ইসির টেবিলে চার শতাধিক সুপারিশ
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপে চার শতাধিক সুপারিশ বা পরামর্শ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সুপারিশগুলোকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছে ইসি। বিশেষ করে সাংবিধানিক সংশ্লিষ্ট সুপারিশ, আইন-বিধি সংশোধন বিষয়ক সুপারিশ এবং নির্বাচন কমিশনের করণীয় সুপারিশ। আগামী নভেম্বরে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ সংকলন করে ডিসেম্বরে বই আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩১ জুলাই থেকে গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত গত তিন মাস ব্যাপি রাজনৈতিক দলসহ ৪৫টি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে এসব সুপারিশ বা পরামর্শ পেয়েছে কমিশন।
সুপারিশগুলোর বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা মূল্যবান ও দিকনির্দেশনামূলক সুপারিশ ও পরামর্শ পেয়েছি। গত তিন মাস ব্যাপি রাজনৈতিক দলসহ ৪৫টি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করেছি। এর মধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো সরকারের কাছে এবং আইন-বিধি সংশোধন সংক্রান্ত সুপারিশগুলো সরকারের মাধ্যমে সংসদে পাঠানো হবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের করনীয় সুপারিশগুলো নিজেরাই বাস্তবায়ন করবেন বলে জানান তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিবাদমান ইস্যূতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো উদ্যোগ ইসি নেবে না বলে সাফ জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ নেবো না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ উদ্যোগ নেয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান হওয়া উচিত। এ উদ্যোগে আমরা (ইসি) যেতে চাই না।
# সুপারিশগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছে কমিশন
# নভেম্বরে সুপারিশ যাচাই-বাছাই, ডিসেম্বরে বই আকারে প্রকাশ
# সমঝোতার উদ্যোগ নেবে না ইসি
গত ১৬ জুলাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে বর্তমান কমিশন। এই কর্মপরিকল্পনার উপর সুপারিশ/পরামর্শ নেয়ার জন্য গত ৩১ জুলাই থেকে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হয়। প্রথমদির সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপের পর গত ১৬ ও ১৭ আগষ্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, গত ২৪ আগষ্ট থেকে গত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দল, গত ২২ অক্টোবর ৩২ পর্যবেক্ষক সংস্থা, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। সংলাপ শেষে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন সিইসি।
সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বর্তমান ইসির উদ্দেশ্যে বলেন, আইনে যেগুলি আছে এগুলোকে অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়াভুক্ত এবং এখতিয়ার বর্হিভূত সুপারিশগুলো বাছাই করে করনীয় ঠিক করতে হবে। সংলাপ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কেএম নূরুল হুদা বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ৪ শতাধিক সুপারিশকে তিনভাগে বিভক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মাত্র সংলাপ শেষ হয়েছে। আমরা সুপারিশগুলো একত্রিত করছি। আগামী মাসের শুরুতে কমিশন বসে সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করবে। তবে সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর ব্যাপারে কমিশন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করবে। আর আইনের সংশোধনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদে প্রেরণ করা হবে। কমিশনের এখতিয়াভুক্ত প্রস্তাবগুলো নিজেরাই বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাব বই আকারে প্রকাশ করে তা রাজনৈতিক দল ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হবে।
সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশ
সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো মূলত ইসির এখতিয়ার বর্হিভূত। যেমন-নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, ইসির অধীন কয়েকটি মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করা, সংসদের আসন বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। সংলাপে ১৯টি দল নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে বলেছে। অন্তত ১৫টি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপেও এসব বিষয় প্রাধান্য পেয়েছিল। তবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে। যা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বর্হিভূত। তবে কমিশন প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করবে বলে জানিয়েছেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব।
এ সংক্রান্ত সুপারিশের বিষয়ে সিইসি বলেন, সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীন নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে আইন সংশোধনে বাধ্য করা বা চাপ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই। সুপারিশগুলো সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এটি সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধান পরিবর্তন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যেই সময়ে সরকার যে আইন তৈরি করে দেয়, ইসি সেভাবে নির্বাচন করেছে। সেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবিধান মেনে ইসিকে চলতে হয়। এখন পর্যন্ত সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের এখনও সময় আছে কখন কী হবে তা জানিনা।
আইন-বিধি সংশোধন বিষয়ক সুপারিশ
আইন-বিধি সংশোধন বিষয়ক সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২, সীমানা পুননির্ধারণ সংক্রান্ত ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশের কিছু ধারা সংশোধন করে ইংরেজি থেকে বাংলায় রুপান্তর, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদে পাঠাবে কমিশন। বিশেষ করে আইনের ধারাগুলো সংশোধনীর প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে সংসদে যাবে। তারপর তা সংসদে পাস হবে। আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্ণ ক্ষমতা নেই। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি শুধু সংশোধনী প্রস্তাবনা করতে পারে। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালানসহ অন্যান্য বিধিমালা সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশোধনী প্রস্তাবনা শুধু আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন হলে চূড়ান্ত করতে পারবে কমিশন।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, যে আইন রয়েছে তাই যথেষ্ঠ। আইন প্রয়োগ করতে হবে। যে আইন রয়েছে তাই প্রয়োগ করবো। কোনো কর্মকর্তা আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। অর্থাৎ কারো অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তি পেতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের করণীয় সুপারিশ
নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত প্রস্তাবনাগুলো সর্বোচ্চ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রস্তাবণাগুলো হলো-নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়ন, রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ দিতে পারে ইসি। এছাড়াও আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনী অপরাধ দমন, প্রার্থীকা বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহারও ইসির ইচ্ছার উপর নির্ভর। ৪০টি দলের মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন-এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব রেখেছে বিএনপিসহ ২৫টি দল। বর্তমান সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও সেনা মোতায়েনের পক্ষে। বিদ্যমান আইনের বাইরে সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগসহ ৯টি দল। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন মতামত নেই বা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছে ৬টি দল। ইভিএম চালুর পক্ষে প্রস্তাব রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৬টি দল। এর বিপক্ষে ১২টি দল। বাকি ২০ দলের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন মতামত পাওয়া যায় নি
বর্তমান আইনী কাঠামোতে সেনা মোতায়েন কোন প্রক্রিয়ায় হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেনা নিয়োগ কীভাবে হবে, তাদের দায়িত্ব কী হবে তা নির্ধারণ করবে ইসি। এ বিষয়ে সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। নির্বাচন আসুক তখন পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাবে। তবে বিদ্যমান কাঠামোতে সেনা মোতায়েন করা যাবে। তিনি আরো বলেন, ইসির এখতিয়ার যেগুলো সে বিষয়ে ইসি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার সবই করবো আমরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন