'বিএনপিকে নিয়ে ভয় নেই'
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনকেও পাশে পাওয়ার আশা আ.লীগের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে। তাই চীনকেও পাশে পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পাঁচ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযানের খবর পাচ্ছি। আমরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এরপর বর্তমান সরকারের সময়ে আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে। আমরা চ্যালেঞ্জগুলো ঠান্ডা মাথায় অতিক্রম করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট কত দীর্ঘায়িত হবে আমরা তা জানি না। তবে আশার কথা হচ্ছে জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে, আশা করছি চীনকেও পাশে পাবো।’
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে তাতে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে আছে বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিতে পারে বলে আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম। কিন্তু এই প্রথমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষে কেউ অবস্থান নেননি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটা শক্তিশালী টিম চীন যাচ্ছে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এছাড়াও আগামী মাসে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে একটি টিম ভারত যাবে। আগামী মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের পরেই এ সফর হবে বলে আমরা আশা করি।’
রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘বিএনপি তো ত্রাণ দিতে যায় না, তারা যায় কয়েকটা নিউজ আর ছবির জন্য। এরপর দলীয় কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করে।’
বিএনপির ত্রাণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কাদের বলেন, ‘কতকগুলো ট্রাক সাজিয়েছে, ওখানে যাবে। এর ভিতরে কি আছে, না আছে? অনেক কথা আছে সেগুলো বলতে চাই না। সেখানে আদৌ ত্রাণ ছিল কিনা, অনেক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।’
ত্রাণ বিতরণের নিয়ম না মানায় বিএনপি বাধার সম্মুখীন হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা রুলস এন্ড রেগুলেশন আছে। নিয়ম আছে। আমি যে ত্রাণ দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যে ত্রাণ দিয়েছেন। সব ত্রাণ সেখানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে, এই কমিটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠাতে হয়। সেটি সবাই করে আসছে। আমার ত্রাণও আমি সঙ্গে নিয়ে যাইনি। আমি যে ত্রাণ দিয়েছি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল ত্রাণ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি সে কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ওখানে দাড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এটা হচ্ছে নিয়ম কিন্তু বিএনপি নিয়ম মানতে চায় না।
আমি এজন্যই বলেছি, এটা তাদের দায়সারা গোছের, লোক দেখানো, প্রতারণা। তারা যদি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যে কমিটি এই কমিটির কাছে, তারা কত ত্রাণ দিচ্ছে, কি দিচ্ছে, এগুলো জমা দিত তাহলে ওখানে পৌঁছে যেত। আমাদের বেলায়ও সেটা হয়েছে। বিএনপির বেলায় এটা হত। এটা তো মানবিক সাহায্যের বিষয়, এখানে আমরা রাজনীতি করব কেন?’
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা একা এটা মোকাবেলা করব, এটা তো আমরা কখনো ভাবিনি। আর বিএনপি ওখানে মানবিক সাহায্য নিয়ে গেলে, কেন আমরা বাধা দিব? এই অমানবিক ব্যবহার আমরা কেন করব? কিন্তু তারা তো এখানে রাজনীতির জন্য গেছে। তা না হলে তারা নিয়ম মানত। নিয়ম অনুযায়ী তারা ওখানে ত্রাণ দিত। তারা ওখানে যাবেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানে না।’
তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা রওনা দিলেন ওখানে যাওয়ার উদ্দেশে। আপনারা কি ভাবতে পেরেছেন, ওখানে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কত লোক না খাওয়া, প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের ¯্রােত আসছে। এই ট্রাকগুলো সব লুটপাট হয়ে যেত এবং যারা নিয়ে যেত তাদের জীবন সংশয় সৃষ্টি হতো। আমি নিজে ওখানে কয়েকবার গেছি, বাস্তবতা এই। ঢাকায় বসে সবকিছু উপলব্ধি করা যায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের তো সিকিউরিটির ব্যাপার আছে। আমি এ কথাগুলো কোন প্রকার ভনিতা নিয়ে বা মিথ্যাচার করার জন্য বলছি না। সেখানে যে পরিবেশ এই পরিবেশে ২০/২৫টি ট্রাক গেলে কি অবস্থা হত, যখন তারা বুঝত ট্রাকে খাদ্য আছে। অথচ বিএনপি বিষয়টিকে রাজনীতিতে নিয়ে গেছে। এটা একটা মানবিক সমস্যা। এটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। সস্তা রাজনীতি সবক্ষেত্রে করা উচিত নয়।’
পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বা জোর-জবরদস্তি সহ্য করা হবে না। এটি তো মানবিক ব্যাপার, যারা স্বেচ্ছায় সাহায্য করবে, সেটিই কেবল আমরা গ্রহণ করব।’
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আর আওয়ামী লীড়ের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে প্রায় ২০ হাজার কম্বল রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে এসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
‘বিএনপিকে নিয়ে ভয় নেই’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে ভয়ের কারণ নেই, যদি আওয়ামী লীগ নিজেদের পরাজয়ের কারণ না হয়। শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার জুনাব আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার দরকার নেই। বিএনপি এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। এই পার্টির আন্দোলন নেই। তারা আন্দোলনে ব্যর্থ এবং নির্বাচনেও ব্যর্থ। সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে এখন প্রেস ব্রিফিং আর মিথ্যাচারের পুরানো ভাঙা রেকর্ড বাজানো ছাড়া বিএনপির আর কোন কাজ নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনের ডাক দেয়, আন্দোলন হয় না। এই মাসে না ওই মাসে। এই ঈদে না ওই ঈদে। এই পরীক্ষা না ওই পরীক্ষার পর। এই বছর না ওই বছর। বিএনপির আন্দোলন হবে কোন বছর সঠিকভাবে তারা নিজেরাও জানে না। এখন বিএনপির আন্দোলনের মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসে না।
মন্ত্রী বলেন, রোজার ঈদের আগে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ে। রোজার ঈদ গেল, কোরবানির ঈদ গেল তারপরও আন্দোলনের দেখা নেই। আন্দোলন এখন লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ে বেগম জিয়ার ভ্যানিটি ব্যাগে।
কুমিল্লার আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, এ সভায় যতো শৃঙ্খলা দেখি। তবে সত্যকথা ও বাস্তবতা হলো দলের নেতারাই শৃঙ্খলা মানে না। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে। নৌকাকে অবমাননা করে। এমন নেতা এই মঞ্চেও আছে।
প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একে এম এনামুল হক শামীম। বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেলমন্ত্রী মজিবুল হক মুজিব এমপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম এমপি, দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত প্রমুখ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন