একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা দিবে জাতিসংঘ
আগামি একাদশ সংসদ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করবে জাতিসংঘ। বিশেষ করে অংশগ্রহনমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কারিগরি সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে সংস্থাটি। ইসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ আগামি নির্বাচন সামনে রেখে পাঁচটি বিষয়ে কারগির সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রকল্পভিত্তিক কাজ করবে জাতিসংঘ। সম্প্রতি চিঠির মাধ্যমে ইসিকে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ।
পাঁচটি বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করে ইসিকে চিঠি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন- একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়টি কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছিল। বিষয়টি কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটি দেখভাল করে যেগুলো সুপারিশ দিবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। তবে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চলছে, চলবে। এরপর কমিশন এটি চূড়ান্ত করবে।
ইসি সূত্র জানায়- যে পাঁচটি খাতে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে আগ্রহী সেগুলো হলো- ভোটার নিবন্ধন, পাবলিক আউটরিচ স্ট্রাটেজি, কনফ্লিক্ট মিটিগেশন স্ট্র্যটেজি, ক্ষুদ্র জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীসহ সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণে ইসির সক্ষমতা বাড়ানো এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণে ইসির সক্ষমতা বাড়ানো। নির্বাচন কমিশন কয়েকটি ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা চেয়েছিল। গত ২০ জুন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়ার্ট কিনসের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন প্রতিনিধি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বেশকিছু দেশের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন। মানসম্মত এনআইডি, ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ ১০ ধরনের কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল ইসির পক্ষ থেকে। বৈঠক শেষে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়ার্ট কিনস বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের ২১ বছরের সম্পর্ক। আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য সকল ধরণের কারিগরি সহায়তা করতে চাই। এর পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে চিঠি পাঠায় ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স (ডিপিএ) এর ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্টেনস ডিভিশন (ইএডি) এর একটি নিডস এসেসমেন্ট মিশন বাংলাদেশে এসেছিল। মিশন গত ২৪ জুলাই থেকে ২ আগস্ট বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, কমিশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পরবর্তীতে তারা একটি প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি বিষয়ে কারিগরি সহায়তা করার সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ ইতিমধ্যে জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাচনি সহায়তার ফোকাল পয়েন্ট জেফরি ফেল্টম্যান এক চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে সুপারিশ অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত। পরবর্তী পদক্ষেপ বা যোগাযোগের বিষয়ে আবাসিক সমন্বয়ক আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সফটওয়ার উন্নয়নে ইসিকে সহায়তা দিতে চায় জাতিসংঘ। বিশেষ করে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন যাতে গুনগত মানসম্পন্ন ও নির্ভুল করা যায়। এবং ক্রমান্বয়ে দাতা গোষ্ঠীর সহযোগিতা ছাড়া ইসি যাতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাজটি করতে পারে। নির্বাচনী সংঘাত উপশমে কৌশল উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সমর্থন রয়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, জেলাগুলোয় নির্বাচনী সহিংসতার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিঞ্চুতা প্রতিষ্ঠায় অবদান, সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, সহিংস প্রবণ এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধিতে ইসির সক্ষমতা বাড়ানোয় সহায়তা করবে। প্রতিবেদনে মিশন বলেছে, নির্বাচন পরিচালনা করার মত সক্ষমতা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আছে। তারপরও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণসহ কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা করার জায়গা আছে। বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহনমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে।
কমিশন সভায় জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়ে ইসি উপ-সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে- জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন (প্রযোজ্য হলে) এর প্রস্তুতি, নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচন পরবর্তী অর্জিত শিক্ষা এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা উন্নয়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে ইউএনডিপির প্রকল্পের মাধ্যমে জাতিসংঘ কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করতে আগ্রহী। ইউএন উইমেনসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও তহবিল ইউএনডিপির প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করবে। ২০১৮ সালের শুরু হতে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি অথবা শেষ অবধি উক্ত প্রকল্প পর্যায় ভিত্তিক কাজ করবে। প্রথম পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচন ও অর্জিত শিক্ষা নিয়ে উক্ত প্রকল্প কাজ করবে। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে ইউএনডিপির প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে। প্রকল্প তৈরির জন্য জাতিসংঘের একটি প্রজেক্ট ফরমুলেশন টিম বাংলাদেশে নিয়োগ করা হবে। উক্ত টিম বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, দাতা সংস্থা ও ইউএন ইলেকট্ররাল অ্যাসিস্টেনস ডিভিশন (ইএডি) এর পরামর্শ অনুসারে প্রকল্পের কার্যপরিধি নির্ধারণ ও বাজেট নিরুপণ করবে। একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহনমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে।
ইসির প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে- ১৯৯৫ সাল থেকে জাতিসংঘ নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ এসইএমবি নামক ইউএনডিপির একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে, যার মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শেষ হয়েছে। গত মঙ্গলবার কমিশন সভায় প্রস্তবনা উপস্থাপন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে এই কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে ইসির কারিগরি বিষয়ক কমিটি জাতিসংঘের অনুমোদিত সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করছে।
ইসি সূত্র জানায়- নির্বাচন কমিশন যেসব সহায়তা চেয়েছিল তার মধ্যে আছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইসির সক্ষমতা বাড়ানো, ভোটারদের সচেতনা বাড়ানো, অটো মার্কিং সিল, ব্যালট পেপার মার্কিং কলম, ব্যালট বক্স লক, অটো অফিসিয়াল সিল, ভোটিং স্ক্রিন, ল্যাপটপসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারণের ক্ষেত্রে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ব্যবহারসহ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন