মুক্ত হলো সাতক্ষীরা
মুনসুর রহমান : ৭ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি সাতক্ষীরা। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় এক সপ্তাহ আগেই অভিশপ্ত পাকিস্তানি হানাদাররা সাতক্ষীরা ত্যাগে বাধ্য হয়। মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। সেদিন পাক হানাদাররা ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাঙ্গালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে।
তাই সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার খরচাদি বহনের জন্য ট্রেজারী হতে অস্ত্র আর ন্যাশনাল ব্যাংক লুটের মাধ্যমে মুক্তির সংগ্রামের সূচনা করেছিল। এবং আজকের এই ক্ষণটি উপহার দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুপক্ষের কাছে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তারা ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । এ সময় উভয়ের গোলাগুলিতে পাক হানাদার ও মুক্তিযোদ্ধারা নিহত হয়।
শুধু তাই নয় শত্রুর বুলেটের এত সব আঘাত সহ্য করেও মানুষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে মুক্ত করতে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার আনন্দে স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলে গিয়ে উন্মত্ত দামাল ছেলেরা টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ, হিজলদী যুদ্ধ, কাকডাঙ্গার যুদ্ধ, ভাতশালা যুদ্ধ, গাবুরা নৌ-যুদ্ধ, গোয়ালডাঙ্গা যুদ্ধ, কুলিয়া যুদ্ধ, বারিয়াডাঙ্গ্ যুদ্ধ সহ প্রায় ৫০টি যুদ্ধের মোকাবেলা করতে শত্রুবাহিনীর গুলিতে প্রায় ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। আর পর্যায়ক্রমে ১৯ নভেম্বর শ্যামনগর, ২০ নভেম্বর কালিগঞ্জ, ৬ ডিসেম্বর দেবহাটা, কলারোয়া, আশাশুনি ও তালা হানাদার মুক্ত হয়। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় সাতক্ষীরায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। এবং রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে ৭ ডিসেম্বর পাক সেনারা সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। অতঃপর মুক্ত হয় সাতক্ষীরা।
সেদিন পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার আনন্দে স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলে গিয়ে তাঁরা চতুর্দিক থেকে ফাঁকা গুলির আওয়াজ করতে করতে শহরে প্রবেশ করে । মুক্তির নেশায় উন্মত্ত দামাল ছেলেরা আনন্দ-উল্লাসে কোর্ট (বর্তমানে পুরাতন জজ কোর্ট) প্রাঙ্গণে মুখরিত হয়ে সাতক্ষীরার মাটিতে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উড়ায়। জয় বাংলা; জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে তারা মুখরিত করে তোলে গোটা সাতক্ষীরা। এভাবে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুদের কবল থেকে মুক্ত হলো সাতক্ষীরা।
তাই প্রতি বছর ৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে ‘সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস’ পালন করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পাক হানাদারদের হাত থেকে সাতক্ষীরা মুক্ত হলেও বধ্যভুমির গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে বধ্যভুমির গণকবরগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জোর আহবান জানান সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধারা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন