১১ দফা সুপারিশ পেশ
ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগ : জিয়া সংবিধান ধ্বংস করেছে
জিয়াউর রহমান সংবিধান ও সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ধ্বংস করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রসংশার বক্তব্যের জের ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সংলাপে জিয়ার প্রসঙ্গ টেনেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই আলোচনায় অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। এসময়ে চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে প্রতিনিধি দলের প্রধান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইসির কাছে লিখিত প্রস্তাবে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন’ বিষয়ে তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের অল্প কিছুদিনের মধ্েেযই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন, শুরু হয় স্বৈরশাসনের।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ স্বৈরশাসক তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন এবং তার পক্ষে হ্যাঁ ভোট প্রদানে সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। প্রহসনের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন তাদের ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেন অপরদিকে সব গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতা দখলকারী অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালের অবসান ঘটে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানান, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৯ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। জিয়াউর রহমানের গুণগান করার প্রসঙ্গ ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের একজন নেতা ইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইতিহাসের স্যাটেলড বিষয় নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না।
সংলাপে অংশ নেয়া একজন নেতা জানিয়েছেন, সিইসির বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যার অবকাশ থাকায় বিতর্ক এড়ানোর জন্য কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা পেয়েছি, বলতে চাই না: কাদের
দুই ঘণ্টার বেশি বৈঠকে শেষে জিয়ার গুণগান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের অবস্থান পরিস্কার, পড়ে সব কিছু পাবেন। আমি এখানে আর কোনো বলতে চাই না। ইসি থেকে আওয়ামী লীগ ব্যাখ্যা পেয়েছে জানালেও বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি, এটা বলতে চাই না। যদি কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয় নির্বাচন কমিশন দেবে। তবে তাদের সঙ্গে যে আলোচনা,বক্তব্য-তাতে পজিাটভ ডায়ালগ আমরা করেছি, কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা হয়েছে।
ইভিএমে হ্যাঁ, সেনায় ‘না’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালুর পক্ষে মত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের বিরোধিতার পাশাপাশি ভোটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এই তিনটিসহ মোট ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
সোয়া দুই ঘণ্টার আলোচনা শেষে দলের পক্ষ থেকে দেয়া সুপারিশগুলো সাংবাদিকদের জানান ওবায়দুল কাদের। ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে চেয়েছেন তিনি। কাদের বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং ইসি নির্ধারিত ভোটের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালের প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে। নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতার শঙ্কাও করছে ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জানান, সীমানা পুননির্ধারণের বিষয়টি বিশেষ করে আদমশুমারির সঙ্গে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির (২০১৩ সালে প্রকাশিত) ওপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নিধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন আদমশুমারি ছাড়া পুনরায় সীমানা পুননির্ধারণ কার্যক্রম নিলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় ৩০০ আসনের সীমানা পুননির্ধারণের মতো জটিল কাজ শেষ করতে সময় স্বল্পতার কারণে সম্ভব হবে কিনা বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যাবশ্যক।
বাকি সুপারিশগুলো হচ্ছে
ইংরেজিতে প্রণীত ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২’ ও ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬’ এর বাংলা সংস্করণের সুপারিশ। নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নির্বাচনী আইন-বিধির কঠোর প্রয়োগ। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিতদের দায়িত্বে অবহেলা ও অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ। দলীয় প্রার্থী চড়ূান্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগ্রহীদের বাছাই। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা বিধান। ভোটের দিন গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী আইন-বিধি অনুসরণ এবং উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান এবং দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ভোটের তিনদিন আগে এনআইডি ও ছবিসহ তালিকা দেয়া।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন যারা
দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, এইচ টি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, মো. রশিদুল আলম. মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপুমণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এইচ এন আশিকুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও এডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার। তবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও স্ত্রীর অসুস্থার কারণে দেশে না থাকায় সংলাপে অংশ নেননি।
প্রশ্ন উত্থাপন হয় নি আর: ইসি সচিব
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যাখ্যা পেয়েছে বলে দাবি করলেও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সিইসি’র সূচনা বক্তব্যের পর সংলাপে এ নিয়ে আর কোনো কথা হয় নি। সংলাপের পরে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। খুবই সাকসেসফুল, উনারাও খুশী। বৃহস্পতিবার আর দুটি সঙ্গে সঙ্গেও সফলভাবে সংলাপ শেষ করব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন