্য। এটা বলবার কি দরকার তা আমার বুঝে আসে না। আজ যদি প্রত্যেক শিক্ষক মনে করেন, কালকেই দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।
গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন সব বিষয়ে একাউন্টিবিলিটির প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমি যদি সংসদে গিয়ে কোন কথা না বলি, বসে থাকি। তাহলে আমার এলাকার জনগণ আমাকে ধরবে, কেন আমাদের ওমুক প্রশ্নটি বা সমস্যাটি উত্থাপন করলেন না। আপনাদেরকেও এমন প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আপনার স্কুলের ছেলে-মেয়েরা কেন বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না।
সম্প্রতি ভিজিট করা একটি প্রাথমিক স্কুলের উদাহরণ টেনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ওই স্কুলে গিয়ে ৫ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে তার ক্লাসের বানান বলতে বলেছি, সে পারেনি। ক্রমান্বয়ে ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান বানানও সে পারেনি। কিভাবে পারবে তাকে তো এসব শেখানোই হয়নি। ওই ক্লাসে সেদিন উপস্থিতির ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই এটা পারেনি। ৩ জন পেরেছে, সম্ভবত সে ৩ জনের বাড়িতে কেয়ার নেওয়া হয় অথবা জন্মগত প্রতিভার অধিকারী।
তিনি বলেন, আপনার ছাত্র সব ভাষায় কথা বলতে পারবে, সৌদি আরবে গেলে আরবীতে বলবে, কাইফা হালুকা। তাহলেই না আপনারা শিক্ষার মর্যাদা পাবেন। আপনারা অক্ষর চেনানোর কাজ করবেন, বাক্য গঠন করে দেবেন, দেখবেন সেই সব পড়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ সংকট খুঁজে বের করে সমাধানের পথ বের করতে পারলেই এবং শিক্ষক ছাত্রদের আস্থায় নিতে পারলেই মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, এই দেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আমারও সুযোগ হয়েছিল- সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবার। আপনাদের ভাগ্যে হয়তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবার সুযোগ হয়নি। আত্মীয়-স্বজন অনেকে হয়তো অংশগ্রহণ করেছেন। যারা অংশগ্রহণ করেছেন, আমি তাদের স্যালুট জানাই। আমি যখন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম তখন এ দেশের ৮০ ভাগ মানুষ অভুক্ত থাকতো। মানুষ খাবার পেত না। ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল অন্যতম পেশা। ফকির বাড়ীর দুয়ারে এসে বলতো- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ- মা, ৩দিন ধরে না খায়ে আছি”। এই ছিলো দেশের অবস্থা।
গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানুষ আশ্বিন-কার্তিক মাসে ১ টাকায় ৩ দিনের শ্রম বিক্রি করতো। সুদের ওপর টাকা নিয়ে দিন চালাতো। গ্রামের মানুষ তখন বলতো- হাতি (ভারি/বড় জিনিষ) ঠেলা যায়-কার্তিক ঠেলা যায় না। আর আজ আমরা স্বাধীন দেশে এতো কিছু পাবার পর সন্তুষ্ট হতে পারি না। এখন প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে একাধিক মোবাইল ফোন। তার পরও কেন আন্দোলন করার চিন্তা মাথায় আনি?
তিনি আরও বলেন, আপনারা সবার সমান বেতন চান, প্রধান শিক্ষকের পদটি গেজেটেড চান। ভালো কথা, সরকার দয়ার শরীর। সরকার হয়তো সেটা দিবে। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। এ দাবিগুলো আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে এসএমএস করুন। আমাকে দিন, কেবিনেট মন্ত্রীদের দিন, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। মোবাইলে আজকাল সব হচ্ছে। সুতরাং আন্দোলনের তো প্রয়োজন নেই।
জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব এলাহী, দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল আলম, দিনাজপুর পিটিআই’র সুপার মোছাঃ দিলরুবা চৌধুরী। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার।
সবশেষে মন্ত্রী উপস্থিত ১৩ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাঝে ডিজিটাল সামগ্রী তুলে দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন