স্কুলছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান হত্যাকাণ্ড নিয়ে পিবিআই প্রধানের হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস
মৌলভীবাজারের বড়লেখার সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে ও সিলেটের ‘মনির আহাম্মদ একাডেমির’ ৯ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান হত্যা নিয়ে হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন পিবিআই প্রধান পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে তার লেখা সেই স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার লেখেন, সিলেটের “মনির আহাম্মদ একাডেমীর” ৯ম শ্রেনীর ছাত্র আব্দুল্লা হাসান। বাড়ি বড়লেখার মোহাম্মদপুর গ্রামে।
বাবা সৌদি প্রবাসী। বয়সের তুলনায় একটু গম্ভীর। ধনাঢ্য বাবার সন্তান হলেও হিসেব করে খরচ করে।
স্কুলের ছুটিতে এসে গ্রামের বন্ধুদের সাথে খেলা-ধুলায় সময় কাটায়।
সেদিন সন্ধ্যায়ও সে মা’র কাছ থেকে কর্ক কেনার টাকা নিয়ে ৩০০ গজ দূরের বাজারে যায় ব্যাডমিন্টন খেলতে। হাসান আর ঘরে ফেরে নাই। বন্ধুরা বলে- মাঠে কিছুক্ষণ থেকে ঘুম আসার কথা বলে সে বাসায় চলে যায়। এরপর আর কেউ-ই হাসানকে দেখে নাই।
হাসান খেলতে যায় ১৮ই সেপ্টেম্বর। চারদিন পর গ্রামেরই আরব আলীর টিলার ঢালে মাথা ও ডান হাত বিচ্ছিন্ন তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। জনপ্রিয় এ মেধাবী ছেলেটির মুখ গ্রামবাসীকে স্থম্বিত করে দেয়। হাসানের বাবাও সৌদিআরব থেকে ফিরে আসেন। গ্রামবাসী ও হাসানের বন্ধুরা বিন্দুমাত্র ধারণাও দিতে পারে না হাসান টিলায় কেন গেলো ? প্রযুক্তিতে ভর করা তদন্ত আর টিলার ঢাল অবধি পৌঁছায় না। সন্দেহের খোলা মাঠে পিবিআই ঘুরপাক খায় এদিক থেকে ওদিকে।
৬ মাস চলে যায়। শোকের মাতম স্বাভাবিক হয় না । স্বাক্ষ্য প্রমাণ ক্রমান্বয়ে নাগালের বাইরে চলে যায়। পিবিআই হাসানদের ড্রাইভারকে ডাকে। সে ঢাকা হতে তড়িঘড়ি করে চলে আসে-যদি খুনের রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করতে পারে। ড্রাইভার এরশাদ ৩ মাস আগে চাকুরী ছেড়েছে। যাবার আগপর্যন্ত সে তার সাধ্যমত হাসানকে খুজেঁছে। আগেও সে চাকুরী ছাড়ার কথা বলেছে এবং হাসান নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিন আগে সে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে অসুস্থ্য মায়ের কাছে পাঠিয়েছে সেবা করার জন্য। তার মা মাতুয়াইলে থাকে। এরশাদের বাড়ি ভোলার শশীভূষনের চরমাইয়া গ্রামে। চাকুরীর সূত্রেই বিয়ে করেছিলো হাসানদের বাড়ির কাছে। পরিবার নিয়ে থাকতো হাসানদের ত্রিতল ভবনের ২টি কক্ষে, বিনা ভাড়ায়। তদন্ত টিম হতাশ হয়। সেও কোন নতুন তথ্য দিতে পারে না। সে আবার মা ও স্ত্রী’র কাছে ফিরে যায়।
হঠাৎ একদিন পিবিআই-এর তদন্ত কর্মকর্তার খটকা লাগলো, ড্রাইভার গত ৩ মাসের মধ্যে তার দৈনন্দিন অভ্যাস ও বেশভূষা কেন ত্যাগ করলো ? খোজঁ নিয়ে জানা গেল ৩ মাস আগেও সে এত ধর্মকর্ম করতো না। অবশেষে মোঃ এরশাদ আদালতে স্বীকার করে- হাসানকে সেই হত্যা করেছে। হত্যার ৪মাস আগে সে হাসানকে নিয়ে সিলেটের স্কুলে যাচ্ছিলো। চন্দনপুর বাজারে গাড়ি ঘুরানোর সময় হাসানের পায়ে একটু লেগে যায়, হাসান ব্যথা পায়। সে তার ড্রাইভার চাচাকে স্থানীয় ভাষায় নোয়াখালী ও ব্যাংগলি বলে গালি দেয়। ছোট ছেলের করা এ অপমান এরশাদ সহজভাবে নেয়নি। সে রেগে যায় এবং বলে- ইচ্ছে করেই গাড়ির চাকা সে হাসানের পায়ে লাগিয়েছে। স্বল্পভাষী ছেলেটি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি। আহত অবস্থায়ই সে এরশাদকে ২/৩টি চড় মারে। চড় মারার বিষয়টি হাসান কাউকে বলে নি- কিন্তু এরশাদও হজম করতে পারে নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরশাদ চাকুরী ছাড়ার কথা বলে। সে অনুযায়ী সে তার পরিবারকে মায়ের কাছে পাঠায়। ৫ বছর আগের কেনা খাসিয়া-দা’টি সে গোপনে ধার দিতে থাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় দা-টি কোমড়ে গুজে তার উপর শীতের জ্যাকেট পড়ে স্বাভাবিক কাজ করেন। সেদিন সন্ধ্যায় হাসানকে বাড়ি ফিরতে দেখে টিলায় নিয়ে যায় গল্প করতে করতে।
টিলায় উঠেই এরশাদ চন্দনপুরের ঘটনাটা উঠায়। হাসান বলে “চাচা এগুলো মনে রাখতে হয় না-কি! ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছি, আপনি কথাটা আর ওঠাননি বলে মাফ চাওয়াও হয় নি। ” হাসান এর কথা শেষ হয় না- এর আগেই এরশাদ তার ধারালো খাসিয়া ‘দা’ দিয়ে হাসানের হাতে তারপর মাথায় কোপ মারে। এরপর অন্ধকারে আন্দাজে ভর করে আরো ৪/৫টি কোপ মারে। হাসান পাহাড়ের ঢাল দিয়ে জাপানী লতার সাথে মিলে প্রায় ৩০ ফুট নিচে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ শো শো শব্দ হয় তারপর সব নিস্তেজ। হাসান মোবাইল ব্যবহার করত না কিন্তু এরশাদ চাচাকে একটি মোবাইল উপহার দিয়েছিল। এরশাদ সে মোবাইলের আলোতে তার জ্যাকেট, প্যান্ট ও জুতায় রক্ত না লাগার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে হাসানদের বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
হাসানের জন্য কষ্ট হয়। সে মা’কে বলে মাঠে খেলতে গিয়েছিল। খেলা-ধুলার পোষাক পড়েই সে মৃত্যুর আলিঙ্গন করলো- ছোট্ট একটি ভুলের খেসারত হিসাবে। প্রতিদিন আমরা কত ছোট ছোট ভুল করি- ঘাতক কি সর্বদা আমাদের আশেপাশেই ঘোরে!
সূত্রঃ বড়লেখা থানার মামলা নং- ১৬, তাং-২৮/০১/২০১৮ খ্রিঃ
ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন