পাসপোর্টের ডিজিকে এনআইডির চিঠি
রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবে ইসি
নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের চার সদস্যর একটি টিম। এজন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে চিঠি পাঠিয়েছে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি)। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভূক্তি ঠেকাতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন হওয়া ডাটাসহ সার্ভারের সব তথ্য পেতে চায় কমিশন। বিশেষ করে বায়োমেট্টিক নিবন্ধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে নাম, জাতীয়তা, মিয়ানমারে জš§স্থান ও থানার নাম সংবলিত যে পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে তা কাছ থেকে দেখতে পাঠানো হচ্ছে ইসির প্রতিনিধি দলকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন- আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে চায়। কেননা যাদের বায়োমেট্রিক নেয়া হবে-তাদের সনাক্ত করতে আমাদের সুবিধা হবে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত চারটি জেলার ৩২টি উপজেলাকে আমরা বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছি। এসব এলাকার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই বিশেষ কমিটির অনুমোদন ছাড়া কেউ ভোটার হতে পারবেন না।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের অধীনে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরপি অ্যান্ড এমআরভি) প্রকল্পের তদারকিতে চলছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম। তাদের কাজ দেখতে এনআইডির এক্সপার্টরা সেখানে যেতে চান। কারণ নিবন্ধন কার্যক্রমটি ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। চলতি বছর ১৮ বয়সী ভোটার নাগরিকদের তথ্য-সংগ্রহের পর এখন চলছে ছবি তুলে নিবন্ধন কার্যক্রম। তাই আগামী বছর থেকে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে নেয়া হলে রোহিঙ্গারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভোটার হতে তৎপর হয়ে উঠবেন। সে সময়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নেয়া নিবন্ধন কার্যক্রমটি তাদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখতে সহায়ক হবে। এজন্য রোহিঙ্গা নিবন্ধন কার্যক্রমে পরিদর্শনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পাঠানো চিঠির পর সোমবার দ্বিতীয় পত্র দিয়েছে এনআইডি।
এতে বলা আছে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের প্রক্রিয়াটি নির্বাচন কমিশনের এনআইডির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা অথবা গৃহিত বায়োমেট্টিক ভবিষৎতে কাজে লাগানোর ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই/সহযোগীতার জন্য একটি প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে। গঠিত টিমকে রোহিঙ্গা নিবন্ধন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আনুমতি প্রয়োজন। চার সদস্যের টিমে রয়েছে, এনআইডির সিষ্টেম এনালিষ্ট বেগম ফারজানা আখতার, সহকারি পরিচালক বেগম ফৌজিয়া সিদ্দিক, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট এবিএম সালাউদ্দিন সরকার ও টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ফয়সাল মোহা: শাহ নেওয়াজ। এই চার সদস্যর রোহিঙ্গা নিবন্ধন কেন্দ্র পরিদর্শনের অনুমতির জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে। দ্রুত তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনের অনুমতি মিলবে বলে আশা প্রকাশ এনআইডির।
ইসির সূত্র মতে, নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন কমিশন। কারণ আশ্রিত সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করার পর যদি পদ্ধতিগত ক্রটি থাকে তাহলে সরকারের নেয়া পুরো-প্রক্রিয়াটি ব্যর্থতায় পরিণত হবে। নাগরিকদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ নিতে নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে; এটিতে ঘাপলা থাকলে, তথ্য-পরিচয় গোপন করে অন্যত্রে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার পথ প্রশস্ত হবে। তিনটি কেন্দ্রে রোহিঙ্গা মুসলিম নাগরিকদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। বায়োমেট্টিক নিবন্ধনের মাধ্যমে ১০ আঙুলের ছাপ নিয়ে নাম, জাতীয়তা, মিয়ানমারে জš§স্থান ও থানার নাম সংবলিত পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার নিবন্ধন হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার নাগরিকদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এখনো সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মোট ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন। মিয়ানমার সরকারের দাবি, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এরপর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হলে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সংস্থার মতে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় হাজারো রোহিঙ্গা আটকা পড়ে। তারা এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সহিংসতার পরে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইন রাজ্য থেকে এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
এনআইডির এক কর্মকর্তা জানায়- রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন হওয়া ডাটাসহ সার্ভারের সব তথ্য আমরা পেতে চায়। আগামী বছর থেকে যারা ভোটার হতে চাইবেন তাদের প্রথমে রোহিঙ্গাদের সার্ভারে তথ্য যাচাই করা হবে। পরে এএফআইএস পদ্ধতিতে সংশ্লিস্ট নাগরিকের ইসির ডাটাবেইজে তথ্য যাচাই করা হবে। পাসর্পোট অফিসের নিবন্ধিত এবং এনআইডির সার্ভার দুটি পাশাপাশি রাখা হবে। তথ্যের অসঙ্গতি না পাওয়া গেলে সংশ্লিস্ট নাগরিককে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে তাকে রোহিঙ্গা নাগরিক নয়, সেটির পরীক্ষা ইসির নিবন্ধন কর্মকর্তাদের কাছে দিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা রোহিঙ্গা নিবন্ধন কেন্দ্র পরির্দশনে যেতে চাইছি এই জন্য যে, তারা যে সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, ইসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে কী না সেটাই মূল লক্ষ্য। কারণ রোহিঙ্গারা শুধু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সারাদেশেই তারা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে আগামীতে ভোটার তালিকা করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। তাই আগাম সর্তকতার অংশ হিসেবে এসব নানামুখি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারে ১৬ কোটি নাগরিকের মধ্যে ১০ কোটি ১৭ লাখ নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ হলে এ সংখ্যা সাড়ে ১০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন