যশোর-বেনাপোল সড়ক সম্প্রসারনে গাছ কাটা নিয়ে নানান মত, সবাই চান চার লেনের রাস্তা
যশোর-বেনাপোল সড়ক সম্প্রসারনে গাছ কাটা নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে নানান কথা বলছেন গুনিজনেরা।
অনেকে বলছেন- পৃথিবীতে এতো গাছ কেটে কোনো দেশে রাস্তা সম্প্রসারন করা হয়নি। আবার অনেকে বলছেন কোন দেশে মহাসড়কের পাশে এমন বড় বড় গাছ নেই যে কেটে রাস্তা বাড়াবে। ভারতের পেট্রাপোল-বনগাঁর যশোর রোড আট বছর আগে চার লেন করার কাজে হাত দেয় ভারত সরকার। ২০০ মিটার রাস্তা করার পর জনগনের চাপে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। গাছ রেখে চার লেন বিশিষ্ট রাস্তা করতে রাস্তার দুপাশে যে পরিমান জমি নেয়া হচ্ছিল তাতে ক্ষেপে ওঠে ভারতের জনগন।অনেকে ভারতের বিষয়টি মাথায় রেখে রাস্তা সম্প্রসারনে গাছ কাটতে মত দিয়েছেন। একারনে যে গাছ রেখে রাস্তা বাড়ালে দুধারের অনেক ফসলি জমির ক্ষতিহবে। অন্যদিকে শতবর্ষী গাছগুলি জরাজীর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে রয়েছে। পরবর্তিতে ভেঙ্গে পড়বে যে কোনো সময়। তার চেয়ে কেটে নতুন গাছ লাগানো ভালো।
ইতিহাস হলো যশোরের বকচরের জমিদার কালী পোদ্দারের মা গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। কালী পোদ্দার ছিলেন কৃপণ জমিদার। এ কারণে বজরার মাঝিরা কালীর মাকে বজরায় উঠতে দেয়নি। মাঝি বলেছে, ‘তোমাকে নিলে কড়ি পাওয়া যাবে না।’ মা মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে এ কথা কালী পোদ্দারকে জানান। কালী আবেগতাড়িত হন। তিনি মাকে খুশী করতে গঙ্গাস্নানে যাবার জন্য সড়ক নির্মাণের কাজে হাত দেন।এবং ১৮৪০ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদীয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মানে হাজার হাজার শ্রমিক রাত-দিন কাজ করে ১৮৪২ সালে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করেন। সে সময় সড়ক নির্মাণে দুই লাখ ৫৮ হাজার কড়ি ব্যয় হয়েছিল। এরপর মা ছায়ায় ছায়ায় গঙ্গাস্নানে যাবেন এ জন্য রাস্তার দুই ধারে কালীবাবু বিদেশ থেকে এনে অতিবর্ধনশীল রেইন্ট্রি গাছের চারা লাগান। সেই গাছগুলো যশোর-বেনাপোল রোডকে এখনো ছায়া দিচ্ছে। যশোর থেকে কলকাতা কালীবাবুর এই রাস্তার নাম ‘যশোর রোড’।ভারতে যশোর রোডের অধিকাংশ গাছই কেটে ফেলা হয়েছে উন্নয়নের স্বার্থে। যশোর রোড ইতিহাসে স্থান পায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। সে সময়
অ্যালেন গিন্সবার্গ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতের কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতার বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল, যার মধ্যে একজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সুনীলের বাড়িতেই উঠেছিলেন। তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী অন্যান্য শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ রাজের সময় পূর্ব বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের সংযোগকারী সড়ক হিসেবে কাজ করতো ‘যশোর রোড’। অনেক বৃষ্টি হওয়ায় তখন যশোর রোড পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সড়ক পথে না পেরে গিন্সবার্গ অবশেষে নৌকায় করে বনগাঁ পেরিয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌঁছেন। তার সাথে সুনীলও ছিলেন। তারা যশোর সীমান্ত ও এর আশপাশের শিবিরগুলোতে বসবাসকারী শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই গিন্সবার্গ লিখেছিলেন বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টম্বর অন যশোর রোড়’। এই দীর্ঘ কবিতার সাথে সুর দিয়ে এটিকে গানে রূপ দিয়েছিলেন তিনি। আমেরিকায় ফিরে গিয়ে তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যান্য বিখ্যাত গায়কদের সহায়তায় এই গান গেয়ে কনসার্ট করেছিলেন। এভাবেই বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন গিন্সবার্গ।এই কারণে সড়কটি মুলত ঐতিহাসিক। যশোরের অধিকাংশ মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটার পক্ষে। যখন ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড় ৪ লেন হয়েছিল, তখন সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে রাস্তা করা হয়েছিল, তখনো কাটা হয়েছিল কয়েক হাজার গাছ। ঢাকা-চট্রগ্রাম ৪ লেন হলো তখনও কয়েক হাজার গাছ কাটা পড়েছে। জনৈক একব্যাক্তি বলেন
যশোর রোডের গাছ কেটে ৪ লেন করা হোক, তবে সরকারকে রাস্তার দুপাশর পাশে গাছ লাগাতে হবে। তবে যে গাছ সড়কের কোনো ক্ষতি করবে না। দুর্ঘটনা ঘটবে না সড়কে। এছাড়া গাছ রেখে যশোর বেনাপোল সড়ক ৪ লেন করতে গেলে ৫ হাজার একর আবা যোগ্য জমি অধিগ্রহন করতে হবে সরকারকে এতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অনেকের বসত ঘর ভাঙতে হবে।তাতে তো জনগনই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ বিষয়টিও তো ভেবে দেখতে হবে সাধারণ জনগনের। কেবলমাত্র বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করলে দেশের ও জনগনের কোনো লাভ হবেনা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন