আশংকাই সত্যি হলো
কলারোয়ার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও পিয়ন প্রহৃত
অবশেষে আশংকা-ই সত্যি হলো। ক্ষুব্ধ ও ফুসলে উঠা এলাকাবাসীর হাতে প্রহৃত হলেন কলারোয়ার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন।
শনিবার সকালে কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষ ও এক পিয়নকে মারপিটের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে- কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের গভির্নিং বডির নতুন সভাপতি হিসাবে কলারোয়ার যুদ্ধকালীন কমান্ডার বর্ষিয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের নামে ডিও লেটার প্রদান করেন। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন সেই ডিও লেটার গোপন করে সাবেক সভাপতি কেঁড়াগাছির ইউপির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইনের নাম দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। বিষয়টি পরে ফাঁস হয়ে পড়ে। এ ঘটনা নিয়ে কেঁড়াগাছি ইউনিয়ন ব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ওই ঘটনায় গত ১১আগস্ট শুক্রবার বিকেলে কলেজ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। কলেজে বীর মুক্তিযোদ্ধার অসম্মান করার প্রতিবাদে, অবৈধ গভর্নিং বডি বাতিল, অধ্যক্ষ ফারুক হোসেনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্যদিয়ে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারনা করেন সচেতন মহল। প্রতিবাদ সমাবেশের পর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ আর কলেজের আসেননি।
ওই ঘটনার জের ধরে ঈদ-উল-আযহার ছুটির পর ৯সেপ্টেম্বর শনিবার কলেজ খোলার প্রথম দিনে অধ্যক্ষ কলেজের আসলে এমন ঘটনা ঘটলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- শনিবার সকাল ৯টার দিকে অধ্যক্ষ মো.ফারুক হোসেনকে কলেজে তার কক্ষে ও বারান্দায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিরা বেদম মারপিট করেন। এসময় তাকে ঠেকাতে আসলে পিয়ন শফিকুল ইসলামও প্রহৃত হন। পরে অধ্যক্ষ দৌড়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে ও অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে কলারোয়া নিয়ে যান।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের জানান- শনিবার সাড়ে ৮ টার দিকে তিনি কলেজে যান। চেয়ারে বসতে না বসতেই ৭/৮ জন লোক আমার রুমে ঢুকে আমাকে মারপিট করে। তারা আমাকে কিল চড় ঘুষি মারতে মারতে বের করে আনে। আমি এ সময় দৌড়ে পালায়। পাশে একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় গ্রহণ করি। এ সময় তারা বলেন- কমান্ডারকে সভাপতি করবি, তবেই কলেজে আসবি। তাকে উদ্ধার করতে কলেজের পিয়ন শফিকুল আসলে তাকেও মারাধার করা হয়। অধ্যক্ষ ফারুক আরো বলেন- হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছি। ইউপি চেয়ারম্যানের ইচ্ছানুযায়ী কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি না করায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি কলারোয়া থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আনে।
এ প্রসঙ্গে কেঁড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল সাংবাদিকদের জানান- ‘তালা-কলারোয়ার সাংসদ এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিনকে কলেজের সভাপতি করতে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তা লুকিয়ে রেখে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইনকে সভাপতি করে এনেছেন। এতেই এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ’।
কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন সাংবাদিকদের জানান- ‘অধ্যক্ষ ফারুক সংসদ সদস্যের দেয়া ডিও লেটার চেপে রেখে ভুট্টোলাল গাইনকে কলেজের সভাপতি করায় জনগন ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তারা তাকে মারপিট করেছে। তবে চেয়ারম্যান হাবিল ঠেকিয়ে দিয়েছেন। অধ্যক্ষ রাজাকারের ছেলে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে এ ঘটনা উল্লেখ করে কলারোয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’
এদিকে, মারপিটের ঘটনায় কলারোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে জানানো হয়- কলেজ অধ্যক্ষ উপজেলার কলাটুপি গ্রামের মোমিন মোড়লের ছেলে ফারুক হোসেন (৪৮) শনিবার সকাল ৯টার দিকে কলেজে পৌছে তার অফিস কক্ষে দাপ্তরিক কাজকর্ম করছিলেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত ইনতাজ আলী সরদারের ছেলে আফজাল হোসেন হাবিলের ইন্ধনে বোয়ালিয়া গ্রামের নজরুল গাজি, নজরুল বিশ্বাস, শরিফুল ইসলাম, আজিজুল সরদার, মামুন গাইন, সাগর হোসেন, পাঁচপোতা গ্রামের শেখ রুহুল কুদ্দুস, হরিনা গোয়ালচাতর গ্রামের আব্দুস সামাদ অবৈধ জনতাবদ্ধে তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে নজরুল ইসলাম তার জামার কলার ধরে চেয়ার হতে উঠিয়ে এলোপাতাড়ীভাবে চড়, কিল ও ঘুষ মারতে থাকে এবং অন্যরা অফিস কক্ষে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে তাকে টেনে হেছঁড়ে মারতে মারতে বাইরে কলেজ গেটে নিয়ে ফেলে দেয় এবং তার পকেটে থাকা ১৭,৩০০ টাকা ও হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে তাকে লোহার রড দিয়ে মারপিট শুরু করলে কলেজের দপ্তরী বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত আছির উদ্দীনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৩) ঠেকাতে ছুটে আসলে তাকেও মারপিট করে এবং তার কাছে থাকা ৯,৩০০ টাকা ও হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। এ সুযোগে তিনি প্রাণভয়ে কলেজ থেকে দৌড়ে পাশ্ববর্তী জনৈক আব্দুল গফুরের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরে ওই সব সন্ত্রাসীরা জানতে পেরে চেয়ারম্যানের হুকুমে ওই বাড়ির মালিককে জিম্মি করে তাকে ঘর হতে বাহির করে আনে। এ সময় পুলিশ খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থল গেলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে তিনি কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হইয়া প্রাথমিক চিকিৎসা নেন বলে জানান।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান- এ ঘটনায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগটি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলারোয়ার বোয়ালিয়া কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন