আগাম নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিকপাড়ায় নড়াচড়া
দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট!
আগামী বছরের শেষ নাগাদ দেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে এমন আগাম খবরে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি মহল থেকে এমন একটি ইতিবাচক বার্তাও দেয়া হয়েছে। সেই নির্বাচনকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। আসলেই কী দেশে আগাম নির্বাচন হবে, না গুজব? এমন একটি প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে যাই ঘটুক না কেন, বাংলাদেশে ইতিবাচক রাজনীতির পরিবেশ ফেরাতে পর্দার অন্তরালে থেকেই দূতিয়ালি করছেন কূটনীতিকরা। নির্বাচনকেন্দ্রিক ‘সহিংসতার চক্র’ থেকে দেশকে মুক্ত হতে সহায়তা করা, একটি বিতর্কমুক্ত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। তাদের তৎরপরতা কিছুটা দৃশ্যমানও হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কূটনীতিকদের আনাগোনা, দফায় দফায় বৈঠক-আলোচনা চলছে। সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন।
এরই ধারাবাহিতায় সোমবার রাতেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য (এমপি) ড. রূপা হকের সাক্ষাতের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে আরো দুজন ব্রিটিশ এমপিসহ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার বিষয়ে শাসক মহল থেকে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে। যেসব নেতা ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে আগ্রহী তাদের তৃণমূলে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এমন কী সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকেও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
সরকারি মহলের ‘আশা জাগানো ওই বার্তা’ কূটনৈতিক মহলে বেশ প্রশংসা পেয়েছে। এখন কূটনৈতিক পল্লীর পার্টিগুলোতে ইতিবাচকভাবেই সেটি আলোচিত হচ্ছে। কূটনীতিকদের প্রত্যাশার পারদও বেশ উপরে। এখানে আগামী নির্বাচনটি যেসব দলের অংশগ্রহণে হবে সেটি নিয়ে বিতর্ক তেমন একটি হয় না। তবে সেই নির্বাচনের ‘শান্তিপূর্ণ’ আয়োজনের নিশ্চয়তা পাওয়ার চেষ্টাই এখন চলছে।
আর এ জন্যই আগেভাগে সক্রিয় বিদেশি কূটনীতিকরা। সব বিতর্ক পেছনে ঠেলে তারা এখন শুধুই সামনে এগোতে চান। এখানে ‘গঠনমূলক রাজনীতি’ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তারা রীতিমতো দরকষাকষি করছেন। তাদের দূতিয়ালির প্রক্রিয়া বা পন্থা ভিন্ন হলেও লক্ষ্য প্রায় অভিন্ন। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষত সরকার এবং প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মৌলিক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ‘সমঝোতা’য় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীরা।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা নাক গলানোর চিন্তা নয় বরং দেশে যেকোনো নির্বাচনকে ঘিরে (আগে-পরে) প্রায় প্রতিষ্ঠিত যে সহিংসতার চক্র (সাইকেল অব ভায়োলেন্স) এবং সেই চক্রে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তারা। নির্বাচনী সহিংসতার ওই চক্র ভাঙতেই এবার অনেকটা ঘোষণা দিয়েই জোটবদ্ধভাবে লড়ছেন বিদেশি বন্ধুরা বিশেষত পশ্চিমারা।
অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং জনগুরুত্বপূর্ণ ওই ইস্যুতে তারা এতটাই সরব যে সামপ্রতিক সময়ে খোদ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা আলোচনার সুযোগও চেয়েছেন তারা। যদিও তাদের ওই আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? সাক্ষাতে আগ্রহী কূটনীতিকরা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
পশ্চিমা এক প্রভাবশালী কূটনীতিক সম্প্রতি বারিধারার এক পার্টিতে এমন ধারণাই দিয়েছেন। তার মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ঘটছে তা বিদেশি কূটনীতিক এবং মিশনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের এই যুগে এক দেশের ঘটনা অন্য দেশে মুহূর্তেই খবর হয়। সেই ঘটনাগুলোর নানামুখী প্রভাবও রয়েছে। এসব কারণে এক দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর অন্য দেশের পর্যবেক্ষণ থাকে। বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্র।
এখানকার রাজনীতি, অর্থনীতি বিশেষত শান্তি ও স্থিতিশীলতার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বৈশ্বিক ব্যবস্থায়। ঠিক তেমনি এখানকার নেতিবাচক কর্মকাণ্ডগুলো বিশেষ করে ‘অশান্তি এবং অস্থিতিশীলতা’য় বিশ্ব শান্তিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই দেখতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায়।
এখানে অতীতে যে প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তার প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমা ওই উন্নয়ন সহযোগী বলেন, এখানে আমি বা আমার সহকর্মীরা যা করছি তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং পরোক্ষভাবে বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যেই করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশে আয়োজনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওই নির্বাচনটি কোনো কমিশনের অধীনে হবে? সেখানে নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনার হিসেবে যারা নিয়োগ পাচ্ছেন তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এমনটিই প্রত্যাশা সবার। সেটাই এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্ট যে উদ্যোগ নেন, সেটিও বিদেশিদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ইসি পুনর্গঠন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহায়তা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়েও চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘ। যদিও সেখানে সরকার তেমন একটা সাড়া দেয়নি।
সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও যুক্ত রয়েছেন। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস কূটনীতিকদের তরফে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা চেয়ে যে চিঠি দিয়েছেন তাতে কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট করেছেন।
তা হলো- একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন তৈরি, আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য একটি কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতা রোধ, নির্বাচন প্রক্রিয়া জনগণের সামনে স্পষ্ট করা, পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সক্ষম করা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন