১ জুলাই থেকে এমপিও খাতে বরাদ্দ হচ্ছে
অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে এমপিও খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এমপিও ব্যবস্থাটি পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক এলাকায়ই কিছু বরাদ্দ দেয়া হবে।
বুধবার (২৭ জুন) জাতীয় সংসদে দেয়া প্রস্তাবিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘শিক্ষাখাতের একটি বিষয়ে আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে চাই। প্রায় ৯ বছর এমপিওভুক্তি বন্ধ রাখার পরে আগামী ১লা জুলাই থেকে এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এমপিও ব্যবস্থাটি পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক এলাকায়ই কিছু বরাদ্দ দেয়া হবে। জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য অতিরিক্ত কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”
এদিকে এমপিওভুক্তির জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত ননএমপিও শিক্ষকরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। এমপিও ছাড়া ঘরে ফিরে যাবেন না মর্মে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
বরাদ্দ নেই, এমপিওভুক্তির উদ্যোগে আস্থা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা
নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও বাজেটে এ খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তাই এসব উদ্যোগে আস্থা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। এ কারণে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে ঈদের আগেই দুটি পৃথক কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় নয় সদস্যের ‘প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটি’। এই কমিটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
এছাড়া অনলাইনে আবেদন গ্রহণের জন্য ব্যানবেইস মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের কারিগরি কমিটি। এই কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করবে। ‘প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটির’ কাছে এই তালিকা উপস্থাপন করবে এই কমিটি। চলতি সপ্তাহে কমিটি একটি যৌথসভাও করেছে। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে নীতিমালা প্রণয়ন ও কমিটি গঠনের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হলো।
তবে চলতি অধিবেশনে সংসদে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ফলে সরকারের এ উদ্যোগে কোন আস্থা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষক নেতারা বলেন, আগামী বাজেটে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে কোন আশা দেখছেন না তারা। শিক্ষামন্ত্রীই তো বলেছেন, অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে। যদি অর্থ না পাওয়া যায় তবে এমপিওভুক্ত হবে কীভাবে- প্রশ্ন রাখেন তারা। তারা আরো বলেন, এ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ২৭ বার আশ্বাস দিয়েছেন। এখনও আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে আমরা তার কথায় আর আস্থা রাখতে পারছি না। আমরা তাকিয়ে আছি প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন শুরু করলে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসানের আশ্বাসে ঘরে ফিরে যান শিক্ষকরা। তবে নতুন অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্তি খাতে সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থ বরাদ্দ না করায় গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে তারা রাষ্ট্রপতি ও সকল সংসদ সদস্যদের কাছে স্পিকারের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। অনশনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৫৫ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে দীর্ঘ ৭ বছরে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নানা কষ্টে দিন যাচ্ছে। এই সময়ে অন্তত ২৫ বার আন্দোলন হয়েছে। ২০১১ সালে ১০০০ স্কুল-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তি করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। ২০১০ সালে যখন এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হয় তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এ কাজ চলমান থাকবে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকারের এ প্রক্রিয়া থেমে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্তি না করার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ দেয়নি। তাই এমপিওভুক্তি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে এমপিওবঞ্চিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এখন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি।
এমপিওর বিষয়ে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সর্বশেষ আবেদন চাওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। আবেদন জমা পড়েছিল ৭ হাজার ৫৩৩টি। বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অথচ আমরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই আগেরবারের কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। এখন আমরা সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন চাই। দাবি আদায় না করে আমরা বাড়ি ফিরে যাবো না।’
সৌজন্যে: ইত্তেফাক
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন