সাতক্ষীরা-০১ আসনের জনগণ এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে পূণরায় পেতে চায়
সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির অভয়ারণ্য বলে পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে এই জেলাতেই সব থেকে বেশি জ্বালাও-পোড়াও, তান্ডব হয়েছিলো। একইসঙ্গে ওই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সংগ্রামও ছিলো সেখানে। এখনো চলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, এখনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্মূল হয়নি। গণআন্দোলনের মুখে তারা কোণঠাসা হয়েছে। যে কোন সময় হানা দিতে পারে। এজন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সতর্ক আছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টায় আছি। তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটা চালু হওয়ায় কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটলেও বেতনা-সালতা নদী পাড়ের মানুষ এখনো কষ্টে আছে। এই কষ্ট লাঘবে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দেন-দরবার চলছে। তিনি আরো বলেন, লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অনেক ভূমিহীনকে পূনর্বাসন করা হলেও সবাইকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই লড়াইটা অব্যাহত রেখেছি। শোষণ মুক্তির একমাত্র পথ শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
শুধু জঙ্গি মৌলবাদিদের তান্ডবের কারণে নয়, ছোট্ট জেলা সাতক্ষীরা বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। ভূমিহীন নেত্রী জায়েদার মৃত্যু ও ভূমিহীনদের তুমুল আন্দোলনের খবর ছিলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অন্যতম শিরোনাম। কপোতাক্ষ পাড়ের জলাবদ্ধতা ও সাধারণ মানুষের দূঃখ-দূর্দশার খবর শিরোনাম হয়েছে অনেকবার। আর এখন খবর তৈরি করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেল-জুলুম হুলিয়া ও নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে জনগণের সঙ্গে থেকেছেন। সর্বশেষ জনগণের ভোটে আইন প্রণেতা নির্বাচিত হয়েছে। এখন জনগণের কথা সংসদে তুলে ধরছেন। এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সংসদ সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিয়েতনাম, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকায় যে কোন কর্মসূচি পালনে নিজের সাথে পুলিশ রাখেন না মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। জনগণের সাথে গভীর সম্পৃক্তা থেকে তার বিশ্বাস জনগণই তাকে রক্ষা করবে। তিনি বেশ দৃঢ়তার সাথে বললেন, আমি বিশ্বাস করি জনগণ তখনই সাহসী হবে, যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পুলিশ নয়, জনগণের উপর আস্থা রাখবে।
শৈশব থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নেতা ছাত্র রাজনীতি শেষে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পার্টির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীর পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লাস ফাইভে থাকা অবস্থায় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের মিছিল করেছেন। বড়দের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’ শ্লোগান দিয়েছেন। একাত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বয়স না হলেও আশ্রয় নিতে হয়েছিলো ভারতে। ইটিন্ডের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ট্রেনিং প্রত্যক্ষ করেছেন দূর থেকে। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দেখার প্রবল ইচ্ছায় রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পেয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীন দেশে ফিরে এসে শুরু করেছেন ছাত্র রাজনীতি। বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা পাড়ার বড় ভাইদের সঙ্গে শ্লোগান দিতে দিতে তিনি নিজেই এক সময়ে ছাত্র নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
একান্তে আলাপকালে মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানালেন, এভাবেই কখন যে গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। দেয়াল লেখা, মিছিল করা, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন, প্রগতি সংঘ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিল্পোকলা একাডেমি এসবরে মধ্যে সময় কেটেছে।
তার ভাষ্যমতে, পিছনে ফিরে তাকানোর সময় মেলেনি মোস্তফা লুৎফুল্লাহর। এলো ৯০ এর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন। সেই সময় জেল, জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরচার এরশাদ শাহীর পতন ঘটে। এরপর যেখান নিপীড়ন সেখানেই তাকে পাশে পেয়েছে এলাকাবাসী। সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, ভূমিহীন কিংবা স্থানীয় সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু গডফাদারদের বিরুদ্ধে, কপোতাক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসনে, অপরিকল্পিত লোনাপানির চিংড়ি ঘের বিরোধী আন্দোলন, সব জায়গায় সংগ্রাম করেছেন সামনের কাতারে থেকে। দেশের কল্যাণে সময়ের প্রয়োজনে মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সব সময় মিছিলের সামনের মানুষ হিসেবেই পরিচিত।
কথা প্রসঙ্গে লুৎফুল্লাহ জানালেন, কপোতাক্ষ নদী আমার নির্বাচনী এলাকা তালার মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে। নদী ভরাটের কারণে তালার ২৬টি গ্রাম জলাবদ্ধাতার শিকার হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনের আন্দোলন করেছি এলাকার সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে। লড়াইয়ে জয়ী হয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। এখন মরা কপোতাক্ষে জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। বছরের প্রায় ৬ মাস জলাবদ্ধ মানুষগুলো দম ছেড়ে বেঁচেছে। এতেই আমার শান্তি। আমার ব্যক্তিগত বিশেষ কোন চাওয়া পাওয়া নেই।
আলাপকালে তিনি শোনালেন অন্যরকম গল্প। বললেন, এখানে জামাত-শিবির একসময় জেঁকে বসতে চেয়েছিলো। আমরা ওইসব সাম্প্রদায়িক অপশক্তিতে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করেছি। এই আন্দোলনে কেবল এলাকাবাসী নয়, আমার পরিবারের সকল সদস্য স্বত:স্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দলের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করেই জামাত শিবিরকে প্রতিহত করার লড়াইকে এগিয়ে নিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সেই পথ খুব সহজ ছিলো না। তবে আমরা থেমে যাইনি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদের কাঙ্খিত জনগণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হবে।
গণমানুষের লড়াই-সংগ্রামে নিজের প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে এমপি লুৎফুল্লাহ বলেন, একবার অস্ত্রের মুখে আমাকে অপহরণ করেছিলো সন্ত্রাসীরা। এলাকার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সশস্ত্র অপহরণকারীদের কাছ থেকে আমাকে উদ্ধার করেছিলো।
চার দলীয় জোটের শাসনামলে এক বছরের অধিক সময় কারা ভোগ করতে হয়েছে তাকে। তিনি আরো জানালেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম জামাত-শিবিরের তান্ডবে এলাকা ছাড়া মানুষগুলোকে নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে এনেছি। সাম্প্রদায়িকতাকে সামাজিকভাবে প্রতিহত করেছি। আমি বিশ্বাস করি- কেবলমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একার পক্ষে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিতে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন, সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন নাগরিক। মোট কথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। আর সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে চলতে গিয়ে নির্বাচনের পর পর একাধিকবার গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। কিন্তু ভয় পেয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি।
সংসদ সদস্য হিসেবে মুস্তফা লুৎফুল্লাহর বিশেষ সুনাম এলাকায় কিছুক্ষণ ঘুরলেই জানা যায়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার রক্ষায় এলাকার প্রতিটি ক্ষেত্রে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবোকাঠামো, ব্রীজ-কালভার্টের প্রভৃতির উন্নয়ন চোখে পড়বে। তিনি বলেন, কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের স্বার্থ পূরণের পথে আজ আমরা অনেকটা এগিয়েছি। তবে এখনো দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, আজও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শতভাগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রম শেষ হয়নি। তিনি আরো বলেন, শ্রমিক শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই দু:শাসন দুর্নীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা সম্ভব। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের ফলে জনগণের মধ্যে লড়াইয়ের সাহস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ এখন উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থার আরো উন্নয়নের পাশাপাশি শালতা-বেতনা নদী খনন করতে হবে, কৃষি জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসাথে এলাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীটি আরো জোরদার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং শোষিত খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম সফল করতে মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই- মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদের লোক।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন