জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার অনুরোধ
সিইসির সঙ্গে বৈঠক : তিন বাম দলের ১৮ দফা সুপারিশ পেশ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে যৌথভাবে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে দেশের বাম ধারার তিনটি রাজনৈতিক দল।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে এসব সুপারিশ জমা দেয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দেড়ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত নেতারা যেন জোটবদ্ধ হয়ে অন্য দলের প্রতীকে বা অন্য দলে যোগ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন-এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তিনটি বামদল।
বৈঠক শেষে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হাইকোর্টের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু দলটির নেতারা যেন অন্য দলে যোগ দিয়ে সে দলের নমিনেশন না নিতে পারে। এ কথাটি আমরা জোর দিয়ে বলেছি। আমরা ইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হতে হলে কোন ব্যক্তিকে কমপক্ষে পাঁচ বছর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। এ ব্যবস্থা যেন ইসি করে।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা তিন দল আলাদা আলাদা মতামত কমিশনকে দিয়েছি। কিন্তু গণমাধ্যমের সূত্রে জেনেছি-ইসি জামানত বাড়ানোসহ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে আমরা জরুরিভিত্তিতে এ বিষয়ে মতামত জানাতে এলাম। যেখানে জামানত দিয়ে প্রার্থী হওয়া কষ্টসাধ্য, সেখানে জামাতের টাকা বাড়ানো হলে তা মানা হবে না। সেক্ষেত্রে জামানত কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুপারিশের পর চলতি মাসে ইসির ‘আইন-বিধি সংস্কার সংক্রান্ত’ কমিটির সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কারের প্রাথমিক খসড়ায় প্রার্থীর জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গণমাধ্যমে এই প্রস্তাবের খবর প্রকাশের পর সিইসির সঙ্গে দেখা করে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে সিপিবি-বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি।
দলগুলোর মতে, সংলাপে আলাদা সুপারিশ দিলেও এখন জরুরি ভিত্তিতে ইসির এখতিয়ারভুক্ত এই ১৮টি সুপারিশ জমা দেয়া হয়। কমিশনের নিজস্ব উদ্যোগে এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব; এর জন্য সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন প্রয়োজন হবে না।
সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, সিইসি বলেছেন, দলগুলোর আগের প্রস্তাবগুলো একীভূত করে প্রকাশনা করা হচ্ছে। নিজেদের এখতিয়ারে থাকা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে অন্য সুপারিশও সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিন দলের পক্ষ থেকে ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
তিন বাম দলের ১৮ দফা সুপারিশের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা করা ছাড়াও বিনামূলে ভোটার তালিকার সিডি দেয়া, সকল প্রার্থীর টিআইএন বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে আয়করযোগ্যদের টিআইএন বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের সুবিধার বিষয় রয়েছে।
এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর বেসমারিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালনা করা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হলে কমপক্ষে ৫ বছর দলের সক্রিয় সদস্য থাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করা, প্রতি এলাকায় কমিশনের মাধ্যমে প্রার্থীদের পরিচিতি সভার আয়োজন, প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং করা, নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের হিসাব ভোটের ৭ দিনের মধ্যে দেওয়া, অন্যথায় নির্বাচিতদের শপথ বন্ধ করা, নির্বাচনে যেকোনো ধরনের পেশি শক্তির ব্যবহার বন্ধ করা, নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতা কঠোরভাবে বন্ধ করার কথাও বলছে এই তিন বাম ধারার রাজনৈতিক দল। তাদের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, প্রচার-প্রচারণার বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থিতা বাতিল করা, সীমানা নির্ধারণ স্বচ্ছ করা ও ভোটারের সমসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রার্থীদের দেয়া, ইভিএম চালু না করা এবং আরপিওর (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারার পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বিধান বাতিল করা।
বৈঠকে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহিদুল হক মিলু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান উপস্থিত ছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন