সরাসরি ভোটার হবেন প্রবাসীরা
বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডেস্ক খুলে সরাসরি ভোটার করা হবে প্রবাসে থাকা বাংলা ভাষাভাষিদের। দাললিক প্রমাণ হিসেবে তাদের স্থায়ী ঠিকানা কিংবা পাসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানা ধরে তালিকার্ভুক্ত করা হবে। এর জন্য দূতাবাসে স্থাপন করা হবে লোকাল সার্ভার স্টেশন। সুবিধাজনক স্থানে থাকবে অস্থায়ী নিবন্ধন কেন্দ্র। সেখানে সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহের জন্য অবস্থান করে প্রবাসীদের ভোটার করা হবে। ছুটি ও অফ-টাইমগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মধ্য-প্রাচ্যেসহ দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে এ উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও মালয়েশিয়া। দেশের ভোটারদেরর মতো প্রবাসীরা পাবেন স্মার্ট কার্ড।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ লোকার গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে তাদের ভোটার হতে উদ্ধুদ্ধ করায় ভূমিকা রাখবে কমিশন। প্রবাসীদের ভোটার করা সংক্রান্ত এনআইডির খসড়া প্রস্তাবনা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
# বিভিন্ন দূতাবাসে থাকবে ইসির ডেস্ক
# আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা ও পাসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানা প্রযোজ্য হবে
# ভোটারে অযোগ্য হলে তথ্যটি আবেদনকারীকে দ্রুত জানানো
জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন- প্রবাসী বাঙালীদের (দেশে-বিদেশে) বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন। কারণ তাদের ভোটার করা একটা বড় বিষয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যাপার রয়েছে। কোন পাইলট প্রকল্প করা হবে না কারণ এনআইডির সবাই অভিজ্ঞ। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব নিজেরা পর্যালোচনা করছি; চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। সুনিদিষ্ট কোন দেশের কথা বলছি না। তবে, মধ্য প্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাঙালী বেশি রয়েছে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। দূতাবাসগুলোকে ডেস্কখুলে এখান থেকে প্রতিনিধি গিয়ে ৬ মাস থেকে ১বছর সময় লাগে তাদের ভোটার করা হবে।
প্রস্তাবে প্রবাসীদের সংখ্যা বিবেচনায় জেলা/প্রদেশ অনুযায়ী তাদের ভোটার করা হবে। বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা ও পোসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী ভোটার হবেন। দূতাবাসে বৈদেশিক অফিস খুলে লোকার সার্ভার স্থাপন করা। যাতে প্রবাসীরা ছুটিরদিনে কিংবা অফ-টাইমে এসে ভোটার হতে পারেন। পাশাপাশি কর্মদিবসে প্রতিনিধি টিমকে সপ্তাহে ২দিন ছুটি রাখা যেতে পারে।
প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ
ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন লাইনে নিবন্ধন ফরম পূরণ এবং সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন সাপেক্ষে নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটার হতে পারবেন তারা। দালিলিক প্রমাণ হিসেবে বাংলাদেশী পাসপোর্টের কপি/বিদেশী পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ অথবা শনাক্তকারী হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকের পাসপোর্টের ফটোকপি সংযুক্ত করা। পাশাপাশি আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানার নির্বাচন অফিসারকে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করা। আর যেসব এলাকায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেশি সেখানে কয়েকদিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র স্থাপন করা।
রেজিস্ট্রেশন টিম গঠন
বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (বিভিআরএস) ও আইটি অভিজ্ঞ ১জন, টেকনিক্যাল এক্সাপার্ট ১জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৪জনসহ মোট ৬ সদস্যের টিম গঠন করা। তবে ৪টির বেশি টিম কোন দেশে পাঠানো হলে সুপারভিশন হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানোর সুপারিশ থাকছে প্রস্তাবে।
ডাটা এন্ট্রি/নিবন্ধন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদনকারীর আবেদন এন্ট্রির পর একাউন্টে ছবি ও বায়োমেট্টিক ডাট (১০ আঙুলের ছাট ও চোখের আইরিশ) নির্দিষ্ট স্থান ও তারিখ অবহিত করে বায়োমেট্টিক গ্রহণ করা। তবে যারা অনলাইনে আবেদনে অক্ষম তাদের তথ্য সংগ্রহের সেটির একটি প্রিন্ট কপি সংরক্ষণে রাখা।
ডাটা প্রেরণ ও সার্ভার আপলোড প্রক্রিয়া:ভিপিএন সংযোগের মাধ্যমে ছবি ও বয়োমেট্টিক সম্বলিত ডাটা সাময়িকভাবে সার্ভারে আপলোড করানো এবং রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে থাকা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অফিসিয়াল একাউন্টের মাধ্যমে প্রবাসী নিবন্ধনের ডাটা জমা হয়েছে কি না তা যাচাই করা।
আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই ও তদন্ত প্রক্রিয়া
অনলাইন আবেদন ফরম সঠিক থাকলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসার বা রেজিস্ট্রেশন অফিসারের একাউন্টে জমা হবে। সংশ্লিস্ট অফিসার ভোটারের আবেদন যাচাই ও তদন্ত করে তথ্য প্রদান করবেন, যাতে প্রবাসী শাখা তার ডাটাটি (সংশ্লিস্ট ভোটারের) মূল সার্ভারে আপলোড করা এবং দ্রুত পরিচয়পত্রটি সংগ্রহ করতে পারেন। পাশাপাশি আবেদনকারী নিবন্ধনে অযোগ্য হলে তারটি দ্রুত জানানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবনায়।
ইসির সূত্রমতে, সব নাগরিকদের ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার এখতিয়ার ইসির। দেশে-বিদেশে সব নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় কোন ভিন্নতা নেই। কিন্তু কমিশনের ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রবাসীদের ভোটার করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব কমিশনে আসে। কমিশন তাদের এই প্রস্তাবটি সরাসরি নাকচ করে।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগটি নিয়েছিল বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। তাদের প্রস্তাবে, এনআইডির মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে বায়োমেট্টিক সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ছিল। আগের প্রস্তাব বাদ দিয়ে প্রবাসীদের প্রবাসে থাকাবস্থায় ভোটার করার প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যা পর্যালোচনার পর শিগগিরই কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দিলেও দীর্ঘ ১৮ বছরে তাদের সে অধিকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির উপরে প্রবাসী অবস্থান করছে। বর্তমান কমিশনের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের অবসান এবং দাবি পূরণ হবে বলে আশা করছেন এ সংশ্লিস্ট নীতিনির্ধারকেরা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। এতে তারা খুবই খুশি হয়েছিল। আশা করছি, বর্তমান কমিশন যে উদ্যোগ নিয়েছে প্রশংসনীয়। পাশাপাশি, তাদের প্রবাসে থেকেই তাদের ভোটদানের ব্যবস্থা রাখা উচিত কমিশনের।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন