৩০হাত উপরের খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত কলারোয়ার গাছিরা
সারা দেশের গ্রামাঞ্চলের জমির আইল-বড় রাস্তার ধারসহ বাগান মাঠের বিভিন্ন স্থানে সারিবদ্ধ কিংবা এলোপাতাড়ি ছোট বড় কম বেশি রসালো খেজুর গাছ রয়েছে। কাঠ কেটে গাছিদের বিভিন্ন্য প্রকিয়া-পরিচর্যায় পাওয়া যায় সুস্বাদু পানিও রস বা খেজুরের রস। কোথাও দ্রুত আমন ধান কেটে নেওয়ায় খেঁজুর গাছের পরিচর্যা শেষের দিকে, কোথাও দেরিতে কাটাই রস সংগ্রহে-খেঁজুর গাছের মাথা পরিচর্যার নিমিত্তে কাটা শুরু হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে আছে বর্তমান আমন মৌসুমে।
ব্যস্ততার ভিতরে সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের খেঁজুর গাছিরা উষ্ণ শীতের পরশে বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রস সংগ্রহের জন্য। ব্যস্ত সময় পার করছে পাশাপাশি আমন ধান কাটা থেকে গোলা ভর্তিতে কৃষান কৃষানী।
চলতি মৌসুমে সৃষ্টির এ অন্যন্য রসের স্বাদকে সবার মাঝে বিলাতে উপজেলার দেয়াড়া, যুগীখালী, কুশোডাঙ্গা, কয়লা, লাঙ্গলঝাড়া, সোনাবাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী প্রতিটা ইউনিয়ন এলাকার খেঁজুর গাছিরা বেশ ব্যস্ত। তবে খেজুরের রস’ত গোড়াতে হয় না,অতি কষ্টে নিম্ন ২০-৩০, ৪০ হাত খেঁজুর গাছের উপরে উঠে-খেজুর রস সংগ্রহের জন্য কয়েকটি দফা অবলম্বন করতে হয় বলে এমনটাই জানান একাধিক গাছিরা। কিন্তূ রস গুড়ের যথাযথ বাজার মূল্য পাওয়া যায়না বলেও আক্ষেপ করেন খেঁজুর রস, গুড় আহরণে ব্যস্ত দেয়াড়ার জৈনেক রইতাল্লালীসহ (খেজুরের গাছি) অনেকেই।
প্রথমতঃখেজুর গাছের উপরিভাগে গাছের পাতা কেটে ঝোড়া হয়/গাছ উঠানো হয়। কিছুদিন পর-দ্বিতীয় দফায় গাছের উপরিভাগের একপাশে চাচ দেওয়া হয়। তৃতীয় দফায় কিছুদিন পর সেখানে সামান্য চোখের মতো কেটে খিলিন দেয়া হয়।এবং চাচ ও খিলিন দেয়ার পরেই মাটির ভাড়ে রস আহরণ করা হয়। পরবর্তী-২/৩ দিন পরপর খিলিনের উপরের ওই স্থানে সামান্য-সামান্য কাটার অর্থাৎ, চোখ উঠানোর ফলে সেখান থেকে খেজুর রস গড়িয়ে ভাড়ে পড়ে।
এভাবেই খেজুর রস সংগ্রহ করা হয় এবং আরাম প্রিয় ভোক্তারা রস গুড় সল্প অর্থের বিনিময়ে ভোগ করে বলে জানান খেঁজুর গাছিরা। খেজুরের রস পানে যেমন ভালো লাগে তেমনি সেই রস থেকে গুড় ও পাটালি তৈরিকৃত মিষ্টান্ন মজাদার ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহে জন্য প্রতিযোগিতাও মেতে উঠে তারা। তবে শীতের তীব্রতা এখনও তেমন একটা দেখা মেলেনি। তাছাড়া খেজুর গাছও অনেকটা বিলুপ্তির পথে। কয়েক বছর আগেও বাড়ির আঙ্গিনা-ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা রাস্তার দুই ধারে খেজুর গাছের আধিক্য থাকলেও এখন আর তেমনটা দেখা যায় না।
অনেকের ধারণা- বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও ইটভাটাসহ অন্যান্য জ্বালানিতে উজাড় হয়ে অনেক খেজুর গাছ বিলুপ্ত। অবশ্য ৩০ হাতের উপরে বড় বড় গাছগুলো বর্তমান খুব কম চোখে পড়ে। বড় গাছে উঠতেও চাইনা অনেকেই পড়ে যাওয়ার ভয়ে। পড়ে থাকে বড় বড় উচু গাছগুলো।
অবশিষ্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করছে বলে জানান গাছিরা। তারা বলেন- যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু রস দেবে খেজুর গাছ। দীর্ঘ বছর ধরে বেঁচে থেকে অত্যন্ত রস দেয়-এটাই খেঁজুর গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি, পায়েশ ও অন্যান্য মিষ্টি সুস্বাদু খাদ্য খাওয়ার পালা।
বহুমুখী গুন তুলে ধরে তারা জানান- খেজুরের পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী করা হয়, এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যবহার করা হয়। আবার খেজুর গাছের খাঁদি বা ডাটা দিয়েও রস ও ধান সিদ্ধের কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ছাড়াও আরো আরেকটা উপাদান তৈরি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে এমনকি মফস্বল-শহরাঞ্চলে অবসর সময়ে মহিলাদের।
খেজুর পাতা ও কাশফুল জাতিয় খড়ের বুন্নিতে, ফুলঝুড়ি, ডিমের খাঁচা এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় জিনিসপত্র তৈরি করে-রপ্তানি হয় শহর থেকে বিদেশ পর্যন্ত। তৈরিকৃত উপকরনগুলো তত্ত্বাবধানে ও সরবরাহের দায়িত্ব দেখা যায় খ্রিষ্টান ধর্মের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলার খোরদো মিশনী থোমাস রায় বলেন- কাঁশফুল বা খড়গুলো এবং খেজুরের শুকনো পাতা গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের কাছে একটা মুল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জিনিসপত্র তৈরির নমুনা নকশা দেওয়া হয়।পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে সঠিক মুল্য দিয়ে ক্রয় করা হয়। সেগুলো শহরাঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে দেওয়া হয়। এভাবে হাত বদলে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে বলে জানান থোমাস রায়।
এছাড়াও সেগুলো সাধারণ বসত বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক টেকসই, মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী তৈরিকৃত জিনিসগুলো রঙের আলপোনা দিয়ে আকর্ষণীয় করা হয় বলে জানান তিনি।
তাছাড়া, খেজুর গাছ দিয়ে বসতি ঘরের মজবুত আড়াও তৈরি করা হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে শুধু রসের জন্য নয়, খেজুর গাছের গুনাগুন অপরিসীম।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন